বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় সব সময় পাশে থাকবে যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিকেরা দলমত-নির্বিশেষে এই ঘোষণা দিয়েছেন।
স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার হাউস অব কমন্সের ট্যারেজ প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের অনুষ্ঠান হয়। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টি, বিরোধী দল লেবার পার্টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ও স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির অর্ধশতাধিক এমপি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন এমপি।
অনুষ্ঠানে লন্ডন ও বাংলাদেশের সিলেটে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বক্তারা বলেন, গণতন্ত্র কখনো সন্ত্রাসবাদের কাছে হার মানতে পারে না।
ব্রিটিশ এমপিরা বলেন, কয়েক দিন আগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এই পার্লামেন্টেই তাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন। সন্ত্রাসী হামলায় এক মুহূর্তের জন্যও গণতন্ত্র থেমে থাকেনি।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কোনো একজন এমপির অনুষ্ঠান হোস্ট করতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানটি হোস্ট করেন লেবার দলীয় এমপি জিম ফিটসজ পেট্রিক। সূচনা বক্তব্যে সবাইকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান তিনি। বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ এমপি হাজির হয়েছেন, অন্য কোনো অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমনটি আর ঘটেনি।
লেবার পার্টির ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমিলি থর্নব্যারি বলেন, ব্রিটেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। সেই সঙ্গে ব্রিটেন গত ৪৬ বছর ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের ভালো বন্ধু। বিষয়টি ভেবে তাঁর বেশ ভালো লাগছে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্রিটেন সব সময় পাশে থাকবে।
ব্রিটিশ সংসদের বাংলাদেশবিষয়ক সর্বদলীয় কমিটির চেয়ার অ্যান মেইন এমপি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন।
অ্যান মেইন বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের কাছে গণতন্ত্র কখনো হার মানবে না।’
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুপা হক বলেন, বয়সে বেশ কনিষ্ঠ বাংলাদেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ব্রিকস জোটে বাংলাদেশ দ্রুত যুক্ত হবে বলে আশা করেন তিনি।
পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের এমপি রুশনারা আলী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। অনেক সংগ্রামের পর স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ। এসব মানুষের আত্মত্যাগের কথা মনে রাখার জন্য এ ধরনের আয়োজন অত্যন্ত জরুরি।
রুশনারা আলী বলেন, ‘ব্রিটিশ এমপি হিসেবে আমরা যেকোনো দলের সঙ্গে কাজ করি। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করছি। অন্যান্য দলের সঙ্গেও কাজ করছি। বাংলাদেশের মানুষের অগ্রগতি ও সাফল্যই আমাদের অগ্রাধিকার।’
উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে হ্যাম্পটেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, সন্ত্রাসীরা কখনো মুসলিম বা ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। তাদের পরিচয় কেবলই সন্ত্রাসী।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা নিয়ে দুটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আয়োজনে ছিল দেশাত্মবোধক গানে সৌমি দাশের একক নৃত্য পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ এমপিদের হাতে উপহারের ব্যাগ তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা নিয়ে একটি স্মরণিকা বের করে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য ব্রিটিশ এমপিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এল্যান মিল, জনাথন অ্যাশওয়ার্থ, টম ব্লেইক, পল স্কালি, স্টিফেন টিমস, লিজ কেন্ডাল, কারেন বাক, অ্যাঞ্জেলা রায়নার, নাজ শাহ, চি ওনওয়ারা, টমি শেফার্ড, ওয়েস স্ট্রেটিং, কেলভিন হপকিন্স, মাইক গেইভস, কেভিন জন্স, এমা লুয়েল বাক প্রমুখ।