গাজীপুর; গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের একটি অনুষ্ঠান নিয়ে নানা বিতর্কের জন্ম হচ্ছে। শুক্রবার অনুষ্ঠান হলেও বুধবার থেকে মঞ্চে ব্যানার টানানো আর নামানোর ঘটনায় নানা মুখরোচক আলোচনা শুরু হয়েছে।
দলীয় লোকজন বলছেন, বৃত্তি দেয়ার নাম করে জাহাঙ্গীর আলম আগামী সিটিকরপোরেশন নির্বাচনের মাঠ গোছানোর কাজ করছেন। বিশাল আয়োজনের বড় বাজেটে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের ব্যানারে জেলা আওয়ামীলীগের অন্য কোন নেতা. মন্ত্রী ও এমপির নাম না রেখে শুধু জাহাঙ্গীর আলম ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম লিখায় দলীয়ভাবে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় বুধবার থেকে মঞ্চে টানানো ব্যানারটি আজ দুপুরে নামিয়ে ফেলা হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শুক্রবার গাজীপুর রাজবাড়ি মাঠে এক বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে গাজীপুর মহানগরের নির্ধারিত কিছু শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করার কথা রয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি উপস্থিত থাকবেন বলে আমন্ত্রন পত্রে বলা হয়েছে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে যত টাকা সহায়তা করা হবে তার অনেকগুন বেশী টাকা খরচ হচ্ছে অনুষ্ঠানের পিছনে। এই টাকা খরচ না করে আরো বেশী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা যেতো। তাই সাধারণ মানুষ মনে করছেন, বৃত্তি প্রদান মূখ্য বিষয় নয়, বরং আগামী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য এই অনুষ্ঠান।
একটি সূত্র জানায়, এই অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগের স্থানীয় মন্ত্রী ,এমপি সহ অনেক গুরুত্বপূর্ন নেতাকে অতিথি না করায় দলীয়ভাবে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনুষ্ঠানের দুই দিন আগে মঞ্চে টানানো ব্যানারে দুই জনের নাম থাকায় দলীয় সমালোচনার মুখে ব্যানার নামিয়ে ফেলা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকেরা বলছেন, এই অনুষ্ঠান দলীয় নয়। তাই দলীয় নেতাদের অতিথি করার প্রয়োজন নেই।
প্রসঙ্গত; গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনে আনরস প্রতীক পান জাহাঙ্গীর আলম। দলীয় মনোনয় নিয়ে দ্বিতীয় হন গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি এড. আজমত উল্লাহ খান। কিন্তু প্রতীক পাওয়ার দিনে দলীয় ভাবে জাহাঙ্গীর আলমকে টঙ্গী থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় সরকারী দলের নেতারা। পরবর্তি সময় দলীয় প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষনা দেন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লাহ খান পরাজিত হন ও বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান বিজয়ী হন। বিজয়ী হওয়ার পর অধ্যাপক মান্নান কে জ্বালাও পোঁড়াও মামলায় গ্রেফতার করে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মেয়রের পদে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পান আওয়ামীলীগের দলীয় কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ। জনাব কিরণ, এড. আজমত উল্লাহ খানের পরামর্শে বর্তমান পর্যন্ত গাজীপুর সিটিকরপোরেশন পরিচালনা করছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। আর জাহাঙ্গীর আলম বরাবরই কিরণের বিরোধীতা করে আসছেন বলেও সমালোচনা বর্তমান।
অভিযোগ রয়েছে, কিছুদিন পূর্বে গ্যাসের দাবিতে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে একটি মানববন্ধনে জাহাঙ্গীর আলমের সামনেই আন্দোলনকারীদের বেধড়ক মারপিট করে পুলিশ। ও্ই ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে প্রশাসন কেন অবস্থান নিয়েছিল তা নিয়েও সমালোচনা ছিল।
এই অবস্থায়, গাজীপুর সিটিকরপোরেশন নির্বাচনের আগেই জাহাঙ্গীর আলমের মাঠ গোছানোকে সরকারী দলের নেতারা কোন দৃষ্টিতে দেখছেন তা নিয়েই এখন আলোচনা সমালোচনা চলছে।