যদিও কলকাতায় বর্ষবরণের অন্য একটি শোভাযাত্রা দীর্ঘ দিন ধরেই হয়ে আসছে, কিন্তু বাংলাদেশের আদলে মঙ্গল শোভাযাত্রা কলকাতায় এই প্রথম।
দক্ষিণ কলকাতার একটি পরিত্যক্ত কারখানায় শুক্রবার দুপুরে চলছিল তারই চূড়ান্ত প্রস্তুতি। কোথাও প্রকাণ্ড এক ঘোড়ার গায়ে রঙ দেওয়া চলছে, কোথাও বিরাট বড় এক প্যাঁচার মুখ রাখা, কোথাও আবার বাঘের মুখের ভেতরে হাত দিয়ে দিয়েছেন একজন।
ওই কারখানাটির কাছ থেকেই প্রথমবারের মতো কলকাতায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বেরবে, যেভাবে ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বাঘ, প্যাঁচার মুখোশ, কুলোয় দেওয়া আল্পনা নিয়ে মিছিল হয়, এবার কলকাতাতেও সেরকমই হবে।
“পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের একটা রাজনৈতিক সমাজ আছে, কিন্তু সাংস্কৃতিক সমাজ সেই অর্থে নেই। সাংস্কৃতিক ভাবে বেশ কিছু বছর ধরেই আমরা যেন কিছুটা উদাস। এই যে নববর্ষ হয়, সালটা কত, সেটাও অনেকে বলতে পারে না। এটা অন্যমনস্কতা তো বটেই, কিছুটা লজ্জাজনকও। আমরা চাইছি যা কিছু অশুভ, তার বিরুদ্ধে শুভকে নিয়ে আসা, দেখানো লোকসংস্কৃতিকে তুলে ধরা,” বলছিলেন মি. দত্ত।
মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনে সাহায্য করতে কলকাতায় এসেছেন ঢাকার শিল্পী শহির আহমেদ মিঠু। তাঁর কথায়, “এখানে যেহেতু প্রথম আয়োজন হচ্ছে, এঁরা চেয়েছিলেন আমরা যারা ঢাকায় প্রথম শুরু করেছিলাম মঙ্গল শোভাযাত্রা, তাদের মধ্যে কয়েকজন এসে এঁদের অনুপ্রেরণা দিই, কারিগরি সহায়তা দিই। সেজন্যই আসা। এছাড়াও কি উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু করেছিলাম, সেটা কলকাতার মানুষদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্যও আসা। “
বাংলাদেশ থেকে আসা আরেক শিল্পী তরুণ ঘোষের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর দেশে যেভাবে লোকজ শিল্প দিয়ে বর্ষবরণের উৎসব পালন করা হয়, কলকাতায় সেটার অভাব ছিল বলেই কি তাঁদের বাংলাদেশ থেকে আসতে হল?
ঢাকার শিল্পী এবং কলকাতার কারিগরদের সঙ্গে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য প্রচুর মুখোশ বানাতে হাত লাগিয়েছিলেন কলকাতায় পাঠরত বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রী। অমিতাভ ভট্টশালী কথা বলেছিলেন, তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁদের একজন বলছিলেন, বেশ কয়েকবছর ধরে কলকাতায় পড়াশোনা করছেন, কিন্তু পয়লা বৈশাখটা সেভাবে অনুভব করতে পারেন নি। অনেকদিন পরে দেশের আমেজটা ফিরে পাওয়া যাচ্ছে আজ।