পুণের পিচ বিতর্ককে উস্কে দিলেন সদ্য প্রাক্তন বোর্ড সচিব এবং পুণে ক্রিকেটের সর্বেসর্বা বলে পরিচিত অজয় শিরকে। নজিরবিহীন ভাবে তিনি নিজের দেশের ক্রিকেট দল এবং অনিল কুম্বলে-দের টিম ম্যানেজমেন্টকে একহাত নিয়েছেন।
আইসিসি পুণের পিচকে ‘পুওর’ অর্থাৎ নিম্নমানের বলে রেটিং দিয়েছে। তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে শিরকে বুধবার উত্তেজিত ভাবে ফোনে আনন্দবাজার-কে বলতে শুরু করলেন, ‘‘ম্যাচ ফিক্সিংয়ের পরে এ বার ক্রিকেটে এসে গিয়েছে পিচ ফিক্সিং। সেটাই হয়েছে পুণেতে।’’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এর পর তিনি যোগ করলেন, ‘‘মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে খারাপ পিচের জন্য। কিন্তু এমসিএ-র তো কোনও দোষই নেই। ওরা কি এই উইকেট বানিয়েছে নাকি? এটা তো ভারতীয় দল বানিয়েছে বোর্ড থেকে কিউরেটর নিয়ে এসে।’’ শিরকের দাবি, ‘‘আইসিসি-র জবাবদিহি চাওয়া উচিত বোর্ডের কিউরেটর ও ভারতীয় দলের কাছে যে, কী ভাবে এই উইকেটে একটা টেস্ট ম্যাচ হল!’’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সম্প্রতি ভারতীয় বোর্ডের সচিবের পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে শিরকে-কে। পুণে ক্রিকেট সংস্থার প্রধানের পদ থেকেও তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। তবু উত্তেজিত ভাবে বললেন, ‘‘মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থা কী করবে সেটা ওদের ব্যাপার। তবে এই সংস্থার সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে জড়িয়ে থাকার সুবাদে আমার পরামর্শ, হাটে হাড়ি ভেঙে দাও। কারা ভাল উইকেটকে খারাপ করল? মুখোশটা খুলে দাও।’’
শিরকে নজিরবিহীন দাবি জানাচ্ছেন, পুণের পিচ কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্ত হোক। তিনি চাঞ্চল্যকর ভাবে আরও বলে দিচ্ছেন, ‘‘সিবিআই তদন্ত করতে এলে আমরা সমস্ত ফোন কলের রেকর্ড পেশ করব। ভারতীয় দল থেকে কে বা কারা আমাদের সংস্থায় ফোন করে এমন পিচ বানাতে বলল। কারা জোর দিতে থাকল যে, ঘূর্ণি বানাতেই হবে। সব ফাঁস করে দেব।’’ আপনি কারও নাম করবেন? অস্ফুটে এক জনের নাম নিলেন শিরকে। তার পরেই বললেন, ‘‘না থাক। সেটা তদন্ত করেই দেখা হোক। কত বার সংস্থার দফতরে ওদের ফোন এসেছে, সেটাও দেখাব।’’
প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে প্রাক্তন বোর্ড সচিব আরও জানাচ্ছেন, পুণের কিউরেটর পাণ্ডুরঙ্গ সালগাওকর তীব্র ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, শেষ মুহূর্তে পিচের ধরনে জোর করে পরিবর্তন আনা নিয়ে। শিরকে বলেন, ‘‘পুণের পিচ প্রস্তুতকারক এবং মাঠের কর্মীরা এই অন্যায় কাজ করতে অস্বীকার করেছিল। তখন বোর্ড থেকে উড়িয়ে আনা হল তাদের দু’জন কিউরেটরকে। বাইরে থেকে কর্মীদের এনে ঘাস উড়িয়ে পিচকে ঘূর্ণি করা হয়। ব্রাশ দিয়ে ঘাস ওড়ানো হয়। বোর্ড থেকে আসা দুই কিউরেটরের মধ্যে এক জন প্রতিবাদ করেছিলেন।’’
লোঢা কমিটির সংস্কারের ধাক্কায় বোর্ড বা মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থায় এখন নেই শিরকে। তবুও পুণের পিচ-বিতর্ক নিয়ে কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত বোর্ডের প্রধান প্রশাসক বিনোদ রাইয়ের সঙ্গে। বললেন, ‘‘মৌখিক ভাবে কথা বলেছি। সমস্ত ঘটনা জানিয়েছি ওঁকে। মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থা সরকারি ভাবে যা করার করবে।’’
যা ইঙ্গিত দিলেন, আইসিসি ম্যাচ রেফারির ‘পুওর’ রেটিং নিজের রাজ্যের সংস্থার গায়ে লাগলে সহজে মেনে নেবেন না। নিজে সংস্থায় না থাকলেও পুণেতে এখনও ক্ষমতাশালী তিনি। প্রয়োজনে নিজের রাজ্য সংস্থাকে আইসিসি-তে পিচ নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে বলবেন তিনি। শিরকে গজগজ করে যাচ্ছেন, ‘‘বরাবর আয়োজক সংস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। কিন্তু নিজেদের আর্থিক ক্ষতি করে আমরা কেন তিন দিনে খেলা শেষ করতে যাব?’’