ঢাকা; প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়া কানেকশন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি উত্তাল। এমন কানেকশন বা সম্পর্কের তদন্ত হয়েছে বা হচ্ছে। ফলে ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি-ওয়াটারগেটের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ট্রাম্পের একের পর এক সহযোগীর বিরুদ্ধে রাশিয়া কানেকশনের অভিযোগ উঠছে।
১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করে দেয় মিডিয়া। তাতে ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক গোয়েন্দাগিরি, স্যাবোটাজ ও ঘুষ গ্রহণের সব তথ্যাদি। এর ফলে পদত্যাগে বাধ্য হন তখনকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। এখন ট্রাম্প জমানায় সেই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি আবার উঁকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ বিষয়ে বিজ্ঞজনরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন রিচার্ড নিক্সনের আইনজীবী জন ডিন। তিনিও ট্রাম্প জমানাকে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন। এফবিআই তো এবারের কেলেঙ্কারি বিষয়ে বলেই বসেছে ‘মাস্টার ম্যানিপুলেটর অব দ্য কভার আপ’। অর্থাৎ (নটরাজদের উদ্দেশে বলেছেন) ধামাচাপা দেয়ার মূল কারিগর। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিকে উল্লেখ করে জন ডিন বলেছেন, এই প্রেসিডেন্সির শুরু থেকেই আমি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। যদিও আমরা এখনো দ্বিতীয় একটি ওয়াটারগেটে পৌঁছিনি তবে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় প্রবণতা সেদিকেই যাচ্ছে। সিনেটের সামনে (এটর্নি জেনারেল জেফ) সেশনসের মিথ্যাচার এক্ষেত্রে আরো একটি ধাপ যোগ করেছে। অনলাইন বিবিসি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ও ট্রাম্প প্রশাসনের রাশিয়া কানেকশন মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।
ওয়াশিংটনে একটি অফিস ও একটি হোটেল কমপ্লেক্সকে কেন্দ্র করে বেরিয়ে আসে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি। ১৯৭২ সালে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) সব প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটে ওই বছর জুন মাসে। তখন এমন প্রচেষ্টায় যুক্ত থাকার দায়ে ওই অফিস ও হোটেল কমপ্লেক্স থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ৫ ব্যক্তিকে। পরে দেখা যায় তারা সবাই প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সমর্থক। এ বিষয়ে তদন্ত করে সিনেট। ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে ওয়াটারগেট নিয়ে কথোপকথনের সংশোধিত টেপ প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট নিক্সন। সুপ্রিম কোর্টের কাছে মূল টেপটি হস্তান্তরের জন্য তাকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওদিকে প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে অভিশংসনের প্রস্তাব অনুমোদন করে প্রতিনিধি পরিষদের জুডিশিয়ারি কমিটি। আগস্ট মাসে নিক্সন স্বীকার করেন বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে এটা তিনি জানতেন এবং তিনি এ বিষয়ে এফবিআইয়ের তদন্ত বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। এর মাত্র চারদিন পরেই তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। তিনিই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, যিনি পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। এখন থেকে ৪৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে যে ঘটনা ঘটে গিয়েছে তা কি নতুন করে ঘটতে যাচ্ছে? রাশিয়াকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প প্রশাসনে যেসব ঘটনা ঘটছে তার সঙ্গে কি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির তুলনা করা যায়! বিষয়টি একটু গভীরে প্রবেশ করে দেখা যাক। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে টার্গেট করা হয়েছিল ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি (ডিএনসি)কে। একইভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ডিএনসিকে টার্গেট করা হয়েছে। ডিএনসির অনেক ই-মেইল চুরি করা হয়েছে এবং তা প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য একটিই- ডেমোক্রেটিক দলকে পরাজিত করা। হিলারি ক্লিনটনকে নির্বাচিত না হতে দেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই বলেছে, ডিএনসি হ্যাক করার নেপথ্যে ছিল রাশিয়া। তবে রাশিয়া এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয়ী করতে চেয়েছে রাশিয়া। বেসরকারি গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্যে সমঝোতা করেছিল রাশিয়া। এমনকি তারা তাকে ব্ল্যাকমেইল করার মতো অবস্থায় চলে গিয়েছে। বলা হয়েছে, হিলারি ক্লিনটন রাশিয়া সফরে গিয়ে হোটেলের যে বিছানায় ঘুমিয়েছেন সেই বিছানায় ডনাল্ড ট্রাম্প মূত্র ত্যাগ করিয়েছেন একজন দেহপসারিণীকে দিয়ে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে। এখন অনেক রাজনৈতিক ভাষ্যকার ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে রাশিয়া কানেকশনকে মিলিয়ে দেখছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আইনজীবী রিচার্ড পেইন্টার। তিনি বলেছেন, ওয়াটারগেট নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছিল এখন (রাশিয়া কানেকশন নিয়ে) তদন্ত তার চেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ।
ওদিকে সিনেটে এটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসের মিথ্যাচার ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে তুলনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের এটর্নি জেনারেলদের মধ্যে একজন ছিলেন জন মিশেল। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে শপথ ভঙ্গ করার দায়ে তাকে পরে জেল দেয়া হয়েছিল। তার স্থলাভিষিক্ত হন রিচার্ড ক্লেইনডিয়েন্ট। তিনি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত হননি। কিন্তু তাকে এ পদে বসানোর আগে সিনেটে যে শুনানি হয়েছিল তাতে তিনি যোগাযোগ বিষয়ক একটি কোম্পানিকে সুবিধা দেয়ার বিষয়টি লুকিয়ে যান। এ অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ১৯৭৪ সালে।
এসব বিষয়ের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সাদৃশ্য তুলে ধরে জন ডিন বলেন, এটা একেবারে পরিষ্কার, (জেফ সেশনস) সিনেটে তার সাক্ষ্য দেয়ার সময় সত্য বলেননি। আমি মনে করি বিষয়টি এত সহজে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না। কারণ, একজন এটর্নি জেনারেল হিসেবে যেকোনো তদন্ত থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এ থেকে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির গা শিউরে উঠা প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
জেফ সেশনস কিন্তু রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলায়েকের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা সম্প্রতি স্বীকার করেছেন। ফলে তার পদত্যাগ দাবি জোরালো হয়েছে। রাশিয়ার এই একই কূটনীতিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট মাইকেল ফ্লিন। তার ধারাবাহিকতায় মাইকেল ফ্লিনকে পদত্যাগ করতে হয়েছে গত মাসে। এর ফলে বর্ষীয়ান সাংবাদিক ড্যান রাদার তার ফেসবুক একাউন্টে লিখেছেন, আমার জীবনে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি হলো ওয়াটারগেট। অভিযোগ আছে, হোয়াইট হাউসে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার আগে সের্গেই কিসলায়েকের সঙ্গে কূটনৈতিক ইস্যুতে আলোচনা করেছিলেন ফ্লিন। কোনো বেসরকারি ব্যক্তির জন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করা যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনি। ফলে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি তদন্তে যেমন সিনেটের দু’দলের সমন্বয়ে কমিটি হয়েছিল ঠিক একইভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের রাশিয়া কানেকশন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন বেশ কিছু রাজনৈতিক ভাষ্যকার। এ বিষয়ে জন ডিন বলেছেন, আমি হলে অবিলম্বে এ বিষয়ে একজন স্পেশাল প্রসিকিউটরকে দায়িত্ব দিতাম। উল্লেখ্য, ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে যখন নিক্সন প্রশাসন লেজেগোবরে অবস্থা তখন ১৯৭৩ সালে নিক্সন প্রশাসন অখ্যাত একটি পদক্ষেপ নেয়। প্রেসিডেন্ট তখন একজন নিরপেক্ষ বিশেষ প্রসিকিউটরকে বরখাস্ত করেন। এর ফলে পদত্যাগ করেন এটর্নি জেনারেল এলিয়ট রিচার্ডসন ও তার ডেপুটি জেনারেল উইলিয়াম রাকেলসহাউজ। একে বলা হয় ‘সাটারডে নাইট ম্যাসাকার’। এর সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে। কারণ, জানুয়ারিতে এটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটসকে বরখাস্ত করেন তিনি। এটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করা প্রেসিডেন্ট সম্ভবত দু’জনই আছেন। তাদের একজন হলেন নিক্সন। অন্যজন ট্রাম্প।
ওদিকে সিএনএন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রাশিয়া কানেকশন নিয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে ‘যা জানি’ এবং ‘যা জানি না’ ভাগে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে পয়েন্ট উল্লেখ করে করে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। যেমন: ১. কয়েক মাসের অনুসন্ধান শেষে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটাতে হ্যাকিং করেছে রাশিয়া সরকার। তারা ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) ও হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা টিমের হাজার হাজার ইমেইল চুরি করেছে।
২. তাদের একটিই উদ্দেশ্য ছিল। তাহলো হিলারি ক্লিনটনের ক্ষতি করা। তা করতে রাশিয়ানরা ডনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা জানুয়ারিতে এসব তথ্য প্রকাশ করেন।
৩. রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের আরো একটি উদ্দেশ্য ছিল। তা হলো ডেমোক্রেটিক দলের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মূল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রিয়তা নস্যাৎ করা। আরো ব্যাপক অর্থে বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা।
৪. নির্বাচন মৌসুমে বর্তমান ও সাবেক অনেক গোয়েন্দা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেছেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের টিমের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ রক্ষা করেছেন রাশিয়ার কর্মকর্তা ও গুপ্তচররা।
