মিসরে কপটিক খ্রিষ্টানদের দুটি গির্জায় পৃথক বিস্ফোরণে অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছে। আজ রোববার এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একটি বিস্ফোরণকে আত্মঘাতী হামলা বলা হচ্ছে।
বিবিসি ও এএফপির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রথমে তানতা শহরের সেন্ট জর্জ কপটিক গির্জায় বিস্ফোরণে অন্তত ২৫ জন নিহত হন। অপর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে আলেকজান্দ্রিয়ার সেন্ট মার্কস কপটিক গির্জায়। সেখানে ১১ জনের প্রাণহানি ঘটে। এই বিস্ফোরণকে আত্মঘাতী হামলা বলছেন ওই গির্জার যাজকের সহকারী।
মিসরের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল তারেক আতিয়া বলেন, সেন্ট জর্জ কপটিক গির্জায় বেদির কাছে প্রার্থনার জন্য যখন সবাই জড়ো হচ্ছিলেন, তখন সামনের সারির কাছে এ বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এখনো কেউ এ হামলার দায় স্বীকার করেনি।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেন্ট জর্জ কপটিক গির্জায় আজ পাম সানডে উদযাপিত হচ্ছিল। খ্রিষ্টীয় দিনপঞ্জি অনুযায়ী কপটিক খ্রিষ্টানদের কাছে দিবসটি পবিত্র একটি দিন। কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল জানিয়েছে, এই হামলায় ঘটনায় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা বেড়ে ৭১ জনে পৌঁছেছে। টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, গির্জার ভেতর কাঠের বেঞ্চগুলো ভেঙে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পাশে সাদা দেয়াল রক্তে লাল।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আহমেদ আবু জেইদ এএফপিকে বলেছেন, ‘আমাদের একতা নষ্ট করতে এই বোমা হামলা এক ব্যর্থ পদক্ষেপ।’ তিনি টুইট বার্তায় বলেন, ‘মিসরে আবারও সন্ত্রাসবাদ আঘাত এনেছে, এবার পাম সানডে-তে।’ প্রধানমন্ত্রী শেরিফ ইসমাইল এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে মিসরের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন।
মিসরের ৯ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে ১০ ভাগের এক ভাগ কপটিক খ্রিষ্টান। আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে ইস্টার সানডে। এ ছাড়া ২৮ ও ২৯ এপ্রিল ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের কায়রো সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
জিহাদি ও ইসলামপন্থীদের অভিযোগ, ২০১৩ সালে ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনীকে কপটিক খ্রিষ্টানেরা সহায়তা করেছে।
গত ডিসেম্বরেও কায়রোতে গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ২৯ জন নিহত হয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট কায়রোতে মুরসিপন্থীদের দুটি ক্যাম্পে নিরাপত্তা বাহিনী ভয়াবহ হামলা চালায়। এর দুই সপ্তাহ পর দেশটিতে ৪০ টির বেশি গির্জায় হামলার ঘটনা ঘটে।
পরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছিল, খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী লোকজনের মালিকানাধীন এমন ২০০ বেশি স্থাপনার ওপর হামলা চালায়। এর মধ্যে ৪৩টি গির্জা ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর অন্তত চারজন নিহত হয়।