প্রথমবারের মতো বৈঠক করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। বিভিন্ন ইস্যুতে মতানৈক্য পোষণ করা এ দুই নেতা হোয়াইট হাউজে বৈঠকে বসেন গতকাল। বৈঠকের পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আবারও তার ওপর আড়ি পাতার অভিযোগ টেনে আনেন। বলেন, অন্তত এ ইস্যুতে মার্কেলের সঙ্গে তার মিল রয়েছে। তিনি ২০১০ সালে উইকিলিকসের এক তথ্য ফাঁেসর দিকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন। ওই তথ্যমতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় মার্কেলের ফোনে আড়ি পেতেছিল জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ)। অনলাইন আল জাজিরার খবরে বলা হয়, মার্কেলের সফরের শুরুটা আন্তরিক আবহেই শুরু হয়। হোয়াইট হাউজের প্রবেশমুখে দুই নেতা করমর্দন করেন। কিন্তু পরে ওভাল অফিসে দু’নেতার বৈঠকের সময় মার্কেল আরেকবার করমর্দন করার ইঙ্গিত দিলে তা উপেক্ষা করেন ট্রাম্প। অথবা, তিনি এটা খেয়াল করেন নি। যেটাই হোক মুহুর্তটা ছিল বিব্রতকর। দু’নেতার আলোচনার এজেন্ডাগুলোর মধ্যে ছিল আইএস বিরোধী লড়াই, ন্যাটো জোটকে শক্তিশালী করা এবং রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সংঘাত সমাধান করার ইস্যুগুলো। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কেল তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘একে অপরকে নিয়ে কথা না বলে, একে অপরের সঙ্গে কথা বলাটা ছিল অপেক্ষাকৃত শ্রেয়।’ গত বছর নিজের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বার বার মার্কেলের সমালোচনা করেছিলেন। সিরিয়া থেকে শরণার্থীদের প্রবেশ করতে দিয়ে মার্কেল জার্মানির ‘ক্ষতি’ করছেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন। মতপার্থক্যের দিকে ইঙ্গিত করে মার্কেল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা এমন একটা বিষয় যা নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় হয়েছে।’ ট্রাম্প তার বক্তব্যে বলেছেন, উভয় দেশকে অবশ্যই তার ভাষায় ‘উগ্রপন্থী ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ’ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘অভিবাসন একটা সুযোগ, অধিকার নয়। আর আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা সবসময়ই অগ্রাধিকার পাবে। এতে কোন প্রশ্ন নেই।’ আলোচনায়, ন্যাটোর প্রতি ‘জোরালো সমর্থন’ পুনর্ব্যক্ত করেন ট্রাম্প। তবে জোটভুক্ত দেশগুলোকে প্রতিরক্ষার জন্য ‘নিজেদের ন্যায্য অংশের ব্যয় বহন করতে হবে’ ট্রাম্প তার এই অবস্থানও ফের তুলে ধরেন। ট্রাম্প এর আগে বার বার বলেছেন যে, ন্যাটো জোটে ব্যয়ের অতিরিক্ত বোঝা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে। তিনি বলেন, ‘অতীত বছরগুলো থেকে অনেক দেশ বড় অঙ্কের অর্থের ঋণী। এটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অত্যন্ত অন্যায্য। এ দেশগুলোকে অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।’ জবাবে, মার্কেল বলেন, ন্যাটোর প্রতি ট্রাম্পের সমর্থনে তিনি অনুপ্রানিত। জার্মানি তাদের তরফে ব্যয় বাড়াবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন। উভয় নেতা আফগানিস্তান ও ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। অর্থনীতি ইস্যুতে ট্রাম্প বলেন, জার্মানির সঙ্গে বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত ভালো করবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। অন্যদিকে মার্কেল বলেন, তারা প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাণিজ্য সমঝোতা নিয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু করবে। মার্কেল বলেন, ‘যেসব বিষয়ে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনার চেষ্টা করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি মানুষকে একতাবদ্ধ করার। আর চেষ্টা করেছি একটা সমঝোতা খুঁজে বের করতে যা উভয় পক্ষের জন্য মঙ্গল।’ মার্কিন সময় শুক্রবার মধ্যাহ্ন ভোজে দু’নেতার মধ্যে আরও আলোচনা হবার কথা রয়েছে।