হাফিজুল ইসলাম লস্কর :: অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি সিলেট, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি সিলেটকে নিয়ে সিলেট বাসীর স্বপ্নের অন্ত নেই। আল্লাহ তায়লার অশেষ মহিমায় মহিমান্বিত এই সিলেটে কি নেই। তেল, গ্যাস, চা, বৈদেশিক মুদ্রা, পর্যটন শিল্প, নান্দনিক শপিংমল, বড় বড় অট্রালিকা সর্বপরি সবুজের সমারোহ সবই আছে এই সিলেটে। নেই শুধু সুষ্ট পরিকল্পনা এবং নিজেদের আধিকার আদায়ে গনসচেতনতা। সিলেট বাসীর আন্দোলনের ফসল সিলেট বিভাগ। নব্বই এর দশেকে সিলেট বিভাগ আন্দোলনে সিলেট গণদাবি পরিষদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে সিলেটবাসী তাদের নায্য দাবী আদায় করে নিয়েছিল। তার পরে বাংলাদেশে আরও অনেক বিভাগ হয়েছে, কিন্তু তাদের এত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়নি। সিলেটবাসীরা ত্যাগের ক্ষেত্রে সবার আগে-কিন্তু বিনিমনে পায়নি কিছুই। সিলেটিরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। গ্যাস, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা সর্ব ক্ষেত্রে সিলেট পিছিয়ে। সিলেটের গ্যাস নিয়ে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে অথচ সিলেটবাসী সেই আদিম পদ্বতিতে রান্নার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ২৫ বৎসর আগে কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্র থেকে যখন বড় বড় পাইপ দিয়ে সিলেটের গ্যাস অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তখন সিলেটিদের বলা হয়েছিল যে পর্যায়ক্রমে সিলেটের সর্বত্র গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। এক এলাকার সম্পদ অন্য এলাকার উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে এতে কারও আপত্তি নাই, কিন্তুু যে মানুষটি তার একমাত্র অবলম্বন একখন্ড জমি তা দিয়ে দিল দেশের জন্য, যার বাড়ীর মধ্যখান দিয়ে বড় গর্ত করে, ফসল নষ্ট করে গ্যাস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অথচ তাকে একবেলা রান্না করার জন্য টোকাই এর মত লাকড়ী কুড়াতে হচ্ছে- তার জন্য কি একটু করুনা হয়না ? গ্যাস সংযোগ পাওয়া এখন আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কি। বাংলাদেশ সরকার বাসা বাড়ীতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। কোন দেশে যখন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত থাকে , জনগণের ভোটে যখন সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, সেই সরকার কেবলই যে কোন সিদ্বান্ত নেবার আগে দেশের জনগণের অধিকার ও সুযোগ সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের এ সিদ্ধান্তে শতকরা কত ভাগ লোক উপকৃত হবে তার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই, তবে এতটুকু বলতে পারি যে, গুটি কয়েক শিল্পদ্যোক্তার জন্য বৃহৎ জনগোষ্টীকে সুবিধা বঞ্চিত করা কতটা যুক্তিযুক্ত তা বিচারের ভার জনগণের উপর ছেড়ে দিলাম। বিদ্যু প্রতিমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন যে যাদের গ্যাস সংযোগ রয়েছে তাদের গ্যাস সংযোগ ও বন্ধ করে দেওয়া হবে। বাঙ্গালীরা ইংরেজ ও পাকিস্তানীদের পরাজিত করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে আসনেও নিজ দেশীয় নব্য রাজাকারদের থেকে মুক্ত হতে পারছেনা। কল-কারখানায় নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ প্রত্যেক বাংলাদেশীর প্রাণের আকুতি কারন বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্প বর্তমানে আমাদের অর্থনীতির মুল চালিকাশক্তি। কিন্ত সাধারন জনগনকে বঞ্চিত করে একটি গোষ্টীর স্বার্থ রক্ষা কোন জনকল্যাণকর সরকারের কাজ নয় এবং সেই সরকারকে জনগনের