দেশে মুঠোফোনভিত্তিক ইন্টারনেটের দাম কত হওয়া উচিত, সেটি নির্ধারণে ‘কস্ট মডেলিং’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এ জন্য জাতিসংঘের অধীন সংস্থা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) একজন কর্মকর্তাকে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। এই পরামর্শক খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণে বিটিআরসিকে পরামর্শ দেবেন।
একটি সেবা দিতে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কত খরচ হয়, সেটি বের করার পদ্ধতিকে বলা হয় কস্ট মডেলিং। সেবার মূল্য নির্ধারণে বিভিন্ন গাণিতিক সমীকরণ কস্ট মডেলিংয়ে ব্যবহার করা হয়। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে না হলেও মুঠোফোনে কল করার মূল্য নির্ধারণে আইটিইউর পরামর্শক দিয়ে ২০০৮ সালে একটি কস্ট মডেলিং করেছিল বিটিআরসি। সেই মডেল অনুসারে প্রতি মিনিট ভয়েস কলের সর্বোচ্চ মূল্য ২ টাকা আর সর্বনিম্ন মূল্য ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠকে কস্ট মডেলিংয়ের জন্য পরামর্শক নিয়োগে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কমিটিতে বিটিআরসি ছাড়াও টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, কস্ট মডেলিংয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেটের দাম কত হওয়া উচিত, সে বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। এরপর সে অনুযায়ী বিটিআরসি ব্যবস্থা নেবে।
ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণে ২০১৬ সালেও একবার কস্ট মডেলিং করার উদ্যোগ নিয়েছিল বিটিআরসি। ২০০৮ সালে ভয়েস কলের ক্ষেত্রে কস্ট মডেলিং বিনা মূল্যে করে দিয়েছিল আইটিইউ। কারণ, তখন বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ ছিল। কিন্তু নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় আইটিইউয়ের নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশকে এখন কস্ট মডেলিংয়ের জন্য অর্থ খরচ করতে হবে। আইটিইউয়ের পরামর্শক দিয়ে কাজটি করাতে বিটিআরসির ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিকে ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণে কস্ট মডেলিংয়ের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে মুঠোফোন অপারেটররা। রবি আজিয়াটার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মুখপাত্র ইকরাম কবীর প্রথম আলোকে বলেন, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে মূল্য নির্ধারণে আইটিইউয়ের পরামর্শক যেন এ খাতের সবার মতামত নেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
বিটিআরসির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭২ লাখ। এর মধ্যে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৩১ লাখ, যা মোট ব্যবহারকারীর ৯৪ শতাংশ। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সরকারি এ হিসাবের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক, ইন্টারনেট লাইভ স্ট্যাটসের হিসাবে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। এসব সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটির কিছু বেশি।
বাংলাদেশে মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ মূল্য নিয়ে। তবে মুঠোফোন অপারেটরদের দাবি, বাংলাদেশে এই ইন্টারনেটের মূল্য সারা বিশ্বের মধ্যে এখন দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। অপারেটরদের মতে, উচ্চ কর, মধ্যবর্তী সেবার উচ্চ মূল্য ও ব্যয়বহুল তরঙ্গের মতো বিষয়গুলো ইন্টারনেটের মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সরকার ব্যান্ডউইথের মূল্য কমালেও গ্রাহকের হাতে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত অপারেটরদের খরচ কমেছে মাত্র ১ থেকে ৩ শতাংশ। তাই চাইলেও বর্তমানের চেয়ে কম দামে গ্রাহকদের ইন্টারনেট দেওয়া সম্ভব নয়।
বর্তমানে বিভিন্ন মুঠোফোন অপারেটরের ৩০ দিন মেয়াদের এক গিগাবাইট ইন্টারনেট প্যাকেজের গড় দাম ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। আর ৭ দিন মেয়াদের এক গিগাবাইট প্যাকেজের দাম ৮৯ থেকে ৯৪ টাকা। এই দামের সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর, ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১ শতাংশ সারচার্জ গ্রাহককে দিতে হয়। এ হিসেবে প্রতি ১০০ টাকার ইন্টারনেট সেবা কিনতে গ্রাহককে প্রায় ২২ টাকা কর দিতে হয়।