রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

কলকাতার আবেগকে যোগ্য সম্মান দিতে ট্রফি চান নাইট অধিনায়ক

Slider খেলা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

 

 

 

image

 

 

 

 

 

 

ইডেন তাঁর সেকেন্ড হোম। নাইট রাইডার্স শিবিরে যোগ দিলেন সোমবার রাতে। কলকাতার ভালবাসা ও আবেগকে সম্মান দেখাতে চান আইপিএল জিতে। দশম আইপিএল শুরু হচ্ছে ৫ এপ্রিল থেকে। আর আট দিন মতো বাকি। নতুন মরসুম, নতুন চ্যালেঞ্জ। কেকেআর অধিনায়কের কী ভাবনা? কলকাতার উড়ান ধরার আগে দুপুরের দিকে নয়াদিল্লি থেকে ফোনে আনন্দবাজার-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন গৌতম গম্ভীর।

• প্রশ্ন: আর কয়েক ঘণ্টা বাদেই কলকাতার ফ্লাইট। সামনের আইপিএল মরসুম নিয়ে কী ভাবছেন?

গৌতম গম্ভীর: প্রথমেই বলি, আমি খুবই উত্তেজিত এবং আনন্দে রয়েছি যে, কলকাতায় যাচ্ছি। গত কয়েক বছর ধরে এটাই আমার সেকেন্ড হোম হয়ে গিয়েছে। কলকাতার খেলা নিয়ে আবেগটা আমার দারুণ লাগে। এত শহরে খেলতে গিয়েছি কিন্তু এ রকম প্রাণখোলা আবেগ দেখিনি। ভিতরে ভিতরে খুব উত্তেজিত বোধ করছি যে, কলকাতার আবেগের সমুদ্রে আবার দলবল নিয়ে নেমে পড়তে যাচ্ছি।

• প্র: এ বার কলকাতা নাইট রাইডার্সের টিম কী রকম হল?

গম্ভীর: আমি তো খুবই খুশি টিম নিয়ে। আমরা ট্রেন্ট বোল্টকে পেয়েছি। ক্রিস ওক্‌স দারুণ বল করেছে ইংল্যান্ডের হয়ে ভারতে খেলতে এসে। খুব ভাল ব্যাটও করতে পারে ওক্‌স। অস্ট্রেলিয়ার নেথান কোল্টার নাইল আছে। ও আর এক জন ভাল অলরাউন্ডার। ডানহাতি ব্যাটসম্যান, ডান হাতে জোরে বল করে। ভারতীয় প্লেয়ারদের মধ্যে ঋষি ধবন আছে ভাল অলরাউন্ডার। সব মিলিয়ে এ বারে আমাদের টিম আরও ব্যালান্সড হয়েছে। শুধু খারাপ লাগছে আন্দ্রে রাসেলের জন্য। ওকে খুব মিস করব।

• প্র: রাসেল তো সাসপেন্ড। পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

গম্ভীর: হ্যাঁ, রাসেলকে আমরা এ বার পাব না। কী সব পারফরম্যান্স করেছে ছেলেটা কেকেআরের হয়ে! দুর্ধর্ষ ম্যাচউইনার। একা ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। গত কয়েক বছর ধরে ও ছিল আমাদের ফায়ার-পাওয়ার। মানে কেকেআরের গোলাবারুদ। আমাদের সাফল্যের পিছনে বিশাল অবদান রাসেলের। কিন্তু কী আর করা যাবে, নেই যখন আক্ষেপ করে বসে থাকলে তো চলবে না। রাসেলকে মিস করব কিন্তু যে রকম টিম হয়েছে তাতে ভাল ফলই হবে বলে আশা করছি।

• প্র: নাইট রাইডার্স ভক্তদের জন্য কিছু প্রমিস করবেন কি?

গম্ভীর: আমি মনে করি, কলকাতার আবেগকে আমরা কেকেআরের ক্রিকেটারেরা একটা ভাবেই সম্মান জানাতে পারি। সকলকে আইপিএল ট্রফি উপহার দিয়ে। সেই প্রমিসটাই করতে চাই।

• প্র: সেই লক্ষ্য পূরণে নাইটদের জন্য এ বারে কী কী চ্যালেঞ্জ থাকছে?

