নবজাতক কোলে নিয়েই পরীক্ষা দিচ্ছেন দুই মা

Slider গ্রাম বাংলা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

 

 

 

 

aa95cdb163671aed6a1d2869534a120f-58ebce34f3837

 

 

 

 

চলছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষাকেন্দ্রের একটি কক্ষে একেবারে সামনের বেঞ্চে দুই ছাত্রী বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন। সাধারণ এক দৃশ্য। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই অসাধারণত্বটা চোখে পড়ে। দুজনের কোলেই শিশু। নবজাতক। ২ এপ্রিল জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সরিষাবাড়ী পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে এই ঘটনা দেখা গেল।
‘আমি পরীক্ষা দেব, এটাই ছিল আমার ইচ্ছা। তাই দুই দিনের নবজাতককে নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছি।’ বললেন পরীক্ষার্থী বেবী আক্তার। ২০ বছর বয়সী বেবী আক্তার এবারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (বিএম) পরীক্ষার্থী। অদম্য তাঁর ইচ্ছাশক্তি। পরীক্ষার পর কথা বলে জানা গেল, ৩১ মার্চ রাত আটটায় সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই মায়ের কোল আলো করে আসে এক কন্যাসন্তান। সন্তান জন্মের দুই দিন পর পরীক্ষা। বেবী আক্তার তবু চলে আসেন পরীক্ষা দিতে। সন্তানের নাম রেখেছেন খাদিজা।
সরিষাবাড়ীর শিমলা বাজারের মো. জাকারিয়ার স্ত্রী বেবী আক্তার। স্বামী এখন সৌদি আরবে আছেন কর্মসূত্রে। বেবী আক্তার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। পরিবারের সবাই তাঁকে সহায়তা করেছেন। ২০১৫ সালে উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের ছাতারিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদের মেয়ে বেবী আক্তারের সঙ্গে পৌর শহরের শিমলা বাজারের সোহরাব মণ্ডলের সৌদিপ্রবাসী ছেলে জাকারিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পরও বেবী আক্তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান। ২০১৫ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন স্থানীয় চর বাঙ্গালী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি বিএম কোর্সে।
বেবীর মা আনোয়ারা বেগম বললেন, ‘মেয়ে আমার ধৈর্যশীল ও সংগ্রামী।’ বেবী আক্তারের শ্বশুর সোহরাব মণ্ডল যোগ করলেন, ‘আমার পুত্রবধূ বিয়ের পর লেখাপড়া বন্ধ না করে রাত জেগে লেখাপড়া করেছে।’
বেবীর কথা হলো। এবার আসি একই বেঞ্চের আরেক পরীক্ষার্থী মা লিপি খাতুনের (২১) কথায়। তিনি ২৬ দিনের নবজাত শিশুকে কোলে নিয়ে একই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছেন। সরিষাবাড়ীর মহাদান ইউনিয়নের সানাকৈর এসএস টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ থেকে লিপি খাতুন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এই মা শিশুর নাম রেখেছেন জানিক।
৪ এপ্রিল কথা হয় পরীক্ষাকেন্দ্রের কক্ষ পরিদর্শক রাশেদা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা চলার সময় মাঝেমধ্যে পরীক্ষার্থী মায়ের কাছ থেকে আমি এই দুই শিশুকে কোলে নিই। নতুন মায়েদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারও দেখি।’
সরিষাবাড়ী পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এবং পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব সৈয়দ আবদুর রউফ বলেন, ‘আমার ৩৮ বছর শিক্ষকতা জীবনে এমন পরীক্ষার্থী মা কখনো দেখিনি। এ ধরনের পরীক্ষার্থী মায়েরা যেন হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দিতে পারেন, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করব। পাশাপাশি এ রকম আত্মপ্রত্যয়ী মায়েরা যেন শিক্ষাজীবন শেষে কর্মসংস্থানের নিশ্চিত সুযোগ পান।’
৪ এপ্রিল পরীক্ষার সময় বেবী আক্তার ও লিপি খাতুনকে দেখতে যান উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আমাতুস জোহরা। তিনি বলেন, নারীরা এখন যে কত আত্মনির্ভরশীল হয়েছে, তার একটা দৃষ্টান্ত এই দুই পরীক্ষার্থী মা। নিজেদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে নারীরা আর পিছিয়ে থাকবে না।
বেবী আক্তার ও লিপি খাতুন এইচএসসির সব কটি পরীক্ষাই দেবেন তাঁদের নবজাত শিশুকে কোলে নিয়ে। এভাবে পরীক্ষা দিতে তাঁদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। নারীরা তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হবেন এবং এগিয়ে যাবেন—এমনই প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *