মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদেশে পলাতক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার শান্তি কমিটির সভাপতি আবদুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার চেষ্টাও চলছে বলে জানান তিনি।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় আবদুল হান্নান খান পিরোজপুর সার্কিট হাউসের হল রুমে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা, সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামে ২৬ জন হিন্দুকে হত্যার অভিযোগ তদন্তে আবদুল হান্নান খানের নেতৃত্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থার তিন সদস্যের একটি দল দ্বিতীয় দফা তদন্তে পিরোজপুর এসেছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে তদন্ত দল ভান্ডারিয়ার পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামের গণহত্যার স্থান পরিদর্শন করেন। এরপর পশারিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মামলার বাদী, সাক্ষী, মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত দলের সদস্যরা। এ সময় হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি নেন তাঁরা।
তদন্ত সংস্থা জানায়, একাত্তরে ভান্ডারিয়া উপজেলার পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামের ২৬ জন হিন্দুকে হত্যা করে স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবর পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামের নিহত নিরোধ চন্দ্র বালার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা বিজয় কৃষ্ণ বালা বাদী হয়ে পিরোজপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সত্যব্রত সিকদারের আদালতে চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠান। মামলার আসামিরা হলেন উপজেলার হেতালিয়া গ্রামের মৃত খবির উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে আমির হোসেন হাওলাদার ও ফজলুল হক হাওলাদার, একই গ্রামের মৃত শামসুল হক হাওলাদারের ছেলে নূরুল আমিন হাওলাদার ও মৃত আবুল হাসেমের ছেলে আবদুল মান্নান। বর্তমানে আসামিরা পলাতক রয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা পাকিস্তানি সেনাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে ২৪ অক্টোবর (৯ কার্তিক) ভোরে আসামিরা পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামে বিজয় কৃষ্ণ বালার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবাসহ সাতজনকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামের বনমালী গাছারুর বাড়ির পুকুরপাড়ে নিয়ে এক দড়িতে বেঁধে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে বিজয় কৃষ্ণ বালা বেঁচে গেলেও তাঁর বাবা নিরোধ চন্দ্র বালা, ছোট ভাই রণজিৎ বালা, বোনের স্বামী সুকুমার মিস্ত্রি, প্রতিবেশী গঙ্গাচরণ হালদার, অমূল্য মিস্ত্রি, সমীর মিস্ত্রি মারা যান। এ ছাড়া ৩ জুন (২০ জ্যৈষ্ঠ) আসামিরা পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামের উপেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি, চিত্তরঞ্জন ব্যাপারী, সতীশ চন্দ্র ব্যাপারী, শরৎ চন্দ্র মাঝি, প্রকাশ হালদারকে গুলি করে হত্যা করে। আসামিরা বিভিন্ন সময় একই গ্রামের আরও ১৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে। আসামিরা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নারীদের ধর্ষণ করে।
এর আগে গত বছরের ৭ এপ্রিল তদন্ত সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সত্য রঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল প্রথম দফায় মামলাটি তদন্ত করতে ভান্ডারিয়ায় আসেন।