সরকার বলা যায় না। সরকার চাইলে শিল্পের জন্য আলাদা গ্যাস আমদানী করে প্রয়োজনে ভুর্তুকী দিয়ে রুগ্ন শিল্প কারখানা বাচিয়ে রাখতে পারে। আর আমাদের দেশে অনেক শিল্পপতি রয়েছেন যারা নিজ উদ্দোগে গ্যাস আমদানী বা গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনার ক্ষমতা রাখেন। সরকার শুধু আমলাতানত্রিক জটিলতা দুর করে ব্যবসায়ীদেরকে আস্থার ও ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করলে শিল্পের জন্য গ্যাস আমদানীতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার অভাব হবে না। কারন পুরো বিনিয়োগটাই ব্যাবসায়ীরা তাদের লাভ্যাংশ থেকে পুষিয়ে নিতে পারেন, কিন্ত একজন সাধারন মানুষ কে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে যে জটিলতা, হয়রানি, মজুতদারী ও লাগামহীন মুল্য বৃদ্ধি করে সংকট সৃষ্টি সহ নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়, তার প্রতিকার পাওয়ার বা ক্ষতি পুষিয়ে নেবার কোন জায়গা নেই। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আমাদের সমাজে রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করেছে। আসলে সব কিছুর মূলে রয়েছে উচ্চবিত্তের স্বার্থ সংরক্ষন।
গ্যাস আমাদের জাতীয় সম্পদ, আর এ সম্পদ রক্ষনাবেক্ষনের জন্য সরকারের যেমন দায়িত্ব রয়েছে তেমনি সাধারন জনগনের ও অনেক দয়িত্ব রয়েছে। গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। গ্যাসের মুল্য মিটার দিয়ে নির্ধারণ করা হয় না বিধায় ২৪ ঘন্টা চুলায় আগুন জ্বালানো থাকবে, একটি প্রবাদ আছে “সরকারী মাল, দরিয়া মে ঢাল” এ ধরনের মনোবৃত্তি আমাদের সমাজে কাজ করে, তা পরিহার করে সরকার ও জনগনকে একসাথে কাজ করতে হবে। সরকার প্রয়োজনে বিদুৎ এর মত মিটার লাগিয়ে গ্যাসের সদ্ব্বব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। কিন্ত কোন অবস্থাতেই গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।
সিলেটবাসীকে নিজেদের দাবী দাওয়ার ব্যাপারে সচেতন, ও সোচ্চার হওয়ার আকুতি জানিয়েছেন সিলেটের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং এ আন্দোলনে সকল প্রবাসীদের অগ্রনায়কের ভুমিকা পালন করার আহবান জানিয়েছেন। প্রবাসীরা তাদের সারা জীবনের কষ্টার্জিত সঞ্চিত অর্থ দিয়ে তৈরী স্বপ্নের বাড়ী আজ দুংস্বপ্নের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। দল মত নির্বিশেষে সিলেটবাসীকে নিজেদের অধিকার আদায়ে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। সরকার পরিচালনায় সিলেটী নেতা- নেত্রীর অংশীদারিত্তের কখনও অভাব ছিল না, এখনও নেই।
বর্তমান অবস্থায় সিলেটবাসীর জন্য জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেবার মত একজন নেতার প্রয়োজন, যিনি সিলেটবাসীর মনের ভাষা বুঝতে পারেন, যার স্পর্শে ঐতিহ্যবাহি সিলেট হবে আলোকিত।
সিলেটবাসী আধুনিক সিলেটর রুপকার, সাবেক স্পিকার মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী মরহুম জনাব আব্দুস সামাদ আজাদ ও অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের বড়ই শুন্যতা অনুভব করছে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সিলেটের সুযোগ্য সন্তান , তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। আশা করব তিনি সিলেটের এই বড় বড় দালান গুলোর দিকে সুহ্রদ দৃষ্টি দিবেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সিলেট তথা গোটা বাংলাদেশের গ্যাস সমস্যার সমাধান করবেন। নইলে সময়ের বিবর্তনে মানুষ তার নায্য পাওনা আদায়ে কঠিন সিদ্বান্ত নিতে বাধ্য, যা সিলেটের আকাশ বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে। সিলেটবাসী বলতে শিখেছে “ গ্যাস না পাইলে ভোট দেবনা”।