গম্ভীর: প্রত্যেক ম্যাচই চ্যালেঞ্জ। সেই পরীক্ষায় নিয়মিত ভাবে উতরোতে পারলে তবেই শৃঙ্গে পৌঁছনো সম্ভব। আর ক্রিকেটীয় দিক থেকে বলতে গেলে, এ বার ইডেনে কন্ডিশন অনেক বদলে যাচ্ছে। আগের মতো টার্নার আর পাওয়া যাবে না। আমাদের হোম পিচে এখন পেস বোলাররা বেশি সাহায্য পাচ্ছে। সেই পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। সেটা একটা নতুন চ্যালেঞ্জ অবশ্যই। আমরা প্রস্তুত।

• প্র: সেটা বুঝেই কি নিলামে বেশি করে পেসার এবং মিডিয়াম পেসার তোলার দিকে নজর দিয়েছিলেন?

গম্ভীর: একদমই তাই। সেই কারণেই ট্রেন্ট বোল্ট বা ক্রিস ওক্‌সকে আমরা লড়াই করে তুলেছি। ওদের নেওয়া হয়েছে ইডেনের পাল্টে যাওয়া পিচের কথা ভেবেই।

• প্র: পিচ নিয়ে বিতর্কের কথা শোনা যায় প্রত্যেক বার। কেকেআর চায় এক ধরনের উইকেট, সিএবি বানাচ্ছে আর এক রকম। এটা কি ঠিক? এ বারে কী প্রত্যাশা আপনার?

গম্ভীর: পিচ নিয়ে খুব বেশি ভাবার পক্ষপাতী আমি নই। কন্ডিশন তো আমাদের হাতে থাকে না, ভেবে কী লাভ! আর এ বারের একটাই প্রত্যাশা, সঠিক বাউন্সের উইকেট পাব ইডেনে। আইপিএল বা যে কোনও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অসমান বাউন্স কেউ চাইবে না। তা হলে খেলা দেখে দর্শকরাও মজা পাবেন না। টিকিট কেটে যাঁরা খেলাটা দেখতে আসবেন, তাঁদের কথা তো সবার আগে ভাবা দরকার।

• প্র: শাহরুখ খানের সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে কি নতুন মরসুম নিয়ে?

গম্ভীর: না, এখনও হয়নি।

• প্র: এ বারে কেকেআরের চমক কে জিজ্ঞেস করলে কার নাম বলবেন?

গম্ভীর: ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার কাছে স্কোয়াডের সব প্লেয়ার সমান। আলাদা করে কারও নাম বলাটা কখনওই আমার পছন্দ নয়। তবে নতুন যাদের নেওয়া হয়েছে তাদের নিয়ে জানতে চাইলে বলব, ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ছেলেটার দিকে লক্ষ রাখুন— রভম্যান পাওয়েল। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে আর ওদের দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্ধর্ষ সব পারফরম্যান্স করেছে। হার্ডহিটার আর জোরে বল করে। আমি ওর খেলার ভিডিও ক্লিপিংস দেখে খুবই উত্তেজিত। আমার মনে হয় নতুন আন্দ্রে রাসেল হওয়ার রসদ আছে ছেলেটার মধ্যে। অনেক আশা করেই ওকে নেওয়া হয়েছে। এ বার দেখা যাক কেমন পারফর্ম করতে পারে।

• প্র: নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক হিসেবে এটা দেখলে কি আলাদা একটা তৃপ্তি পান যে, নতুন নতুন ছেলেদের তুলে আনা যাচ্ছে। যেমন রাসেল, যেমন কুলদীপ যাদব।

গম্ভীর: আইপিএল মানেই তো তাই। নতুন ছেলেদের ছুড়ে দেওয়ার মঞ্চ। এখানে চোখে পড়ে যাতে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। সে রকমই তো হওয়া উচিত। তরুণ রক্তকে তুলে আনার টুর্নামেন্ট।

• প্র: শোনা যায় চায়নাম্যান কুলদীপকে আপনি প্রথম স্পট করে খেলাতে চেয়েছিলেন। তখনও তাঁর কথা কেউ ভাবেনি কেকেআরে।

গম্ভীর: কুলদীপ দারুণ বল করেছে। ওকে কৃতিত্ব দিন। আমি ক্রেডিট নিতে চাই না। নাইট রাইডার্সে আসার আগে ও ভারতের অনূর্ধ্ব উনিশ দলের হয়ে খেলেছিল। তখনই  বুঝিয়ে দিতে পেরেছিল যে, ও আলাদা প্রতিভা। সেটা দেখেই আমরা নিয়েছিলাম। তার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পার্‌থ স্কর্চার্সের বিরুদ্ধে দারুণ বল করে তিন উইকেট নিল। সেটাই ওকে বড় ব্রেক দিয়েছিল। কিন্তু আমি একটা কথা বলছি। কুলদীপ নিজেই খুব প্রতিভাবান। চোখে পড়তই।

• প্র: কুলদীপের কোন গুণটা আপনাকে সবচেয়ে প্রভাবিত করে?

গম্ভীর: অধিনায়ক হিসেবে আমি খুব উচ্ছ্বসিত থেকেছি কুলদীপের বোলিং নিয়ে। ছেলেটার মানসিকতাটা আমার দারুণ লাগে। ভীষণ সাহসী। আইপিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। স্পিনারদের জন্য খুবই কঠিন ফর্ম্যাট। একটু ওপরে বল দিলেই তো মার খেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবু কুলদীপকে কখনও ভয় পেতে দেখিনি। ওপরে ওপরে বল করে যেত। আইপিএলে অনেক সেরা স্পিনারদেরও আমি দেখেছি, ফ্লাইট করাতে ভয় পাচ্ছে। মার খাওয়ার ভয়ে টেনে টেনে বল করে দেয় অনেকে। কুলদীপ ওদের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট হলেও কখনও এটা করতে দেখিনি। স্পিনার হয়েও ওর মধ্যে ভয়ডরহীন একটা মানসিকতা আছে। সেটা দেখেই আমি মুগ্ধ।

• প্র: কুলদীপ চায়নাম্যান স্পিনার। খুবই কঠিন শিল্প এটা। কত দূর যেতে পারবেন? মনে হয় ভারতীয় ক্রিকেট লম্বা রেসের ঘোড়া পেয়েছে?

গম্ভীর: আমার একটা অনুরোধ— এখনই বেশি দূরের ভাবনা নিয়ে কথা বলে অহেতুক যেন কুলদীপের ওপর চাপ বাড়িয়ে না দেওয়া হয়। ওকে এখন ওর মতো খেলতে দেওয়া উচিত। কুলদীপ দেখিয়েছে ও টেস্টের মঞ্চেও সাফল্য পেতে পারে। এখনই বেশি কথা বলে ওর ফোকাসটা নাড়িয়ে দিলে ক্ষতি হতে পারে।

• প্র: কেকেআরের আসল বিস্ময় স্পিনার সুনীল নারাইনকে নিয়ে আপডেট কী?

গম্ভীর: নারাইন আসছে। আমরা সকলে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকে। কেকেআর টিমের জন্য বরাবরই নারাইন বিরাট পারফর্মার। দুর্দান্ত ম্যাচউইনার। এ বারও সেই ভূমিকায় ওকে দেখার আশায় রয়েছি সকলে।

• প্র: মাঝে ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিলেন। এখন আবার বাইরে। নিজের জন্য দশম আইপিএলে কী লক্ষ্য রাখছেন কেকেআর অধিনায়ক?

গম্ভীর: আমি এখন ভারতীয় দলের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে চাই না। এখন আমার চিন্তায় শুধুই আইপিএল এবং কেকেআরের হয়ে ভাল করা। ট্রফি জেতা। তার জন্য কেকেআর অধিনায়কের যা যা করণীয়, সব কিছু করতে প্রস্তুত। যদি একশো শতাংশতে না হয়, দেড়শো ভাগ দেব, দু’শো ভাগ দেব। এখন চিন্তায় শুধু আইপিএল এবং আইপিএল। ইডেনের সেই তাতিয়ে দেওয়া গর্জনটা বেশ শুনতে পাচ্ছি— কে…কে…আর…। কে…কে…আর…।সূত্র :: আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *