সাম্প্রতিক সময়ে পরমাণু পরীক্ষা এবং একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এতে উদ্বিগ্ন দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। দক্ষিণের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও বিষয়টি নিয়ে বড় ধরনের অস্বস্তিতে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, উত্তর কোরিয়াকে সামলাতে চীন যদি সহযোগিতা না-ও করে, দেশটির বিরুদ্ধে একাই ব্যবস্থা নেবে ওয়াশিংটন। এর পরপরই কোরীয় উপদ্বীপ অভিমুখে অগ্রসর হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জঙ্গিবিমানবাহী মার্কিন জাহাজ কার্ল ভিনসনকে।
টানটান এমন উত্তেজনার মধ্যে গতকাল উত্তর কোরিয়া তাদের রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট কিম ইল সুংয়ের ১০৫তম জন্মদিন উদ্যাপন করেছে। এ উপলক্ষে পিয়ংইয়ংয়ে ব্যাপক সামরিক শক্তি প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়।
গতকালের প্রদর্শনীতে আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রও (আইসিবিএম) ছিল বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিশেষজ্ঞরা। এই ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে পরমাণু হামলা চালানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করা হয় মহড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষক মেলিসা হ্যানহ্যাম বলেছেন, দুটি খোলসের মধ্যে আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। এর থেকে ধারণা করা যায়, উত্তর কোরিয়া তাঁর নিজস্ব গতিতে এগোচ্ছে।
পিয়ংইয়ংয়ে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মহড়ায় হাজির ছিলেন দেশটির নেতা কিম জং উন।
উত্তর কোরিয়ার সামরিক কর্মকর্তা চো রেয়ং হে বলেন, ‘যেকোনো পরমাণু হামলার বিপরীতে আমরা আমাদের নিজস্ব কায়দায় পাল্টা পরমাণু হামলার জন্য প্রস্তুত।’ চো রেয়ংকে উত্তর কোরিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শক্তিধর ব্যক্তি মনে করা হয়।
পিয়ংইয়ংয়ের মিত্র চীন আশঙ্কা করছে, উত্তর কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যেকোনো সময় সংঘাত বেধে যেতে পারে। এই অবস্থায় সব পক্ষকে সতর্ক করে দিয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, ‘যুদ্ধ বাধলে কেউ জিতবে না। আমি মনে করি, এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সবার সতর্ক হওয়া উচিত। কথায় বা আচরণে একে অন্যকে হুমকি দেওয়া এবং চটানো থেকে বিরত থাকতে হবে, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।’
এ ছাড়া রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে ফোনালাপে ওয়াং ই রাশিয়াকে অনুরোধ করেছেন পরিস্থিতি শান্ত করতে ভূমিকা রাখার জন্য।
পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম—এমন যুদ্ধাস্ত্র বহনকারী রকেট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে উত্তর কোরিয়ার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য তা ঠেকাতে বদ্ধপরিকর।
নিষেধাজ্ঞা পাত্তা না দিয়ে উত্তর কোরিয়া ইতিমধ্যে পাঁচটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে। আরেকটি পরীক্ষা চালানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউস বলেছে, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত বৃহস্পতিবার ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ককে বলেন, ‘আমরা একটি রণতরি বহর পাঠাচ্ছি। এটি খুব শক্তিশালী। তিনি (কিম) খারাপ কাজ করছেন। বড় ধরনের ভুল করছেন।’
তবে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা পাল্টা ব্যবস্থা নেব। হামলাকারীদের টিকতে দেওয়া হবে না। তাদের নির্দয় আচরণ উত্তর কোরিয়া মেনে নেবে না।’