যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো ধরনের আগ্রাসন মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে উত্তর কোরিয়া। কোরিয়া উপদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী মোতায়েনের পাল্টা জবাবে এই কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ক্ষুব্ধ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী পাঠানোর ঘটনায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে চীন। দেশটি নিজের সীমান্তে নতুন করে দেড় লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, উত্তর কোরিয়া আরও ঝামেলার দিকে যাচ্ছে। চীন যদি সহায়তার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা ঠিক আছে। আর যদি সহায়তা না করে আমরা একাই সমস্যার সমাধান করবো। খবর বিবিসি, সিএনএন, ডেইলি মেইল অনলাইনের।
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে কোনো পর্যায়ের যুদ্ধের জন্য উত্তর কোরিয়া প্রস্তুত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী মোতায়েনের এ আগ্রাসী পদক্ষেপ নেওয়ায় যে কোনো ধ্বংসাত্মক পরিণতির জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার এই যুদ্ধংদেহী মনোভাবকে কোরিয়া উপদ্বীপে আগ্রাসন বলেই বিবেচনা করে উত্তর কোরিয়া। পিয়ংইয়ং স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক দিক দিয়ে যত উন্নতই হোক না কেন, দেশটির যে কোনো ধরনের আগ্রাসনের দাঁতভাঙা জবাব দেবে উত্তর কোরিয়া।
উত্তর কোরিয়ার পরমাণু বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে যখন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তখন কোরীয় উপসাগরে উত্তর কোরিয়ার জলসীমার কাছে রণতরী মোতায়েন করছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন সেনাবাহিনীর নির্দেশে পাঠানো কার্ল ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপ নামের ওই নৌবহর সবসময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় থাকে। এই স্ট্রাইক গ্রুপে ২৭ হাজার টন ওজনের একটি বিমানবাহী রণতরীসহ একে ঘিরে ছয়টি যুদ্ধ জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ত্রুক্রজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ব্যবস্থাযুক্ত ইউএসএস লেক চ্যামপ্লেইন যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থাসম্পন্ন দুই যুদ্ধজাহাজ_ ইউএসএস ওয়োনি ই. মেয়ার এবং ইউএসএস মাইকেল মারফি। এই নৌবহরে ৬০টি যুদ্ধবিমান ও ৫ হাজার নৌসেনা রয়েছে। এই নৌবহরের গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র সংখ্যাও উল্লেখ করার মতো। আক্রমণ ক্ষমতাও খুব শক্তিশালী। পাশাপাশি কোনো ধরনের পাল্টা হামলা মোকাবেলায়ও এর ব্যাপক দক্ষতা রয়েছে।
এদিকে আগামী ১৫ এপ্রিল উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের দাদা কিমইল সুংয়ের জন্মদিন। এ দিন দেশটি ক্ষেপণাস্ত্র বা পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এমন হলে দেশটির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার বিষয়ে একমত হয়েছে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণুবিষয়ক দুই শীর্ষ কর্মকর্তা।
এদিকে চীন নিজের সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। নতুন করে দেড় লাখ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালালে ব্যাপক সংখ্যায় কোরীয় শরণার্থী চীনে প্রবেশ করার চেষ্টা করবে এই আশঙ্কা করছে বেইজিং।
মাত্র কয়েক দিন আগেই সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন বাশার আল আসাদের একটি বিমানঘাঁটিতে ত্রুক্রজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই হুঁশিয়ার করেছিলেন, চীন বেপরোয়া উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচির লাগাম না টানলে এই পরমাণু হুমকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র এককভাবেই সিদ্ধান্ত নেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধজাহাজ কোরীয় উপসাগরে পাঠানো প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ড জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া ক্রমাগত দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে পরমাণু পরীক্ষা চালানো ও ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা বাড়িয়ে চলার মাধ্যমে যে ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তা মোকাবেলার জন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরমাণু ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম চালানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং জাতিসংঘ বেশ কয়েকবার নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ওই কার্যক্রম থেকে সরে আসেনি উত্তর কোরিয়া।