কুমিল্লায় ভোট; সাক্কু না সীমা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা বাংলার সুখবর সারাদেশ

59476_f4

 

কুমিল্লা; আজ ভোট গ্রহন শুরু। এর আগে  ভোটের জন্য প্রস্তুত হয়েছে কুসিকবাসী। নির্বাচন কমিশনও সম্পন্ন করেছে ভোটগ্রহণের সবধরনের প্রস্তুতি। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ রক্ষায় তৎপর আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে পুরো নগরী।
গতকাল সদর দক্ষিণ থানার ৯টি ওয়ার্ডের ১৯টি কেন্দ্রের নির্বাচনী নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে ১৯ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে। চারদিকে নানা গুঞ্জন, অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার মধ্যেও কুসিকে আজ ভোট উৎসব। নিবদ্ধ পুরো দেশবাসীর দৃষ্টি। নগরবাসীর কৌতূহল এখন একটিই। কে হচ্ছেন কুসিকের অভিভাবক। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট দিয়ে কুসিকের ভোটাররা আজ নির্বাচিত করবেন নতুন মেয়র। ২০১১ সালে সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরুর পর এটি দ্বিতীয় নির্বাচন। প্রথমবার নির্দলীয় নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হয়েছিলেন মনিরুল হক সাক্কু। এবার তিনি বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ধানের শীষ প্রতীকে। তার সঙ্গে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর আঞ্জুম সুলতানা সীমা। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দু’জনই। কিন্তু কার ওপর আস্থা রাখবে নগরবাসী। অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেবে নাকি বেছে নেবে নতুন মুখ। এমন কৌতূহলের পাশাপাশি ভোটারদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা শঙ্কা। নির্বাচন কি আদৌ শান্তিপূর্ণ হবে। ভোটাররা কি কেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে? ভোটারদের প্রত্যাশা একটিই সুষ্ঠু নির্বাচন। যদিও  নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসন বারবার আশ্বস্ত করছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার করেছে নির্বাচন কমিশন। কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল জানান, নির্বাচনের সব প্রস্ততি শেষ। পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে ভোট দেবেন ভোটাররা। কেউ কোনো ধরনের গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করলে ছাড় পাবেন না। পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও কেন্দ্র নিরাপদ রাখতে সহিংসতা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। ভোটারদের অভয় দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, রিটার্নিং কর্মকর্তা, র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক, বিজিবি’র অধিনায়ক গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেছেন। তারা বলেছেন, নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসুন। সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, গতকাল বুধবার কুসিক এলাকায় সকল প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা বন্ধ ছিল। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়েছেন কাল। নির্বাচনে থাকা ৪ মেয়র প্রার্থীই ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাবেক মেয়র বিএনপি প্রার্থী সাক্কুকে না পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে আসা আওয়ামী লীগের প্রার্থী সীমাকে বেছে নেবেন ভোটাররা- তার অপেক্ষা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করলেও শঙ্কায় রয়েছে বিএনপি। তবে নতুন অভিভাবক যিনিই নির্বাচিত হোন নগরবাসী আভাস দিচ্ছেন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের। কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। তারা হলেন- বিএনপি মনোনীত মনিরুল হক সাক্কু, আওয়ামী লীগ মনোনীত আঞ্জুম সুলতানা সীমা, জাসদ মনোনীত শিরিন আক্তার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) মামুনুর রশিদ। তবে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের দুই প্রার্থীকে ঘিরেই যত জল্পনা-কল্পনা। চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ। এছাড়া কুসিকের ১৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৭টি ওয়ার্ড মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন। তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন  ১০৩টি কেন্দ্রের ৬২৮টি গোপন বুথে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ দুই হাজার ৪৪৭ জন, মহিলা ভোটার এক লাখ ৫ হাজার ১১৯ জন। ৫৩.৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ সিটিতে সংখ্যালঘু ভোটার ৫৫ হাজার, নতুন ভোটার ৩৮ হাজার ২৮৭ জন। সবচেয়ে বেশি ভোট ৩নং ওয়ার্ডে ১৪৮৮৬ জন। সবচেয়ে কম ভোটার ২৫ নং ওয়ার্ডে ৩৪০০ জন। সবচেয়ে বেশি কাউন্সিলর প্রার্থী ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৮জন। আর সবচেয়ে কম প্রার্থী ৯-১০-১১ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন করে।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা
কুসিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার সদস্য মাঠে থাকবে। নগরীর ছোটরা এলাকায় অবস্থিত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৪৫জন ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলার তদারকি করবেন। এ নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিতে পুলিশের ২ হাজার ৪৫৬ জন সদস্য, র‌্যাব’র ৩৩৮ জন সদস্য, বিজিবি’র ২৭ প্লাটুনে ৬শ’ জন সদস্য এবং কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সঙ্গে প্রশিক্ষিত ব্যাটালিয়ন আনসারের ৫৩০ জন সদস্য ও আনসারের ১৪৪২ জনসহ ১৯৭২ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ২৪ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করা হচ্ছে। কুসিক নির্বাচনে ১০৩টি ভোট কেন্দ্রের সবগুলোকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কোতয়ালি মডেল থানা এলাকায় ৭২টি ভোটকেন্দ্র এবং সদর দক্ষিণ মডেল থানা এলাকায় ৩১টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নিত করে প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪জন পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং র‌্যাবের ৮ সদস্যের একটি দল দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ ২টি করে কেন্দ্রতে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও প্রশিক্ষিত ব্যাটালিয়ন আনসার ফোর্সের সদস্যদের পৃথক মোবাইল টিম নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও ভোটকেন্দ্রে আসার পথে কোন ভোটার যেন বাধাগ্রস্ত না হয় তার জন্য র‌্যাব ও পুলিশের মোবাইল টিম ওয়ার্ডগুলোতে টহলে ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। নির্বাচনী ২৭টি ওয়ার্ডে পুলিশের ২৪ ঘণ্টায় ২৭টি পেট্রোল টিম ডিউটি করছে। একটি টিমে ৬ জন করে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। গতকাল দুপুর থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে র‌্যাব’র ডগ স্কোয়াড ও বোম ডিসপোজাল ইউনিটি বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছে। কুমিল্লাস্থ র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক মেজর মোস্তফা কায়জার বলেন, নির্বাচনে বিজিবি, পুলিশ ও আনসারের সঙ্গে র‌্যাব’র সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। তারা মূলত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ভোটের দিনও তল্লাশি চলবে। যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে র‌্যাব কঠোর হস্তে দমন করবে। কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জানান, প্রশ্নবিদ্ধ নয়, কুমিল্লায় মডেল নির্বাচন হবে। শঙ্কা দূর করে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে কুসিক এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, এলাকায় র‌্যাব পুলিশের টহল ও গাড়িতে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ নির্বাচনে ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এরমধ্যে ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে দিক-নির্দেশনা প্রদান করবে। এছাড়াও আরো ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একইভাবে তদারকির দায়িত্ব পালন করবে। কালোটাকা বিতরণসহ প্রভাব বিস্তারের ব্যাপারে কুসিকের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের ওপর শেষ দুইদিন কড়া নজরদারি করেছেন নির্বাচন কমিশন। গতকাল দুপুরে কোতয়ালি মডেল থানার একটি টিম টাকাসহ একজনকে আটক করেছে। ভোটারদের মধ্যে টাকা বিতরণের সন্দেহে তাকে আটক করে পুলিশ। এদিকে বুধবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর পুলিশ লাইনে জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন, দুপুরে নগরীর টাউন হলে র‌্যাব অধিনায়ক মেজর মোস্তফা কায়জার এবং বিকালে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আনসার-ভিডিপি’র উপ-মহাপরিচালক (অপারেশন) দীলিপ কে বিশ্বাস নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে পৃথক প্রেসব্রিফিং করেন। এর আগে ওই তিনটি সংস্থার সংশ্লিষ্ট বাহিনীর নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সদস্যদের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এ সময় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার-ভিডিপির পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রেসব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেন, যে কোন ধরনের অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। এ নির্বাচনকে ফেয়ার করতে পুলিশ শতভাগ পেশাদারিত্ব বজায় রাখবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১টি করে মোবাইল পার্টি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। এছাড়া র‌্যাব-বিজিবি-আনসারের আলাদা স্ট্রাইকিং পার্টি থাকবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে সরকারি দল বা বিরোধী দল হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, ২টি থানা এলাকায় এবং পুলিশ লাইনে স্ট্যান্ডবাই পার্টি থাকবে। র‌্যাব ডগস্কোয়াড নিয়ে টাউন হল মাঠে থাকবে। কুমিল্লায় আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মধ্যরাত থেকে আজ মধ্যরাত পর্যন্ত বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, অটোরিকশা, টেম্পো ও ইজিবাইকসহ সব যানবাহনের ওপর আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
অনিয়ম ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স
কুসিক নির্বাচনে অনিয়ম ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবে পুলিশ। গতকাল বুধবার সকালে কুমিল্লা পুলিশ লাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমাবেশে এ ঘোষণা দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের সামনে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হলে কাউকেই স্বাভাবিকভাবে যেতে দেয়া হবে না। অবশ্যই তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। পুলিশ সুপারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেছেন, কেন্দ্রে যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন তারা সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। একটিও ব্যালেট পেপার যদি কারও মাধ্যমে ছিনতাই হয় তাহলে আমাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবেই কুসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আশা করি, কুসিকের জনসাধারণ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট, পোলিং এজেন্ট, সাধারণ ভোটার এবং বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারব।
সাদা পোশাকে অভিযান ও বিশেষ বার্তা
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কুসিকের চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে মঙ্গলবার দিনভর অভিযান চালিয়েছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী এ অভিযান চালায়। কিন্তু অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয় বিএনপি। তাদের অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে যাদের নামে মামলা রয়েছে তাদেরকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে টার্গেট করেই চালানো হয়েছে এ অভিযান। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর ঘনিষ্ঠজন কাপ্তান বাজারের বাসিন্দা বাদল সরকারসহ বেশ কয়েকজনকে। নির্বাচনের একদিন আগে এমন অভিযানে কুসিক ছেড়েছেন বিএনপি ও অঙ্গদলগুলোর অনেক নেতাকর্মী। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই কিন্তু এলাকায় জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী তাদের অনেকের কাছে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনের দিন সরে থাকার বার্তা। সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা  আর এতে নির্বাচনের আগের দিন নগরীতের বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রকাশ্য তৎপরতা চোখে পড়েনি।
এসএমএস-এ তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা সহায়তা
কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল জানিয়েছেন, পর্যবেক্ষকদের সহায়তায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা তাদের কেন্দ্রের উদ্ভূত কোনো সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে এসএমএস’র (মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা) মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবেন। এছাড়া কেন্দ্রে হামলা কিংবা ব্যালট ছিনতাই কিংবা অপ্রীতিকর যে কোনো ঘটনা ঘটলে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা এসএমএসে  ইসি, রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চাইতে পারবেন। কুসিক নির্বাচনে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ভোটারদের কেন্দ্রের নাম ও ভোটার নম্বর জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যে সব ভোটার মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ১৭ ডিজিটের নম্বরটির পর পিসি লিখে ১০৫ নম্বরে পাঠাচ্ছেন তারা ফিরতি মেসেজে তার নামসহ ভোটকেন্দ্রের নাম, ভোটার নম্বর ও ক্রমিক নম্বর জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর যাদের এনআইডি নম্বর ১৩ সংখ্যার, তারা পিসি লিখে স্পেস দিয়ে প্রথমে চার ডিজিটের জন্মসালের সঙ্গে ১৩ সংখ্যার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরটি জুড়ে দিয়ে ১০৫ নম্বরে মেসেজ পাঠানোর মাধ্যমে নিজে নিজেই তথ্য জানতে পারছেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা কুসিক নতুন ভোটার হয়েছেন কিন্তু এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি তারাও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম সরবরাহ
কুসিক নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটের সরঞ্জাম পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল ১১টায় কুমিল্লা টাউন হলের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল জানান, বুধবার সকাল থেকে ব্যালট ও স্বচ্ছ বাক্সসহ নির্বাচনের আনুষঙ্গিক যাবতীয় সরঞ্জামাদি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশের পাহারায় নগরীর ১০৩টি কেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, সিল, প্যাডসহ অন্যান্য উপকরণ পাঠানো হয়।
মেয়র প্রার্থীরা কে কোথায় ভোট দেবেন
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দলের সমর্থিত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা ভোট দেবেন নগরীর নজরুল এভেনিউ এলাকার মডার্র্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোটের সমর্থিত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ভোট দেবেন নগরীর উত্তর চর্থা এলাকার নবাব হোচ্ছাম হায়দার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। জেএসডি মনোনীত তারা প্রতীকের প্রার্থী শিরিন আক্তার থিরাপুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মেজর (অব.) মামুনুর রশীদ নগরীর বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভোট দেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *