নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উত্তরায় ১০ বিঘা জমি খুঁজছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সেখানে না পেলে পূর্বাচলেও জায়গা খুঁজবে তারা।
অবশ্য গত জুন থেকে চেষ্টা করে এখনো জমি চূড়ান্ত করতে পারেনি বিজিএমইএ।
বিজিএমইএ ভবন অবিলম্বে ভেঙে ফেলতে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) করা আবেদন খারিজ হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ রোববার এই রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে তা খারিজ করেন। এর মধ্য দিয়ে বিজিএমইএ ১৬তলা ভবন রক্ষা করার সব আইনি লড়াই শেষ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিজিএমইএর একাধিক শীর্ষ নেতা।
রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা ভবন ছেড়ে দেব। এ জন্য মহামান্য আদালতের কাছে তিন বছর সময় চাইব। কারণ, আমরা সরকারের পক্ষে পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য ইউডি, ইউপি ও সিও ইস্যু করি। সেবাগুলো এক দিন বন্ধ থাকলে ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে। আমাদের প্রতি ক্রেতাদের যে আস্থা রয়েছে, সেটি কমে যাবে। তেমনটি হলে ব্যবসাও কিন্তু কমবে।’
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বিজিএমইএর কার্যালয়টি এত বড় যে দুই দিনের জন্য অন্য জায়গায় নেওয়া যাবে না। সে জন্য যদি সময় না দেওয়া হয় তাহলে ভাবমূর্তির সংকট হবে। পোশাক রপ্তানির ব্যবসা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ জমির স্বত্ব না থাকা ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করে নির্মিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে। গত ২ জুন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ বিজিএমইএর আপিল আবেদন খারিজ করে দেন। ৮ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। ৮ ডিসেম্বর রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন বিজিএমইএর সভাপতি। এই রিভিউ আবেদন আজ খারিজ হলো। রায় অনুযায়ী, ভবনটি নিজ খরচে ভাঙতে হবে বিজিএমইএকে।
বিজিএমইএ ভবন অন্যত্র সরাতে কত দিন সময় লাগবে, তা জানিয়ে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে একটি আবেদন দিতে বলেছেন আদালত। ওই দিন আদালত পরবর্তী আদেশ দেবেন।
জানা যায়, গত বছরের ২ জুন রায় ঘোষণার পরই নতুন ভবন নির্মাণের জন্য তেজগাঁও শিল্প এলাকা, আগারগাঁও, পূর্বাচল ও উত্তরায় সরকারি খাসজমির খোঁজখবর নেন বিজিএমইএর নেতারা। পূর্ত মন্ত্রণালয়ে জমি বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেন। তখন উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরে ৯ বিঘা আয়তনের একটি খাসজমির খোঁজ পেয়ে সেটি দেখে আসেন তাঁরা। অবশ্য সেই জমি বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য নির্ধারিত বলে সেটি বাদ হয়ে যায়। পরে উত্তরাতে আরেকটি ১০ বিঘা জমি দেখেন। তবে জমিটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
গত আট মাসেও জমি নির্ধারণ হলো না কেন, জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একটি জমি পেতে অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হয়। সে জন্যই সময় লাগছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
১৯৯৮ সালের নভেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটির উদ্বোধন করেন। রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পে সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বিজিএমইএ ভবনে মোট এলাকা বা স্পেস ২ লাখ ৬৬ হাজার বর্গফুট। এর মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার সংগঠনের মালিকানাধীন। বাকিটা জায়গা ৪০টির মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে ও ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
ভবনের ওপরের দুটি ফ্লোর নিয়ে বিলাসবহুল ‘অ্যাপারেল ক্লাব’ করেছে বিজিএমইএ। সেখানে সংগঠনের সদস্যদের জন্য সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার, রেস্টুরেন্ট, সভাকক্ষ ইত্যাদি সুবিধা রয়েছে। মূল ভবনের নিচে বেসমেন্ট গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য অতিরিক্ত দুটি তলা রয়েছে। এ ছাড়া একটি বড় আকারের মিলনায়তনও আছে ভবনটিতে। সব মিলিয়ে পুরো ভবনটি প্রায় ৩০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বলে জানায় বিজিএমইএ।
বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটি দুই বিঘা জমির ওপর। তবে নতুন ভবনের জন্য সংগঠনটি ১০ বিঘা জমি চাইছে। এ বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কার্যালয়ের পাশাপাশি কনভেনশন সেন্টারসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ নতুন ভবনটি করার জন্য বড় জায়গা চাইছি আমরা। যাতে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অন্য কোথাও যেতে না হয়।’
মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘উত্তরায় চাহিদামতো জায়গা না পেলে আমরা পূর্বাচলে জমি দেখব।’
যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ভবনের ফ্লোর বিক্রি করা রয়েছে, তাদের কী হবে? জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘আমাদের যা হবে, তাদেরও একই অবস্থা হবে।’
অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর আরেক নেতা বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএর ফ্লোর কিনেছে, তারা প্রায় প্রত্যেকেই সংগঠনের সদস্য। তাই বড় কোনো সমস্যা হবে না। নতুন ভবনে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে।
বিজিএমইএ ভবনের তৃতীয় তলায় আছে এক্সিম ব্যাংকের শাখা। ইতিমধ্যে শাখাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জায়গা খুঁজছে বলে জানান শাখাটির ব্যবস্থাপক (পরিচালন) এ কে এম জাহিদুল আলম। আজ বেলা দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরো বিষয়টি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দেখভাল করছে। আমরা যতটুকু শুনেছি ,নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। চূড়ান্ত হলেই শাখাটি স্থানান্তর করা হবে।’