স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। ঢাল-তলোয়ার যা নিয়েই নামুক, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না। এর পরও যাঁরা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা অর্বাচীন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এবং সাবের হোসেন চৌধুরী ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় সংসদে গৃহীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আজ রোববার প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শিরীন শারমিন ও সাবের হোসেন চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। দেশের বাইরে থাকায় সাবের হোসেন চৌধুরী সংসদে ছিলেন না। আলোচনার সময় সভাপতির আসনে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। পরে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে স্পিকার শিরীন শারমিন সভাপতির আসনে বসেন।
স্পিকার ও সাবের চৌধুরীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আইপিইউ ও সিপিএ সারা বিশ্বের সংসদকে নেতৃত্ব দেয়, গণতন্ত্রের ধারক-বাহক। আপনারা জিতে বিশ্বের সংসদকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। আজ বাংলাদেশের ওপর বিরাট দায়িত্ব পড়েছে। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে সুসংহত করার দায়িত্ব পড়েছে। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জনগণের জন্য এ এক বিরল সম্মান। সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
সংসদ নেতা বলেন, নির্বাচন ও সংসদ নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, এ দুটি নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে তাঁরা জবাব পেয়েছেন। কিন্তু এ দুটি জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের দায়িত্ব বেড়েছে। তাই গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।
শিরীন শারমিন ও সাবের চৌধুরীকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দুজনকে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছেন, জিতবেন তো? আমি বলেছি, একজন প্রার্থীর অবস্থা একটু খারাপ, আরেকজনের অবস্থা তো ভালোই। তবে আমরা দুটোতেই জিতব।’
আজ প্রমাণিত বাংলাদেশ যোগ্য ক্রিকেট দল
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন টেস্ট খেলার যোগ্যতা পেয়েছিল, তখনো কেউ কেউ বলেছিল, আমরা নাকি তদবির করে টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে এসেছি। কিন্তু আজ প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশ যোগ্য ক্রিকেট দল। তারা জিম্বাবুয়েকে তিন টেস্টের সিরিজে পরাজিত করেছে। সিরিজে তামিম দুটো সেঞ্চুরি, সাবিক একটা সেঞ্চুরি ও ১০টা উইকেট এবং ইমরুল ও মমিনুল একটি করে সেঞ্চুরি করেছে। বাংলাদেশ যে ইচ্ছে করলে পারে, তা প্রমাণ করেছে।’
আলোচনার শুরুতে শিরীন শারমিনের সভাপতির আসনে না থাকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিফ হুইপকে অনুরোধ করলাম, স্পিকার যেন চেয়ারে বসেন। তাঁকে নিয়ে আলোচনা, তাই তিনি একটু কুণ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু যাঁর জন্য আয়োজন, তিনিই যদি না থাকেন, তবে কার উদ্দেশে কথা বলব।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, দেশের ভেতরের বিরোধিতা, সংসদের বিরোধিতা, রাজপথের বিরোধিতা আর দেশের বাইরে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা এক কথা নয়। এটা বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন। এই সংসদের অর্জন হলো বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিকভাবে সংসদীয় গণতন্ত্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
‘বিশ্ববাসী-আরব দেশগুলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়’
আমির হোসেন আমু স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, আপনাকে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, বিশ্ববাসী ও আরব দেশগুলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে, এ বিজয়ে তারা বুঝতে পেরেছে, তাদের ষড়যন্ত্র কাজে লাগবে না।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইপিইউ ও সিপিএ নির্বাচনে সঠিক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। যে কারণে দুজনই জিতেছেন। মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বানরে কি বুঝবে কর্পুরের স্বাদ। যারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে, তারা জানেই না আসলে আইপিইউ ও সিপিএ কী?’
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, এই দুটি প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাওয়ায় দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। সে জন্য গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আরও বেশি করে কাজ করতে হবে।
বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশে কিছু নিধিরাম সর্দার রয়েছেন, যাঁরা এই সংসদের আইনগত বৈধতা নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু আইপিইউ ও সিপিএতে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাওয়ায় প্রমাণিত হয়েছে, এই সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর।
হাসিনা এখন বিশ্বনেতা
স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান বলেন, যারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কটাক্ষ করেছে, আইপিইউ ও সিপিএ নির্বাচন তাদের গালে কষে চড় মেরেছে। শেখ হাসিনা এখন বিশ্বনেতা।
আলোচনায় আরও অংশ নেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ আলী আশরাফ, আবদুল মতিন খসরু, হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, আবদুল মান্নান, আবদুস শহীদ, মইন উদ্দীন খান বাদল, হাছান মাহমুদ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুবুল আলম হানিফ প্রমুখ।