ট্রাম্পের ‘মিডিয়া যুদ্ধ’, বুশের বিরোধিতা

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাবিশ্ব

55482_trump

 

 

 

 

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দৃশ্যত মিডিয়ার বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা। তিনি মিডিয়াকে মার্কিন জনগণের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সাংবাদিকদের বলেছেন সবচেয়ে অসৎ মানুষ। হোয়াইট হাউজের প্রেস ব্রিফিংয়ে শীর্ষ সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। তার প্রেস সেক্রেটারি শন স্পাইসার এমন বাধা সৃষ্টি করেছেন। তিনি হোয়াইট হাউজ থেকে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য ফাঁস বন্ধে নিজস্ব কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময়, পরে ও ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেকবার মিডিয়াকে আক্রমণ করে বক্তব্য রেখেছেন। ফলে দৃশ্যত তিনি মিডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন বলেই মনে হয়। এমনই এক প্রেক্ষাপটে নীরবতা ভেঙেছেন তার দল থেকে নির্বাচিত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। অনলাইন ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত এ বিষয়ে একটি রিপোর্টের শিরোনাম ‘জর্জ ডব্লিউ বুশ ব্রেকস সাইলেন্স টু এটাক ডনাল্ড ট্রাম্পস ওয়ার অন দ্য মিডিয়া’। অর্থাৎ মিডিয়ার বিরুদ্ধে ডনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধে তাকে আক্রমণ করে নীরবতা ভাঙলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। সাংবাদিক জন শারম্যানের লেখা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। মিডিয়া হলো জনগণের শত্রু ডনাল্ড ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের বিষয়ে একমত কিনা এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল একটি অনুষ্ঠানে। জবাবে জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছেন, গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান হলো স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম। তার মতে, ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যদি আমরা নিজেরা এটা চর্চা না করি তাহলে অন্য দেশগুলোকে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে লেকচার করা বা তাদের সামনে গলাবাজি করা কঠিন হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, জর্জ ডব্লিউ বুশ উপস্থিত হয়েছিলেন এনবিসি টিভির টুডে অনুষ্ঠানে। তাতে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন তাকে তীব্র কড়া সমালোচনা হজম করতে হয়েছে। তখন কি তিনি মিডিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের শত্রু বলে বিবেচনা করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি মিডিয়া হলো গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান। আমাদের স্বাধীন মিডিয়ার প্রয়োজন আমার মতো ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার জন্যই। ক্ষমতা ভীষণ আসক্তি এনে দেয়। এই ক্ষমতাই ধ্বংসাত্বক হতে পারে। তাই কোনো ব্যক্তি যখন সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন তখন তাকে, তা তিনি যেই হোন না কেন, যেখানকারই হোন না কেন, তাকে জবাবদিহিতার সামনে দাঁড় করানোর দায়িত্ব মিডিয়ার। এ জন্য উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি ভ্লাদিমির পুতিনের মতো একজন মানুষকে আমি সমঝোতায় আনার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করেছি, যাতে তারা স্বাধীন মিডিয়ার বিষয়টি গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই যদি স্বাধীন, নিরপেক্ষ মিডিয়ার চর্চা না করি তাহলে তো এ নিয়ে অন্যদের ছবক দেয়া খুব কঠিন বিষয়ই হয়ে ওঠে। ওদিকে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা দিয়েছেন। এটা কি তার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেন, প্রথমেই আমাদেরকে দেখতে হবে তার ক্ষমতার মেয়াদ মাত্র এক মাস হয়েছে। তিনি (ট্রাম্প) চার বছর ক্ষমতার মেয়াদ পেয়েছেন। দ্বিতীয়ত. আমি মনে করি এ বিষয়ে তার কাছেই আপনাদের জিজ্ঞাসা করা দরকার যে, তিনি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে চান কিনা এবং সেক্ষেত্রে তিনি সফল হবেন কিনা। বুশ বলেন, সংবাদভিত্তিক মিডিয়া এত বেশি বিভক্ত হয়েছে যে তাতে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা খুবই কছিন। আমি যখন প্রেসিডেন্ট ছিলাম, আপনারা জানেন যে, তখন আপনারা (টিভি চ্যানেলগুলো) গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলেন। কারণ, তখন আপনাদের মতো গুটিকয়েক মিডিয়া ছিল। এখন সব রকমের খবরই বোমার মতো ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন এখন নাম গোপন রেখে সব কিছু বলে দেয়। এটা একটি ভিন্ন জগত। উল্লেখ্য, ‘ফেক নিউজ মিডিয়া’ বা ভুয়া খবরের একটি গলো এনবিসি এমন নিন্দা জানিয়ে গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি টুইট করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওইদিনই তিনি এসব মিডিয়াকে মার্কিন জনগণের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেন। গত সপ্তাহে কনজার্ভেটিভ পলিটিক্যাল একশন কনফারেন্সে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই একই কথা আবার উত্থাপন করেন। তিনি মিডিয়াকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তারা হলো জনগণের শত্রু। কারণ, তাদের (রিপোর্টের) কোনো সূত্র নেই। যেখানে কেউ নেই সেখান থেকে তারা খবর বানায়’। এ ছাড়া হোয়াইট হাউজ থেকে যেসব তথ্য ফাঁস হয় তারও নিন্দা জানিয়ে তিনি টুইট করেছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক ‘লিকার’ বা তথ্য ফাঁসকারীদের থামাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে এফবিআই। এমনকি তারা এফবিআইয়ের ভিতরকার তথ্য ফাঁসকারীদেরও খুঁজে বের করতে পারে নি। ক্লাসিফায়েড বা গোপনীয় তথ্যও পাস করে দেয়া হচ্ছে মিডিয়ার কাছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রে একটি ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
ওদিকে ক্ষমতায় আসার এক সপ্তাহের মাথায় ২৭শে জানুয়ারি সাতটি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার এ নীতির সঙ্গে একমত কিনা তা এনবিসির ওই অনুষ্ঠানে জানতে চাওয়া হয় জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে। হবাবে নিজের অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত করে বুশ বলেন, আমি অভিবাসন নীতির পক্ষে। সেটা হলো স্বাগত জানানো ও আইন শৃংখলা অব্যাহত রাখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *