কক্সবাজার সাগর পাড়ের নাজিরারটেকে এখন শুঁটকি উৎপাদনের ধুম। নাজিরারটেক শুঁটকি মহালটি শুঁটকি তৈরির জন্য দেশ-বিদেশে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০ ট্রাকের মতো শুঁটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করা হয় এ শুঁটকি মহাল থেকে। শীতের শুরুতে কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত এখন হাজার হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিকদের বেশির ভাগই নারী। বর্ষা শেষে গত অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ। আগামী মে মাস পর্যন্ত এ শুঁটকি উৎপাদনের কাজ চলবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দরের পশ্চিমে সাগর তীরের নাজিরারটেক নামক এলাকায় ৫০টিরও অধিক মহালে শুঁটকি উৎপাদনের এ কাজ চলছে। গভীর সাগর থেকে জেলেরা মাছ ধরে নাজিরারটেক ও ফদনারডেইল এলাকার শুঁটকি মহালের ঘাটে ভেড়ান। ব্যবসায়ীরা সেই মাছ কিনে শুঁটকি তৈরির জন্য বাঁশের তৈরি মাচায় তুলে দেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই লইট্যা, ছুরি, পোপা, মাইট্যা, কামিলা, ফাইস্যা, রূপচান্দাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ।
শুঁটকি মহালের শ্রমিক হেলাল উদ্দিন বলেন, শীতের শুরুতেই শুঁটকি উৎপাদনের মৌসুম শুরু হয়। বর্তমানে শুঁটকিপল্লীতে চলছে দারুণ ব্যস্ততা। রাত-দিন সমান তালে চলছে শুঁটকি উৎপাদনের এ প্রক্রিয়া। ব্যবসায়ী ছাড়াও অনেক পর্যটক সরাসরি এখান থেকে শুঁটকি কিনে নেন। যার কদর রয়েছে দেশব্যাপী। কক্সবাজার সৈকত এলাকার পাইকারি শুঁটকি ব্যবসায়ী আবদুর রহমান জানান, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণ শুঁটকি। তারা শুঁটকি না কিনে ফিরে যান না। এক কেজি হলেও শুঁটকি নিয়ে কক্সবাজার ত্যাগ করেন ভ্রমণে আসা পর্যটকরা। তবে পুরনো শুঁটকির তুলনায় নতুন শুঁটকির দাম প্রতিকেজিতে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি।
নাজিরারটেক মৎস্য বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি শাহাদাত উল্লাহ জানান, সাগর পাড়ের অর্ধশতাধিক মহালে শুঁটকি উৎপাদন প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে প্রতিকেজি ছুরি শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা, রূপচান্দা ৯০০ থেকে দুই হাজার, মাইট্যা ৬০০ থেকে এক হাজার ৭০০, লইট্যা ৪০০ থেকে ৮০০, কোরাল ৮০০ থেকে এক হাজার ৪০০, পোপা ৪০০ থেকে ৮০০, চিংড়ি এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য ছোট মাছ ২০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল থেকে একদিনে ৩০-৪০ ট্রাক শুঁটকি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে। তারা জীবিকা নির্বাহ করে শুঁটকি উৎপাদনের মাধ্যমে। যার বেশির ভাগই নারী শ্রমিক। তিনি বলেন, শুঁটকি উৎপাদনের জন্য কক্সবাজারের নাজিরারটেক এলাকাটি দেশ-বিদেশে পরিচিত। এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ছে। কিন্তু এলাকাটিতে যাতায়াতব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় শুঁটকি রপ্তানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাটের উন্নতি হলে রপ্তানির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।