ঢাকা; প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই এতো উন্নয়ন হচ্ছে। অনেকে বলেন শুধু উন্নয়ন করলে হবে না, গণতন্ত্র থাকতে হবে। দেশে এতো উন্নয়ন ও অগ্রগতির পরও যারা কিছুই দেখতে পান না তারা আসলে কি চায়? কাদের মুখে আমরা গণতন্ত্রের কথা শুনি? যাদের মার্শাল’ল বা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচার আসলে তাদের পদলেহন করতে ভাল লাগে, মন্ত্রী হতে পারে, তারাই অবৈধ ক্ষমতা দখলদার থাকলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেখতে পায়।
যদি দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নাই-ই থাকে তবে সরকারের এতো সমালোচনা তারা করেন কিভাবে? বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সমাপনী দিনে আরও আলোচনায় অংশ নেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী। আলোচনা শেষে স্পিকার প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতিক্রমে কন্ঠভোটে পাস হয়। এরপর স্পিকার সংসদের অধিবেশন শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন। দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাকসহ অন্যান্য এনজিও’র দাবি নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ নয়, দেশে দ্রুত গতিতে দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে সরকারের গৃহীত ১৪২টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে। একটি ব্যাংকসহ প্রায় আড়াই হাজার এনজিও আছে, তারা ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দেশে কতভাগ দারিদ্র্য বিমোচন করেছে? তারা ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন করেছে নাকি যারা এর ব্যবসা করেন তারাই ধনশালী ও সম্পদশালী হয়েছে- এ বিষয়ে গবেষণা করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাক নাকি প্রতিবছর এক ভাগ হারে দারিদ্র্যতা কমাচ্ছে! গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়েছে ৮৫ সালে, আর ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা হয়েছে ৮২ সালে। এ দুটি সংস্থা দুই ভাগ হারে বছরে দারিদ্র্য দূর করে, তবে এই ৪৫ বছরে দেশে তো দারিদ্র্যতাই থাকা উচিত নয়। দেশ অনেকে আগেই দারিদ্র্য একেবারে শূণ্য হয়ে যাওয়া উচিত। তবে গেল না কেন? দেশে কোন সরকারের আমলে কতহারে দারিদ্র হ্রাস পেয়েছে তা নিয়ে গবেষণার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যত দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাস করেছে, অতীতের কোন সরকার তা পারেনি। ৯৬ সালে আমরা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করি তখন দেশের দারিদ্র্যতা ছিল ৫৭ ভাগ। এখন আমরা দারিদ্র্যতা ১২ ভাগে নেমে এনেছি। তিনি বলেন, আমরা একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ নয়, ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করেছি। এখান থেকে ঋণ নিয়ে কাউকে সুদের জন্য বাড়ি-ঘর, গরু বেচতে হয় না। আমাদের দৃঢ় পদক্ষেপের ফলেই এই ৮ বছরে দেশের ৫ লাখ মানুষ নি¤œ আয় থেকে মধ্যম আয়ে উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আর হাত পেতে বা ভিক্ষা নিয়ে চলতে হয় না। আমরা প্রায় ৯০ ভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করি নিজেদের অর্থায়নে। পদ্মা সেতুতেও আমরা তা প্রমাণ করেছি। তাই যে যতই কথাই বলুক না কেন, এনজিওগুলো একভাগ হারে দারিদ্র্য হ্রাসের অস্বাভাবিক দাবি মানলে তো দেশে দারিদ্র্যতাই থাকে না। বাস্তবতা হচ্ছে দেশে দ্রুত দারিদ্র্যতা কমেছে সরকারের গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। আমরা ১৪২টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। তিনি বলেন, দেশে খাদ্য ঘাটতি রেখে হাড্ডিসার, কঙ্কালসার মানুষকে দেখিয়ে বিদেশ থেকে ভিক্ষা এনে নিজেদের পকেট ভারি করার সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে- এটাই যেন অনেকের ভাল লাগছে না। কারণ এরা দেশের ও দেশের মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণ হোক তা চায় না। সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের কিছু মানুষ আছে যারা উন্নয়ন দেখলেই সমালোচনা করে। যারা গণতন্ত্রের কথা বলেন তাদের জরুরি অবস্থা কিংবা সামরিক স্বৈরাচার যখন আসে তখন তাদের কাছে খুব গণতান্ত্রিক মনে হয়। তাদের সঙ্গে একবারে বিগলিত প্রাণ হয়ে পদলেহন করতে শুরু করে। কারণ একটা অস্বাভাবিক ক্ষমতা আসলেই ওনাদের একটু গুরুত্ব বাড়ে। তিনি বলেন, যদি ক্ষমতায় যাওয়ার উনাদের এতোই আকাঙ্খা তাহলে তাদের রাজনীতি করলেই হয়। জনগণের কাছে গেলেই হয়। ভোটে নির্বাচিত হয়ে তারা সংসদে আসুক। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে কোন প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না। আমরাই প্রথম বেসরকারিখাতে প্রাইভেট টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দিয়েছি বলেই তারা (সমালোচক) এতো কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। তারা কিন্তু উন্নয়ন চান না, গণতন্ত্র চান না। দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই তো উন্নয়ন হচ্ছে। আজকে আমরা গণতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে সরকার পরিচালনা করছি বলেই তো দেশের উন্নয়নটা হচ্ছে।