ভারতীয় বোর্ড কর্তা বনাম সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত ভারতীয় বোর্ডের পর্যবেক্ষকদের দল। মাঠের ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার মতোই দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে মাঠের বাইরে প্রশাসকদের এই লড়াই।
অধিনায়ক হিসেবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এক সময় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাঠের মধ্যে ভারতীয় লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এখন ভারত-অস্ট্রেলিয়া এমন হাই প্রেশার সিরিজ চলার মধ্যে প্রশাসক সৌরভ জড়িয়ে রয়েছেন মাঠের বাইরের তীব্র যুদ্ধে।
বোর্ডের পর্যবেক্ষক দল অর্থাৎ কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স চেয়েছিল সৌরভকে আইপিএলের নতুন কমিটিতে সর্বোচ্চ পদে রাখতে। বিনোদ রাই, ডায়না এডুলজিদের সেই প্রস্তাব সৌরভ নাকচ করে দিয়েছেন। যোগাযোগ করা হলে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সোমবার স্বীকার করে নেন এমন প্রস্তাবের কথা। তিনি যে সেই পদ গ্রহণ করছেন না, তা-ও অস্বীকার করেননি প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক।
তবে আইপিএল পদের প্রস্তাব নিয়ে বেশি মুখ না খুলতে চাইলেও সৌরভ জানাচ্ছেন, জুনে ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কমেন্ট্রি করতে যাচ্ছেন তিনি। ইংরেজি, হিন্দি দু’টোতেই ধারাভাষ্য দেবেন। যা তাঁর কমেন্ট্রির ভক্তদের জন্য অবশ্যই সুখবর।
অভিষেকের প্রিয় লর্ডসে বসে কমেন্ট্রি করার অবশ্য এখনও দেরি আছে। আপাতত প্রশাসনিক লড়াইয়ে এসপার-ওসপার করার লগ্ন উপস্থিত। বোর্ড সূত্রে খবর, আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল ভেঙে দিয়ে নতুন একটি কমিটি গড়তে চলেছে পর্যবেক্ষক দল। খুব সম্ভবত সেই কমিটির নামকরণ হবে আইপিএল টেকনিক্যাল কমিটি। এই কমিটিরই চেয়ারম্যান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সৌরভকে। বোর্ডের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন সৌরভ। আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যও ছিলেন।
ওদিকে পর্যবেক্ষকদের দলের সঙ্গে বোর্ডের কর্তাদের এখন নানা ব্যাপার নিয়ে তীব্র লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই যুদ্ধে সৌরভ বোর্ড কর্তাদের একজন হয়ে পর্যবেক্ষকদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তাঁর পরিচালনায় সিএবি পর্যবেক্ষকদের পাঠানো নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করেছে।
ঘনিষ্ঠ মহলে সৌরভ বলেছেন, এক দিকে তিনি পর্যবেক্ষকদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবেন, তাঁদের পাঠানো ই-মেলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন, আবার তাঁদের প্রস্তাবিত পদ গ্রহণ করবেন— দু’টো দিক এক সঙ্গে হয় না। সেই কারণেই আইপিএলের উচ্চ পদ নিয়ে পর্যবেক্ষকদের পাঠানো প্রস্তাব তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।
পর্যবেক্ষক বনাম সৌরভদের লড়াই আরও তিক্ত হয়ে পড়েছে গত শনিবার রাত থেকে। যখন নজিরবিহীন ভাবে কর্তারা নতুন গঠনতন্ত্র ঝুলিয়ে দিলেন বোর্ডের ওয়েবসাইটে। তাতে লোঢা কমিটির সমস্ত সুপারিশ অনুযায়ী আমূল পাল্টে ফেলা হয়েছে ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর হচ্ছে, মুম্বই ভোটিং অধিকার হারিয়েছে। মহারাষ্ট্র বা অন্য যে কোনও রাজ্য থেকে প্রত্যেক বছর একটি করে সংস্থারই ভোটাধিকার থাকবে। মহারাষ্ট্রে বোর্ডের অনুমোদিত সংস্থার সংখ্যা তিন। মুম্বই, বিদর্ভ, মহারাষ্ট্র। আগের নিয়ম অনুযায়ী, বোর্ড নির্বাচনে তিনটি রাজ্যই ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ ভোটার।
এ বার থেকে সেই নিয়ম পাল্টে যাচ্ছে। মহারাষ্ট্র যদি এ বার পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা পায়, তাদেরই ভোটাধিকার থাকবে। মুম্বই এবং বিদর্ভকে অ্যাসোসিয়েট সদস্য হয়ে থাকতে হবে। যা নিয়ে মুম্বইয়ের ক্রিকেট মহল সরব। বলা হচ্ছে, মুম্বই ৪১ বার রঞ্জি জিতেছে। ভারতকে ৭২ জন টেস্ট ক্রিকেটার উপহার দিয়েছে। তারা অ্যাসোসিয়েট সদস্য হবে আর ক্রিকেট ইতিহাস না থাকা মণিপুর বা মেঘালয় পাবে পূর্ণ সদস্যের সম্মান— এটাই বা কেমন বিচার হতে যাচ্ছে?
আপাতত যদিও পর্যবেক্ষকের দল কোনও বিদ্রোহে কর্ণপাত করতে নারাজ। তারা বোর্ডের ওয়েবসাইটে অনুমোদিত রাজ্য সংস্থার তালিকা ঝুলিয়ে দিয়েছে। তাতে পূর্ণ সদস্যের মধ্যে নেই মুম্বই। পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, যে রাজ্য সংস্থা লোঢা সুপারিশ অনুযায়ী তৈরি গঠনতন্ত্র মানবে না তাদের অনুমোদন বাতিল করা হবে।
এই অবস্থায় অনেকের মনে হচ্ছে, আসন্ন আইপিএল থেকেই পুরনো কর্তারা কেউ যদি না থাকেন, বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য আছে আটটি হোম। কারও কারও আশঙ্কা, এই আটটি কেন্দ্রে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক বসিয়ে দিতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবে পর্যবেক্ষকের দল। এমনকী, ইডেনেও যদি দেখা যায় কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাচ পরিচালনার জন্য সৌরভের মতো তারকা প্রাক্তন ক্রিকেটারের মাথার ওপরেও পর্যবেক্ষক বসিয়ে দেওয়ার জোরাল চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে, তা হলেও চমকে ওঠার কিছু থাকবে না।
সে রকম ঘটলে সৌরভ নিজেও কি খুব অবাক হবেন? মনে হয় না!
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা