নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে কলারদোনিয়া ইউনিয়নের বেলুয়া নদীর তীরে বৈঠাকাটা বাজার। বাজারের পূর্ব পাশে বেলুয়া মুগারঝোর গ্রামের বেলুয়া নদী। এই নদীতে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কৃষিপণ্যের ভাসমান হাট বসে। ৬৫ বছর ধরে এ হাটে আশপাশের ২০ থেকে ২৫ গ্রামের কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত সবজি, ধান ও চাল কেনাবেচা করছেন। একসময়ে অনুন্নত সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার কারণে স্থানীয় লোকজন নৌপথে চলাচল ও পণ্য পরিবহন করতেন। নৌকায় করে কৃষক হাটে কৃষিপণ্য নিয়ে যেতেন। আবার ক্রেতারা তা কিনে নৌকায় করে চলে যেতেন। নৌকায় বসে কেনাবেচা করতে করতে ভাসমান হাটের সূচনা। ধীরে ধীরে হাটের ব্যাপ্তি বেড়ে চলছে।
.পিরোজপুর থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে পথ ধরেছিলাম বাজারে যাওয়ার। বৈঠাকাটা বাজারে যেতে যেতে চোখে পড়ল এক দারুণ দৃশ্য। ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে খাল বেয়ে কৃষক যাচ্ছেন হাটে। নৌকায় তাঁর খেতে ফলানো শাকসবজি। সকাল আটটার আগেই বেলুয়া নদীর ভাসমান বাজারে গিয়ে চোখে পড়ল সারি সারি ছোট-বড় নৌকা ও ট্রলার। ৮টা থেকেই মূলত জমজমাট হয় বাজার। চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। হাটে কৃষকেরা তাঁদের খেতে উৎপাদিত টমেটো, আলু, মিষ্টিকুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, শিম, লাউ, করলা, মুলা, মরিচ ও নানা জাতের শাক নিয়ে এসেছেন। পাইকারেরা কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে বড় নৌকা, ট্রলার ও লঞ্চে করে নিয়ে যাচ্ছেন। হাটে নানা ধরনের সবজি ও শাকের চারা বিকিকিনি হয়। হাটে বেলুয়া মুগারঝোর গ্রামের হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ডিঙি নৌকায় চুলা বসিয়ে পিঠা তৈরি করে বিক্রি করেন। নৌকা চালিয়ে পুরো হাটে ঘুরে ঘুরে পিঠা বিক্রি করেন। তিনি জানালেন, হাটের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। হাটে নৌকায় মাইক লাগিয়ে হকাররা বিক্রি করছেন নানা পণ্য। হাটের এক পাশে রয়েছে নারকেলের হাট। আরেক পাশে রয়েছে চাল, ধান ও মুড়ির হাট।
মুগারঝোর গ্রামের মাঝবয়সী কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, এ হাটকে কেন্দ্র করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এ অঞ্চলের কয়েক হাজার কৃষক। বর্ষা মৌসুমে হাটে সবজির চারা বিক্রি হয়। আর শীত মৌসুমে বিক্রি হয় কৃষিপণ্য। বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে ব্যবসায়ীরা কৃষিপণ্য কিনতে আসায় কৃষকেরা পণ্যের ভালো দামও পাচ্ছেন।
.স্থানীয় প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৫৪ সালে এ ভাসমান হাটের শুরু। দিন দিন হাটের প্রসারতা বেড়ে চলছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা হাট থেকে কৃষিপণ্য কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে নিয়ে যান। এ হাটের কৃষিপণ্য ইউরোপের বাজারেও রপ্তানি হয়। প্রতি হাটে কৃষকেরা পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকার কৃষিপণ্য কেনাবেচা করেন।