মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যগামী ফ্লাইটে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাবিশ্ব

58398_heathrow-airport

 

 

 

 

 

ল্যাপটপ বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে বিস্ফোরক লুকিয়ে ভয়াবহ হামলার পরিকল্পনা করেছে আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলো। এর মধ্যে রয়েছে আল কাযেদা ইন দ্য এরাবিয়ান পেনিনসুলা ও ইসলামিসনট আল শাবাব। তারা ল্যাপটপ, ট্যাবলেটের ব্যাটারি বা ব্যাটারি রাখার স্থানে এমন ইলেক্ট্রনিক বিস্ফোরক রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে, যা বোমা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এ আতঙ্কে কাঁপছে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এরই মধ্যে মুসলিম প্রধান মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বা যুক্তরাজ্যমুখী বিমানে ল্যাপটপ, ট্যাব, বড় আকারের ইলেক্ট্রনিক পণ্য বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সোমবার দিনের শেষের দিকে এমন ঘোষণা দেয়। তাতে বলা হয় জর্ডান, মিশর, তুরস্ক, সৌদি আরব, কুয়েত, মরক্কো, কাতার, সৌদি আরব, দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানগুলোতে ওইসব ইলেক্ট্রনিক পণ্য বহন নিষিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের পর বৃটেন বা যুক্তরাজ্যগামী বেশ কিছু ফ্লাইটে এ ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে ৬ টি দেশ থেকে বৃটেনে আসা ফ্লাইটের ওপর।  দেশগুলো হলো তুরস্ক, লেবানন, জর্ডান, মিশর, তিউনিশিয়া ও সৌদি আরব। বলা হয়েছে এসব দেশ থেকে সরাসরি বৃটেনগামী ফ্লাইটে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ফোন একটি সুনির্দিষ্ট আকৃতির ওপরে গেলেই তা কেবিন লাগেজে বহন করা যাবে না। বলা হয়েছে ১৬ সেন্টিমিটার বাই ৯.৩ সেন্টিমিটার বাই ১.৫ সেন্টিমিটার আকৃতির স্মার্টফোনের চেয়ে আকৃতিতে বড় হলেই ইলেক্টনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ হবে এসব ফ্লাইটে। তবে অ্যাপল আইফোন ৭ প্লাস আকৃতিতে একটু বড় হলেও তা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান চলাচল নিরাপত্তা বিষয়ক বেশ কয়েকটি মিটিংয়ের পর বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে বৃটেনের জন্য ওই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। সিএনএন লিখেছে, গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন ল্যাপটপের ব্যাটারি সহ বিভিন্ন অংশ ও বাণিজ্যিক বিভিন্ন ইলেক্ট্রলিক পণ্য বোমায় পরিণত করে তা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করছে আল কাযেদা ইন দ্য এরাবিয়ান পেনিনসুলা। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যগামী ফ্লাইটগুলোতে এমন হামলা চালানো হতে পারে। তাই এ দুটি দেশ এসব ফ্লাইটে ওইসব ইলেক্ট্রনিক পণ্য বহন নিষিদ্ধ করেছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে নতুন করে বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিষয়ক বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আটটি দেশ থেকে উড্ডয়ন করে এমন ফ্লাইটগুলোতে স্মার্টফোনের চেয়ে বড় কোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বা পণ্য বহন করা যাবে না। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়। তারপর বেসামরিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে কঠিন নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাতে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর ১০টি বিমানবন্দর থেকে দিনে ছেড়ে যাওয়া ৫০টিরও বেশি ফ্লাইট আক্রান্ত হবে। এর মধ্যে রয়েছে দুবাই ও ইস্তাম্বুল। এ নির্দেশ যেসব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রযোজ্য হবে তা হলো কায়রো, দুবাই, আবু ধাবি, ইস্তাম্বুল, দোহা, আম্মান, কুয়েত সিটি, কাসাব্লাঙ্কা, জেদ্দা, রিয়াদ। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৯টি বিমান সংস্থাকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোর ৩টায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদেরকে পরবর্তী ৯৬ ঘন্টার মধ্যে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। ওদিকে যুক্তরাজ্য বা বৃটেন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মুসলিম ৬টি দেশের ফ্লাইটগুলোতে এমন পণ্য বহন করার ক্ষেত্রে। এতে দুটি দেশ রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের তালিকায় নেই। এ দেশ দু’টি হলো তিউনিশিয়া ও লেবানন। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে এমিরেটস এয়ারলাইন, কাতার এয়ারওয়েজ, বৃটিশ এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, ইজিপ্ট এয়ার, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়ারওয়েজ, রয়েল এয়ার মারোক, রয়েল জর্ডানিয়ান এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স। এমিরেটস, ইতিহাদ, রয়েল এয়ার মারোক জানিয়ে দিয়েছে তারা শনিবার থেকে এ নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সিএনএন’কে বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো বাণিজ্যিক বেসামরিক বিমানকে টার্গেট করছে। তারা এসব ফ্লাইটে বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে বিস্ফোরক বহন করে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছে। উল্লেখ্য, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে একটি ল্যাপটপের ভিতর লুকিয়ে বোমা বহন করা হয়েছিল ডালো এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে। তারপর সেটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। এতে হামলাকারী নিহত হয়েছিল। তবে বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়। তবে সর্বশেষ সতর্কবার্তা বা বিধিনিষেধে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে বেসামরিক বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে। তারা জানতে চাইছে কেন এত তড়িঘড়ি করে এ নিষেধাজ্ঞা?  তাহলে কি অবিলম্বে এমন হামলা হতে যাচ্ছে? যদি তা-ই না হয় তাহলে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে কেন ৯৬ ঘন্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে? কিন্তু জবাবে নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকান দলের রিপ্রেজেন্টেটিভ জন কাতকো বলেছেন, এটা যে একটি সঠিক উদ্যোগ এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বাসযোগ্য ও বিদ্যমান গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ওদিকে স্কাই নিউজ বলেছে, ১০ ডাউনিং স্টিট বলেছে, নিরাপত্তা বিষয়ক এ পদক্ষেপ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে দু’একদিন সময় লাগতে পারে। উল্লেখ্য, এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় যেসব ফ্লাইট পড়তে যাচ্ছে তা হলো বৃটিশ এয়ারওয়েজ, ইজি জেট, জেট ২ ডট কম, মোনার্ক, থমাস কুক অ্যান্ড থমসন। এক্ষেত্রে বিদেশী যেসব ফ্লাইট আক্রান্ত হবে তার মধ্যে রয়েছে টার্কিশ এয়ারলাইন্স, পেগাসাস এয়ারওয়েজ, এটলাস-গ্লোবাল এয়ারলাইন্স, মিডল ইস্ট এয়ারলাইন্স, ইজিপ্ট এয়ার, রয়েল জর্ডানিয়ান, তিউনিস এয়ার ও সাউদিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *