ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে বিতর্কের ঝড় চলার সময় তিনি চুপচাপ! অনেক চেষ্টার পরে মাঙ্কিগেটের সঙ্গে জড়িত অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস-কে শুক্রবার যখন ফোনে পাওয়া গেল, তখন তিনি কুইন্সল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব উপকুল শহর টাউন্সভিলে ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত। তার মধ্যেই আনন্দবাজার-এর ফোন ধরলেন।
প্রশ্ন: মাঙ্কিগেটের পরে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ফের এত বড় একটা কাণ্ড হয়ে গেল, আপনি কোনও কথাই বলছেন না?
সাইমন্ডস: আর একটা কাণ্ড হল বুঝি? কই, আমি তো জানি না।
প্র: সে কী? কয়েক দিন ধরে আপনাদের দেশের মিডিয়ায় তো ডিআরএস কাণ্ড নিয়ে ঝড় উঠে গিয়েছিল। আপনি কি কাগজ-টাগজ দেখেন না?
সাইমন্ডস: ও, এই কাণ্ডের কথা বলছেন? এ আর এমন কী?
প্র: কিছুই না! দুই দলের ক্যাপ্টেন একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে যাচ্ছেন। সিরিজের উত্তাপ বেড়েই চলেছে। একে আপনি কোনও কাণ্ডই বলবেন না?
সাইমন্ডস: আট বছর আগে সিডনিতে যেটা হয়েছিল, তাতে আরও বেশি আগুন জ্বলেছিল। মিডিয়ায় আরও বেশি হইচই হয়েছিল। এ বার তো সেই তুলনায় কিছুই হয়নি। সব মিটামাট হয়ে গিয়েছে। এখন তো সবাই লক্ষ্মী ছেলের মতো খেলছে।
প্র: আপনার কি এটা পছন্দ হচ্ছে না?
সাইমন্ডস: যাঃ বাবা। আমার পছন্দ বা অপছন্দে কী এসে যায়?
প্র: কিন্তু স্টিভ স্মিথ আর বিরাট কোহালির মাঠের বাইরের এই যুদ্ধ নিয়ে আপনি এত চুপচাপ কেন?
সাইমন্ডস: আমাকে কেউ কিছু বলতেই বলেনি, তাই। হা.. হা.. হা.. হা..। আপনিই তো প্রথম ফোন করলেন। তাও আবার ভারত থেকে (আবার হাসি)।
প্র: অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া থেকে আপনাকে কেউ ফোন করেনি?
সাইমন্ডস: সেটাই তো বলছি, বিশ্বাস হচ্ছে না?
প্র: এই ঘটনাটা নিয়ে আপনি কী ভাবছেন, সেটা জানতে চাই।
সাইমন্ডস: আমি আর কী ভাবব? আমাদের ক্যাপ্টেন যে হঠাৎ করে বলে বসল, ওর মাথা কাজ করেনি, সেটা যে কত বড় ভুল, ও অনেক বছর পরে বুঝবে। যখন ক্রিকেট ছাড়ার পর লোকে ওকে ছিঃ ছিঃ করবে।
প্র: কেন? স্মিথের দোষ কোথায়? সত্যি কথাই তো বলেছেন।
সাইমন্ডস: যুদ্ধে নেমে সব সময় সত্যিটা বলা যায় না। জানেন না, ভালবাসা ও যুদ্ধে কিছুই অন্যায় নয়। পরিস্থিতি বুঝে বলতে হয়। স্মিথের তখন বলা উচিত ছিল, ‘আমি ড্রেসিংরুমের দিকে তাকাইনি, গ্যালারির দিকে তাকিয়েছিলাম।’ ব্যস, ঝামেলা মিটে গেল। হা.. হা..।
প্র: ব্যাপারটা কি অতই সোজা? আপনি মজা করছেন না তো? আম্পায়ারও তো স্মিথের দিকে ছুটে এসেছিলেন ওকে বারণ করতে। তার পরেও কী করে অস্বীকার করবেন?
সাইমন্ডস: আমি হলে তাই করতাম। তাতে বিতর্কটা বাড়ত না।
প্র: মাঙ্কিগেটের সময়ও কি আপনি সত্যি কথা বলেননি?
সাইমন্ডস: আমি এখনও বিশ্বাস করি, যেটা আমার কানে এসেছিল, আমি সেটাই বলেছিলাম। সেটা সত্যি কি মিথ্যা, জানি না।
প্র: তা হলে আপনি কি বলতে চান, স্মিথ ভুল করেছে?
সাইমন্ডস: ‘টিট ফর ট্যাট’ কথাটা শুনেছেন তো? স্মিথের সেটাই করা উচিত ছিল। ভারতে গিয়ে অনেক মেপে কথা বলতে হয়। কোন কথার কী প্রতিক্রিয়া হবে, সেটা ভেবে কথা বলতে হয়। স্মিথেরও ভাবা উচিত ছিল।
প্র: কেন বলছেন মেপে কথা বলতে হয় ভারতে?
সাইমন্ডস: কেন আবার, আপনাদের জন্য। ভারতের মিডিয়া তিলকে তাল করতে ওস্তাদ।
প্র: আপনাদের দেশের মিডিয়া নয়? এই যে রাঁচীর পিচ নিয়ে তুমুল হইচই শুরু করে দিল অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া, এই নিয়ে বলছেন না যে? পিচ তো দেখা যাচ্ছে ভালই।
সাইমন্ডস: কোথায় ভাল? সবে তো টেস্ট শুরু হল। দেখুন বাকি চার দিনে কী হয়, তার পর তো পিচ ভাল না মন্দ সেটা বলবেন। পুণে, বেঙ্গালুরুর পিচ ভাল ছিল? রাঁচীর পিচও ভাল নয়। যখন বল ঘোরা শুরু করবে, তখন কেলেঙ্কারি হবে। এই সব উইকেটেও যে আমাদের ছেলেরা ভাল খেলছে, ভারতকে হারাচ্ছে, এটা তো কৃতিত্বের।
প্র: রাঁচীতে প্রথম দিনই অস্ট্রেলিয়া তিনশো তুলেছে। স্মিথের সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়া এই টেস্ট জিতবে?
সাইমন্ডস: হারবে না, এটুকু বলতে পারি। জিতবে কি না, তা ভারতের ব্যাটিং না দেখে বলতে পারব না। বিরাট কোহালির চোট লাগাটা অস্ট্রেলিয়ার পক্ষেই যাবে মনে হচ্ছে। কাঁধে চোট নিয়ে আর কত ভাল ব্যাটিং করবে কোহালি? এমনিতেই তো ও ফর্মে নেই।
প্র: আর সিরিজে কী হবে ভাবছেন?
সাইমন্ডস: এই টেস্ট অস্ট্রেলিয়া জিতলে আর সিরিজ জেতা আটকাতে পারবে না। আমি যথেষ্ট আশাবাদী। অস্ট্রেলিয়ার দিকে বাজি লড়ব ভাবছি।সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা