ঢাকা : নগরবাসীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া ও মেস সদস্যদের তথ্য নিবন্ধনের লক্ষ্যে বৃহৎ পরিসরে কার্যক্রম শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। পহেলা সেপ্টেম্বর’১৬ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম সর্বপ্রথম রমনা থানা থেকে সফটওয়্যার ভিত্তিক ডাটাবেজ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে এ যাবত পর্যন্ত প্রায় ১৪,৬৫,২৪৯ টি পরিবারের নিবন্ধন ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখের ওপরে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া ব্যক্তি নিরাপত্তা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে ঢাকা মহানগরীতে বসবাসরত সকল নাগরিককে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে সহায়তা করা নৈতিক দায়িত্ব।
কিভাবে করা যাবে নিবন্ধন :
ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত নিবন্ধন ফরমটি মহানগরীর প্রত্যেকটি থানা এবং ফাঁড়িতে পাওয়া যাবে। যদি কোন নাগরিক ইচ্ছে করেন তাহলে থানা অথবা ফাঁড়ি থেকে ফরমটি সংগ্রহ করে পরবর্তীতে ফরমটি যথাযথভাবে পূরণ করে থানায় জমা দেওয়ার পূর্বে ফটোকপি নিজের কাছে রেখে দেওয়া উত্তম।
ঢাকা মহানগরীর প্রত্যেকটি থানা এলাকাকে ৫/৭ টি বিটে ভাগ করা হয়েছে। এভাবে ডিএমপি’র ৪৯ টি থানায় মোট ২৮৭টি বিট রয়েছে। কোন নির্দিষ্ট এলাকা একটি বিট নম্বর দিয়ে সেই এলাকার বিটে বসবাসরত জনগণের অধিকতর পুলিশি সেবা প্রদানের জন্য কয়েকজন এসআই এবং এএসআইসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি বিট অফিসারের একটি সরকারী মোবাইল নম্বর আছে। যে কোন নাগরিক পুলিশি সেবা পাওয়ার প্রয়োজন মনে করলে অফিসার ইনচার্জের সাথে যোগাযোগ ছাড়াও বিট অফিসারের উক্ত নম্বরে ফোন দিয়ে কাঙ্খিত সেবা পেতে পারেন। প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে হবে। ঠিকানা পরিবর্তণ করলে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করে নতুন করে ঢাকা মহানগরীর যে থানা এলাকায় বসবাস করবে সেই থানায় যোগাযোগ করে নিবন্ধন ফরম পূরণের কাজটি করতে হবে। কোন ব্যক্তির কর্মক্ষেত্র অন্য থানা এলাকায় হলে, তিনি যে থানা এলাকায় বসবাস করেন সেই থানায় নিবন্ধনের কাজটি করা উত্তম।
নিবন্ধিত হলে বাড়িওয়ালার সুবিধা
১। কোন অপরাধী বাড়িওয়ালার বাড়িতে অবস্থান করতে পারবে না।
২। ভাড়াটিয়ার কোন অপরাধে বাড়িওয়ালা অহেতুক হয়রানি হবে না।
৩। বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াকে নিবন্ধনের সকল তথ্য পূরণ করে দিতে বলা মাত্রই অপরাধী হলে ফরম পূরণে গড়িমসি করবে। অপরাধী হলে ফরম পূরণ না করে পরের মাসেই চলে যাবে।
৪। কোন অপরাধী সকল তথ্য লিখিতভাবে পুলিশের নিকট জমা দিয়ে অপরাধ করতে সাহসবোধ করবে না।
৫। বাড়িওয়ালার সাথে বিট অফিসারের ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকায় যে কোন আইনগত বিষয়ে প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করা সম্ভব।
৬। বাড়িওয়ালা তার ভাড়াটিয়া সম্পর্কে নিবন্ধন ফরমটি পুলিশের নিকট উপস্থাপন করতে পারলে অপরাধীদের দায় তখন বাড়িওয়ালার উপর বর্তায়না।
নিবন্ধিত হলে ভাড়াটিয়ার সুবিধাসমূহ
১। থানা এলাকায় বসবাস করায় সংশ্লিষ্ট থানার বিট অফিসারের সাথে পরিচিত হওয়া সম্ভব।
২। অন্য কোন শত্রুপক্ষ বাংলাদেশের যে কোন থানায় মিথ্যা মামলা করলে উক্ত ব্যক্তির ঢাকার অবস্থান দ্বারা প্রমাণ করা যায় ঘটনাটি মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
৩। গভীর রাতে ঢাকা শহরে চলাফেরায় বিট অফিসারের সাথে পরিচিত থাকায় অহেতুক পুলিশ হয়রানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৪। ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফরম থানায় জমা থাকলে সফওয়ার ভিত্তিক ডাটাবেজ সংরক্ষণ করার ফলে একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে যে কোন সময় যে কোন ব্যক্তির পরিচিতি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।
৫। নিবন্ধন ফরম সংক্রান্তে বিট অফিসারের সাতে পরিচিত থাকায় বিভিন্ন সমস্যায় আইনগত পুলিশি সেবা গ্রহণ সম্ভব।
অপরাধী সনাক্তকরণে পুলিশের সুবিধাসমূহ
১। অপরাধ সংঘটন করে কোন ভাড়াটিয়া পালিয়ে গেলে তার নিবন্ধন ফরম ডাটাবেজ থেকে সংগ্রহ করে পরিচয় বের করে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
২। যে কোন সন্ধিগ্ধ ব্যক্তির জিজ্ঞাসাবাদ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সহিত নিবন্ধন ফরমে দেওয়া তথ্যের সহিত মিল না থাকলে বুঝা যাবে লোকটি মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। তখন পুলিশের আরও গভীরভাবে জিজ্ঞাসবাদের সুযোগ থাকে।
৩। বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার নিবন্ধন ফরম পূরণ এবং জমা দেওয়া কার্যক্রমে পুলিশ জনগণের কাছে যাওয়ায় পুলিশের সাথে জনগণের সুসম্পর্ক সৃষ্টির সুযোগ তৈরী হয়।
৪। নিবন্ধন ফরমে উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্যের মধ্যে কোন না কোন তথ্য থেকে অপরাধী ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।
৫। ঢাকা মহানগরে বসবাসরত সকল নাগরিকের তথ্য পুলিশের ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা থাকলে মানুষের অপরাধ করার প্রবণতা কমবে।
৬। নিবন্ধন ফরম পূরণ করে থানায় জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলে জঙ্গী, প্রতারকচক্রসহ যে কোন অপরাধী একই জায়গায় বসবাস করতে পারবে না।
৭। বিট পুলিশের মাধ্যমে নিবন্ধন ফরম দেয়া ও জমা নেয়ার কার্যক্রমের ফলে থানা এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে, মহল্লায় পুলিশের উপস্থিতির কারণে জুয়া মাদকসহ অন্যান্য অপরাধের প্রবণতা কমে আসবে।
পরিশেষে বলা যায়-বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম একটি চলমান পক্রিয়া। CIMS (citizen information management system) এ তথ্য সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন হলে ঢাকা মহানগরীর নাগরিক নিরাপত্তায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। এর ফলে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর অপরাধীকে দ্রুত সনাক্ত করা এবং আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। গৃহীত এ পদক্ষেপ সম্মানিত নগরবাসীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করবে।