ঢাকা; রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গউছকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া এ দুজনকে বরখাস্তের আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
বুলবুল ও গউছের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল রুলসহ এ আদেশ দেন। স্থানীয় সরকার সচিব, উপসচিব, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার, রাজশাহী জেলা প্রশাসক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে আদেশে। এর আগে সোমবার হাইকোর্টের একই বেঞ্চ সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশও স্থগিত করেছিল। ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেছে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। গতকাল বুলবুলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আমিনুল হক হেলাল। জি কে গউছের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এম মাসুদ রানা। পৃথক ফৌজদারি মামলার অভিযোগপত্রে বুলবুল ও গউছের নাম আসায় গত রোববার তাদের বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের আদেশে উল্লেখ করা হয়, ফৌজদারি মামলায় এ দুজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে গৃহীত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (সিটি কপোরেশন) আইন অনুযায়ী তাদেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় ২০১৫ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি নাশকতার একটি মামলা করা হয়। পরে এ মামলায় গত ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত তা আমলে নেয়। এরই প্রেক্ষিতে গত রোববার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। বুলবুলের আইনজীবী আমিনুল হক হেলাল মানবজমিনকে জানান, নাশকতার চার মামলায় অভিযোগপত্রে নাম এলে ২০১৫ সালের ৭ই মে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই বরখাস্তের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন বুলবুল। গত বছরের ১০ই মার্চ উচ্চ আদালত তার বরখাস্তের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ৫ই মার্চ আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রাখেন। দীর্ঘদিন পর রোববার (২রা মার্চ) তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেন। তবে, দায়িত্ব নেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে তাকে বরখাস্তের নোটিশ পাঠায় স্থানীয় সরকার বিভাগ। আমিনুল হক হেলাল বলেন, যে আদেশবলে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল সেই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করার পর আদালত তিন মাসের জন্য তার বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেছেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের এ আদেশের ফলে মেয়র হিসেবে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের দায়িত্ব পালনে আইনগত কোনো বাধা নেই। বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০০৪ সালের ২১শে জুন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত’র জনসভায় বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে গউছের নাম আসে। গত ২২শে মার্চ সুনামগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ মামলায় অভিযোগপত্র দিলে আদালত তা আমলে নেয়। এ মামলায় অভিযোগপত্রে নাম আসায় গত রোববার তাকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গউছের আইনজীবী এম মাসুদ রানা জানান, এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় নাম আসায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরে হাইকোর্টে রিট করলে হাইকোর্ট তার বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করে। পরে আপিল বিভাগও হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে। এরপর ২৩শে মার্চ হবিগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেয়ার কয়েকদিনের মধ্যে আবারও তাকে বরখাস্ত করা হয়। ২০১৫ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে কারাগারে থেকেই বিজয়ী হন বিএনপি নেতা জি কে গউছ। পরে চলতি বছরের ৪ঠা জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান তিনি।
মুজিবনগরের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ফুলবাড়ী পৌর মেয়র বরখাস্ত
মেহেরপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান জার্জিস হোসাইনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জুলিয়া মইন স্বাক্ষরিত এক চিঠি উপজেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে বলে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উদ্দিন জানান। আমিরুল উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জার্জিস উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। এরা দুজনেই ২০১৩ সালে মুজিবনগর থানার তৎকালীন ওসি রবিউল ইসলামকে মারধরের মামলার অভিযোপত্রভুক্ত আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ। উপসচিব জুলিয়া মইন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের দ্বারা ক্ষমতা প্রয়োগ করা জনস্বার্থবিরোধী বলে মনে করে সরকার। তাই ১৯৯৮ সালের উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধিত ২০১১ সালের ১৩ (খ) (১) অনুসারে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
এ বিষয়ে আমিরুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয়ের বরখাস্ত আদেশ অবৈধ এবং তারা এ সপ্তাহের মধ্যেই ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করবেন।
এদিকে ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মুরতুজা সরকার মানিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এশিয়া এনার্জির করা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হওয়ায় মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে বরখাস্ত করেছে বলে জানান দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, গত ৩রা এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ, পৌর-১ শাখার উপসচিব আবদুর রউফ মিয়া স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মেয়র মুরতুজা সরকার মানিককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে মুরতুজা বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার খবর তিনি শুনেছেন। ফুলবাড়ী রক্ষার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ায় এশিয়া এনার্জির করা মামলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও ফুলবাড়ী রক্ষার আন্দোলন ও মেয়র পদে ফিরে আসার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। ২০১৪ সালের ২৯শে নভেম্বর এশিয়া এনার্জির বাংলাদেশ প্রধান গ্যারি এন লাই তার লোকজন নিয়ে ফুলবাড়ী যান। ওই দিন এশিয়া এনার্জির অফিসে এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর হয়।
ওই ঘটনায় এশিয়া এনার্জির মাঠ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বাদী হয়ে ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মুরতুজা সরকার মানিকসহ ৬০ জনের নামে ফুলবাড়ী থানায় মামলা করেন। সমপ্রতি ওই মামলার অভিযোগপত্র গৃহীত হয়েছে আদালতে।
২০০৪ সালের ২১শে জুন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত’র জনসভায় বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে গউছের নাম আসে। গত ২২শে মার্চ সুনামগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ মামলায় অভিযোগপত্র দিলে আদালত তা আমলে নেয়। এ মামলায় অভিযোগপত্রে নাম আসায় গত রোববার তাকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গউছের আইনজীবী এম মাসুদ রানা জানান, এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় নাম আসায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরে হাইকোর্টে রিট করলে হাইকোর্ট তার বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করে। পরে আপিল বিভাগও হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে। এরপর ২৩শে মার্চ হবিগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেয়ার কয়েকদিনের মধ্যে আবারও তাকে বরখাস্ত করা হয়। ২০১৫ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে কারাগারে থেকেই বিজয়ী হন বিএনপি নেতা জি কে গউছ। পরে চলতি বছরের ৪ঠা জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান তিনি।
মুজিবনগরের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ফুলবাড়ী পৌর মেয়র বরখাস্ত
মেহেরপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান জার্জিস হোসাইনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জুলিয়া মইন স্বাক্ষরিত এক চিঠি উপজেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে বলে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উদ্দিন জানান। আমিরুল উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জার্জিস উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। এরা দুজনেই ২০১৩ সালে মুজিবনগর থানার তৎকালীন ওসি রবিউল ইসলামকে মারধরের মামলার অভিযোপত্রভুক্ত আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ। উপসচিব জুলিয়া মইন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের দ্বারা ক্ষমতা প্রয়োগ করা জনস্বার্থবিরোধী বলে মনে করে সরকার। তাই ১৯৯৮ সালের উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধিত ২০১১ সালের ১৩ (খ) (১) অনুসারে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
এ বিষয়ে আমিরুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয়ের বরখাস্ত আদেশ অবৈধ এবং তারা এ সপ্তাহের মধ্যেই ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করবেন।
এদিকে ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মুরতুজা সরকার মানিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এশিয়া এনার্জির করা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হওয়ায় মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে বরখাস্ত করেছে বলে জানান দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, গত ৩রা এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ, পৌর-১ শাখার উপসচিব আবদুর রউফ মিয়া স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মেয়র মুরতুজা সরকার মানিককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে মুরতুজা বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার খবর তিনি শুনেছেন। ফুলবাড়ী রক্ষার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ায় এশিয়া এনার্জির করা মামলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও ফুলবাড়ী রক্ষার আন্দোলন ও মেয়র পদে ফিরে আসার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। ২০১৪ সালের ২৯শে নভেম্বর এশিয়া এনার্জির বাংলাদেশ প্রধান গ্যারি এন লাই তার লোকজন নিয়ে ফুলবাড়ী যান। ওই দিন এশিয়া এনার্জির অফিসে এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর হয়।
ওই ঘটনায় এশিয়া এনার্জির মাঠ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বাদী হয়ে ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মুরতুজা সরকার মানিকসহ ৬০ জনের নামে ফুলবাড়ী থানায় মামলা করেন। সমপ্রতি ওই মামলার অভিযোগপত্র গৃহীত হয়েছে আদালতে।