৫. সর্বশেষ দুটি ঘটনায় ধরা পড়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তারা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কথা বেমালুম চেপে গিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো হলেন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল ফ্লিন। অন্যজন এটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস। ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনারও রাশিয়ান কূটনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ বিষয়ে রিপোর্ট করেছে দ্য নিউ ইয়র্কার ও দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। তাতে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারে রাশিয়ার কূটনীতিক সের্গেই কিসলায়েকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় জারেড কুশনার ও মাইকেল ফ্লিনের। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণার সময় জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জে ডি গর্ডন ও কার্টার পেজও সাক্ষাৎ করেছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে। এ বিষয়টি প্রথম রিপোর্ট করে ইউএসএ টুডে। এ বিষয়টি সিএনএনের কাছে স্বীকার করেছেন গর্ডন। এর বাইরে আরো একজন উপদেষ্টা ওয়ালিদ ফারেজ সাক্ষাৎ করেছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত কিসলায়েকের সঙ্গে। কিন্তু এমন কোনো সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করেছেন ফারেজ।
৬. রিপাবলিকান দলের কনভেনশনের সময় রাশিয়া কানেকশনের অভিযোগ উঠলে পদত্যাগ করেন ট্রাম্পের প্রচারণা বিষয়ক চেয়ারম্যান পল ম্যানাফোর্ট। যেসব তথ্য জানা যায়নি তার মধ্যে অন্যতম হলো- ১. প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ার কোনো এজেন্ট বা সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সঙ্গে হ্যাকিং নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলোচনা করেছিলেন কিনা।
২. যদি তিনি এমন আলোচনা করেই থাকেন তাহলে তিনি কি তাদেরকে ডেমোক্রেট ও হিলারি ক্লিনটনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে উৎসাহিত করেছিলেন কিনা তাও জানা যায়নি। তবে এমন কোনো যোগাযোগের বিষয় অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাতে অনেক প্রশ্ন সামনে চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ওদিকে সিএনএন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রাশিয়া কানেকশন নিয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে ‘যা জানি’ এবং ‘যা জানি না’ ভাগে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে পয়েন্ট উল্লেখ করে করে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। যেমন: ১. কয়েক মাসের অনুসন্ধান শেষে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটাতে হ্যাকিং করেছে রাশিয়া সরকার। তারা ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) ও হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা টিমের হাজার হাজার ইমেইল চুরি করেছে।
২. তাদের একটিই উদ্দেশ্য ছিল। তাহলো হিলারি ক্লিনটনের ক্ষতি করা। তা করতে রাশিয়ানরা ডনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা জানুয়ারিতে এসব তথ্য প্রকাশ করেন।
৩. রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের আরো একটি উদ্দেশ্য ছিল। তা হলো ডেমোক্রেটিক দলের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মূল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রিয়তা নস্যাৎ করা। আরো ব্যাপক অর্থে বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা।
৪. নির্বাচন মৌসুমে বর্তমান ও সাবেক অনেক গোয়েন্দা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেছেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের টিমের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ রক্ষা করেছেন রাশিয়ার কর্মকর্তা ও গুপ্তচররা।
৫. সর্বশেষ দুটি ঘটনায় ধরা পড়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তারা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কথা বেমালুম চেপে গিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো হলেন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল ফ্লিন। অন্যজন এটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস। ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনারও রাশিয়ান কূটনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ বিষয়ে রিপোর্ট করেছে দ্য নিউ ইয়র্কার ও দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। তাতে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারে রাশিয়ার কূটনীতিক সের্গেই কিসলায়েকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় জারেড কুশনার ও মাইকেল ফ্লিনের। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণার সময় জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জে ডি গর্ডন ও কার্টার পেজও সাক্ষাৎ করেছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে। এ বিষয়টি প্রথম রিপোর্ট করে ইউএসএ টুডে। এ বিষয়টি সিএনএনের কাছে স্বীকার করেছেন গর্ডন। এর বাইরে আরো একজন উপদেষ্টা ওয়ালিদ ফারেজ সাক্ষাৎ করেছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত কিসলায়েকের সঙ্গে। কিন্তু এমন কোনো সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করেছেন ফারেজ।
৬. রিপাবলিকান দলের কনভেনশনের সময় রাশিয়া কানেকশনের অভিযোগ উঠলে পদত্যাগ করেন ট্রাম্পের প্রচারণা বিষয়ক চেয়ারম্যান পল ম্যানাফোর্ট। যেসব তথ্য জানা যায়নি তার মধ্যে অন্যতম হলো- ১. প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ার কোনো এজেন্ট বা সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সঙ্গে হ্যাকিং নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলোচনা করেছিলেন কিনা।
২. যদি তিনি এমন আলোচনা করেই থাকেন তাহলে তিনি কি তাদেরকে ডেমোক্রেট ও হিলারি ক্লিনটনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে উৎসাহিত করেছিলেন কিনা তাও জানা যায়নি। তবে এমন কোনো যোগাযোগের বিষয় অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাতে অনেক প্রশ্ন সামনে চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।