গুণী সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরী। এরই মধ্যে গানে কয়েক যুগ পাড়ি দিয়েছেন। এ যাবৎ অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন। বিশেষ করে সিনেমার গানে ধারাবাহিকভাবে সফলতা পেয়েছেন। আর অ্যালবামেও মানসম্পন্ন ও শ্রোতাপ্রিয় গান গেয়ে চলেছেন সেই শুরু থেকে। সব সময় নিজের সর্বোচ্চটা দিতে চেষ্টা করেন এ শিল্পী। সেটা স্টেজ হোক বা অ্যালবাম কিংবা প্লেব্যাক। আর সে কারণেই এতটা বছর ধরে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছেন। চলতি প্রজন্মের অনেক শিল্পীর আইডলও তিনি। বর্তমানে গানের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যস্ত সময় পার করছেন এ তারকা। সব মিলিয়ে কেমন কাটছে চলতি সময়টা? সামিনা চৌধুরী বলেন, বেশ ভালো যাচ্ছে। পরিবার ও গান নিয়েই কাটছে সময়। জীবনতো একটাই। তাই প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার চেষ্টা করি। এই আর কি। বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে? সামিনা চৌধুরী বলেন, স্টেজ শো এর ব্যস্ততা যাচ্ছে। আর প্লেব্যাক, অ্যালবাম ও বিভিন্ন চ্যানেলের শুটিং নিয়েও ব্যস্ত থাকতে হয়। তবে যাই করি গানের মানটা যেন ঠিক থাকে সেদিকে খেয়াল রাখি। এ একটি জায়গায় কোন ধরনের আপোষ করতে আমি রাজী নই। এদিকে গত বছর বেশ কয়েকটি দেশে প্রবাসীদের আমন্ত্রণে সংগীত পরিবেশন করেছেন সামিনা চৌধুরী। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে দেশে ফিরেছেন তিনি। সেখানে কয়েকটি শোতে অংশ নিয়েছেন। দেশে ফিরেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কাজে। অন্যদিকে চলতি স্বাধীনতার মাসে নিজের নতুন একটি গান প্রকাশ করেছেন এ শিল্পী। ‘ও আমার দেশের মাটি’ শিরোনামের এ গানটি নতুন সংগীতায়োজনে গেয়েছেন তিনি। এটি সিডি চয়েসের ব্যানারে কদিন আগেই প্রকাশ হয়েছে। এ গানে তার সহশিল্পী স্বপ্নিল সজিব। আর গানটির ভিডিওতে তার সঙ্গে দেখা গেছে ১৯৭১ সালের বিরঙ্গনা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনীকে। গানটির মাধ্যমে বেশ সাড়া পাচ্ছেন সামিনা চৌধুরী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের গানে সব সময় অন্যরকম টান অনুভব করি। আবেগ কাজ করে খুব। কারণ অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এই দেশ নিয়ে অনেক গর্ব করি। সুতরাং এ গানটি নতুন করে গাওয়ার সময়ও এই অনুভূতিগুলো ভর করেছিলো আমার উপর। আর ভিডিওতে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনীকে পেয়ে আমি আরো বেশি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর একটি কাজ হয়েছে। শ্রোতাদের সাড়াও ভালো পাচ্ছি। দীর্ঘদিন আপনার নতুন একক অ্যালবাম প্রকাশ হচ্ছে না। সেটার কি খবর? সামিনা চৌধুরী বলেন, অ্যালবাম করে রেখেছি। তবে প্রকাশ করবো কবে নাগাদ বলতে পারছি না। নাম রেখেছি ‘পুষ্পবৃষ্টি’। এছাড়াও আরো কিছু গানের কাজ চলছে। দেশের গুণী সুরকাররাই সেসবের কাজ করছেন। আশা করছি কিছু সুন্দর নতুন গান শ্রোতাদের সামনে উপহার দিতে পারবো। চলতি প্রজন্মের গানে আগের মতো স্বস্তি পাওয়া যায় না। টিকছেও না বেশিদিন। এরকম অভিযোগ প্রায়ই উঠছে। আপনি কি মনে করেন? সামিনা চৌধুরী বলেন, আমি বলবো না খুব ভালো গান হচ্ছে। আবার খুব খারাপ হচ্ছে তাও বলবো না। ভালো-খারাপ মিশ্র কাজই হচ্ছে। কিন্তু গায়ক-গায়িকার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এখন যেদিকে তাকাই সেদিকেই গায়ক-গায়িকা! এই প্রবণতাটা ভয়াবহ। কিন্তু কষ্টের বিষয় হলো এখন প্রকৃত শিল্পী হবার চেষ্টা খুব কম। চটজলদি তারকা হয়ে যেতে চাইছে সবাই। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না রাতারাতি তারকা হলে রাতারাতি পড়ে যাওয়ারও ভয় থাকে। সুতরাং নিজের ভিত্তিটাকে মজবুত করতে হবে। মন থেকে গান ভালোবাসাতে হবে। তাহলে আপনার পরামর্শ কি থাকবে তরুণদের প্রতি? সামিনা চোধুরী বলেন, এ সময়ে অনেক মেধাবী শিল্পী রয়েছে। কিন্তু সঠিক পথে না এগুনোর ফলে অনেকের মেধাই বিকশিত হচ্ছে না। অথবা সঠিক গাইডলাইনের অভাবে মেধাবী শিল্পীরা হারিয়েও যাচ্ছে। গান মানুষের মনের খোরাক। সেটা অবশ্যই মন দিয়েই করতে হবে। প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করতে হবে। মেধার সঙ্গে চেষ্টা, ধৈর্য্য ও পরিশ্রম থাকলে টিকে থাকা যাবে।