সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন না মাশরাফি বিন মুর্তজা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের সিদ্ধান্তে তিনি অটল। কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ওয়ানডে অধিনায়ক জানিয়ে দিয়েছেন, সিদ্ধান্তটা হুট করে নিলেও টি-টোয়েন্টিতে তাঁর আর ফেরার ইচ্ছা নেই।
গত ৪ এপ্রিল কলম্বোয় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রীতিমতো বোমাই ফাটান মাশরাফি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তাঁর কাছে টস জয়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন ধারাভাষ্যকার ডিন জোন্স। তখনই মাশরাফির ওই ঘোষণা—আর খেলবেন না আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে। তাঁর সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে ভক্ত-সমর্থকেরা মানববন্ধন করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাশরাফিকে ফিরে আসার আকুতি। তবু ফিরবেন না মাশরাফি।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে আপনার অবসর মানতে পারছেন না অনেকেই। বোর্ড সভাপতিও বলেছেন, আপনি নাকি শুধু অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন। আপনার দিক থেকে সিদ্ধান্ত বদলানোর কোনো সম্ভাবনা কি আছে?
মাশরাফি বিন মুর্তজা: না। আমি সিদ্ধান্ত নিই দ্রুত, হঠাৎ। আমার জীবনের সব সিদ্ধান্তই আমি হঠাৎ করে নিয়েছি। অনেকে, এমনকি আমার বাসার মানুষও ভাবে যে, এসব সিদ্ধান্তের পেছনে আবেগ কাজ করেছে। খেলাধুলায় আবেগ থাকবেই। তবে আমার জায়গায় আমি অবিচল। একটা ব্যাপারই খারাপ লাগছে, মানুষজন যেটা চাচ্ছিল বা আমিও হয়তো ভেবেছিলাম, সবাইকে আগে থেকে জানিয়ে অবসর নেব। সেটা কেন বলিনি বা বলতে পারিনি, সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত না বলাই ভালো। যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছি, মানুষের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা
ছাড়া আর কিছুর সুযোগ নেই। আমার আর টি-টোয়েন্টিতে ফেরার ইচ্ছা নেই। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেও আমার কাছে মনে হয়, এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন: অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাহলে কোনো আফসোসও নেই? আপনার অগণিত ভক্ত-সমর্থকদের কথা চিন্তা করে হলেও সিদ্ধান্তটা কি দেশের মাটিতে হওয়া কোনো ম্যাচে নেওয়া যেত না?
মাশরাফি: এ নিয়ে বিস্তারিত কিছুতে এখন আর যেতে চাচ্ছি না। তবে মানুষের যেটা চাওয়া ছিল, সেটা পূরণ করতে না পারায় আমারও একটা দুঃখ আছে। ১৫-১৬ বছর ধরে খেলছি। আমার বিশ্বাস, এই ১৫-১৬ বছর ধরে খেলতে পারার পেছনে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা একটা বিরাট শক্তি। নড়াইলের মানুষের ভালোবাসা, সারা দেশের মানুষের ভালোবাসা। আপনাদের প্রতিও আমার একটা দায়বদ্ধতা ছিল। আমারও ইচ্ছা ছিল, সবাইকে জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু এখন দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কিছু করার নেই। তবে ওয়ানডে তো এখনো খেলছি। চেষ্টা করব, সেখান থেকে সবাইকে জানিয়ে ভালোভাবে বিদায় নিতে।
প্রশ্ন: অবসরের সিদ্ধান্ত কখন নিলেন?
মাশরাফি: আগের রাতে চিন্তাটা মাথায় আসার আধঘণ্টার ভেতরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দলকে জানিয়েছি ম্যাচের দিন বেলা সাড়ে তিনটার সময় মিটিংয়ে। বাসায় জানানোর পর আমার বাবা বলছিলেন, সিদ্ধান্তটা দেশে আসার পর নিলে ভালো হতো কিনা। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, তখন নিয়ে নেওয়াই ভালো।
প্রশ্ন: টস করতে গিয়ে এর আগে সম্ভবত কেউ অবসরের ঘোষণা দেননি। আপনি ওই সময়টাই বেছে নিলেন কেন? সিরিজ শেষে বা ওই ম্যাচের পরও তো সিদ্ধান্ত জানাতে পারতেন…
মাশরাফি: হয়তো বা সেটাই হতো। ওই সময়টা বেছে নেওয়ার পেছনেও একটা কারণ আছে। এ ব্যাপারেও আমি বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না (হাসি)। তবে কারণ একটা অবশ্যই আছে। আমিও যতটুকু জানি, টসের সময় কেউ অবসরের ঘোষণা দেয় না। তবে এর জন্য আমি কারও ওপর দোষ চাপাতে চাই না বা কারও প্রতি আমার কোনো অভিযোগও নেই।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ থেকেই দল নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। টি-টোয়েন্টিতে আপনি ছাড়া আরও সিনিয়র খেলোয়াড়দেরও বিশ্রাম দেওয়ার আলোচনা শুনেছি। এরপর তো আপনি অবসরই নিলেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের কথাবার্তা আপনাকে কতটা প্রভাবিত করে?
মাশরাফি: পৃথিবীর সব মানুষই অন্য মানুষের কিছু কথা নেয়, কিছু ছাড়ে। বিষয়টা হলো, কে কতটুকু নিল বা ছাড়ল। কেউ ইতিবাচক কথা বেশি নেয়। কেউ নেতিবাচক জিনিস বেশি। এটা ঠিক, যখন মানুষ নেতিবাচক কিছু বলে, তখন সেটা আমার ভেতরও ঢুকে যায়। তবে আমি বিশ্বাস করি, দিন শেষে সিদ্ধান্তটা আমারই। মাঠের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে সবকিছু হবে। কারও কথার ওপর ভিত্তি করে নেতিবাচক মনোভাব চলে আসাটা আমি বিশ্বাস করি না। হ্যাঁ, সে রকম কিছু হলে মানসিক চাপ একটা থাকেই। আমার কথা বলছি না, যার ক্ষেত্রেই হোক, মানসিক চাপ থাকে। তখন আপনিও বুঝবেন, মানসিক চাপ তৈরি করে কেউ আপনার বিরুদ্ধে কোনো ক্ষেত্র তৈরি করছে কি না। নাকি আপনি আসলেই খারাপ কিছু করছেন।
প্রশ্ন: বোর্ড থেকে শুনেছি, তিন সংস্করণের জন্য তিনজন অধিনায়কের চিন্তার কথা বলা হয়েছিল আপনাকে। সে ক্ষেত্রে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়ার ব্যাপারটি বিবেচনা করতে বলেছিল বোর্ড। আপনার ওপর নাকি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়ার কোনো চাপ ছিল না। এ ব্যাপারে মন্তব্য কী?
মাশরাফি: এসব নিয়ে কিছু বলব না। কে কী বলেছে সেদিক যেতে চাই না। ১৬ বছর ধরে এই মাঠ, এই খেলোয়াড়েরা, এই ক্রিকেট বোর্ড—এরা আমার পরিবারের মতো। ক্রিকেট বোর্ডের বাইরে আমি কোনো দিন যাইনি। যত দিন খেলব, আমি যাবও না, যদি সে রকম পরিস্থিতি তৈরি না হয়। ১৬ বছর যে বিতর্ক তৈরি হয়নি, কখনোই চাইব না, আমার ক্যারিয়ারের শেষে এসে সেই বিতর্ক তৈরি হোক। কিন্তু যদি কেউ বিতর্ক সৃষ্টি করে ফেলে, তখন আমার কিছু করার নেই।
প্রশ্ন: আপনি যে বিষয়গুলো বলতে চাচ্ছেন না, ওই ঘটনাগুলো না ঘটলে টি-টোয়েন্টি থেকে কবে অবসর নিতেন?
মাশরাফি: যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটা নিয়ে আমার কোনো ক্ষোভ বা আফসোস নেই। ওই দিন না করলে হয়তো বা জিনিসটা হুট করে হতো না। সবাইকে জানিয়ে করতে পারতাম। কিন্তু যেটা হয়ে গেছে, আলহামদুলিল্লাহ। আমার কোনো আফসোস নেই।