দুই লাখ ৪২ হাজার শূন্যপদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ

82094_Hasina-pm-1-full2

গ্রাম বাংলা ডেস্ক:এক বছরের ব্যবধানে অনুমোদিত সরকারি পদের সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৬০ হাজার ৯৯৩ । এ মুহূ‌র্তে দেশে দুই লাখ ৪২ হাজার ৪১২টি সরকারি পদ শূন্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণের নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ২১ অক্টোবর মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। এরপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ ব্যাপারে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। বেশির ভাগ নিয়োগ এই অথর্বছরেই শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রথম শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে ১২ হাজার ৬৯৬টি। এর মধ্যে ১০ হাজার ৬৬৭টি রয়েছে সহকারী সচিব পদমর্যাদার। খুব শিগগির প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে প্রায় দুই হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ৩৫তম বিসিএসের আবেদন গ্রহণ শেষ হয়েছে। বাকি শূন্য পদ রয়েছে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর। ইতিমধ্যে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শূন্য পদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে শূন্য পদ পূরণের জন্য তাগাদা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, মন্ত্রণালয়গুলো নিজ উদ্যোগেই এগুলো পূরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। শূন্য পদের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব না হলেও সহনশীল পর্যায়ে নামানোর চেষ্টা চলছে।
মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বৈঠকে ১০ হাজারের বেশি শূন্য পদ থাকা সাতটি মন্ত্রণালয়ের তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সাতটি মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদের সংখ্যাই এক লাখ ৩১ হাজার ৬৩৪।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ-প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তিনি এও বলেছেন, এসব নিয়োগ যেন ন্যায়ভিত্তিক ও প্রতিযোগিতামূলক হয়।

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত অথর্বছরে (২০১৩-১৪) অনুমোদিত এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি পদের মধ্যে বেশির ভাগই নতুন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুমোদিত পদ ছিল ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৩। গত অর্থবছরে অনুমোদিত পদ বাড়ে প্রায় ১৩ শতাংশ এবং পদের সংখ্যা হয় ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৩১৬।

এ প্রসঙ্গে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, নতুন পদ সৃষ্টি ও শূন্যপদ পূরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। যৌক্তিকতা থাকলে পদ সৃষ্টি বা শূন্য পদ পূরণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সাধারণত আপত্তি করে না।
সচিব কমিটির সাম্প্রতিক এক সভায় নিয়োগে দীঘর্সূত্রতা নিয়ে আলোচনা হয়। সভা থেকে নতুন পদ সৃষ্টি, শূন্য পদ পূরণসহ নিয়োগ-প্রক্রিয়ার ফাইলের অনুমোদন-প্রক্রিয়া সহজ করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশ অনুযায়ী, মূল মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করুক বা না করুক, মূল মন্ত্রণালয়ে ফাইল ফেরত পাঠাবে।
জনপ্রশাসনসচিব বলেন, এতে মাঝখানে অর্থ থেকে জনপ্রশাসন হয়ে মূল মন্ত্রণালয়ে ফাইল যাওয়ার সময়টুকু বাঁচবে।

প্রধানমন্ত্রী দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিলেও চলতি অর্থবছরের মধ্যে এই বিপুলসংখ্যক নিয়োগ সম্পন্ন হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, প্রচলিত নিয়মে একটি নিয়োগ সম্পন্ন হতে অন্তত এক বছর লাগে, আর জটিলতা বাধলে কয়েক বছরও লেগে যায়।

সাত মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদ: স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শূন্য পদ সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ১৪৬টি। বেশির ভাগই চিকিৎসক ও নার্স। বতর্মানে স্বাস্থ্য খাতে এক লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৫টি পদ রয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ১৫ হাজার ৫২৪টি পদ শূন্য। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২১ হাজার ৮৭০টি পদ শূন্য। বেশির ভাগই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হবে প্রায় ২৪ হাজার। ইতিমধ্যে নয় হাজার শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ-প্রক্রিয়া চলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০ হাজার ৬১২টি পদ শূন্য, এগুলোর বেশির ভাগই পুলিশ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৩ হাজার ৯১৪টি পদের মধ্যে বেশির ভাগই শিক্ষক। সরকারি কলেজের প্রভাষকের প্রায় তিন হাজার পদ শূন্য। ৩৫তম বিসিএস ও বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার কলেজগুলোর শূন্য পদ পূরণ করা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির এক হাজার ৯৬৫টি পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলে আসছে কয়েক বছর ধরে। ২০১৩ সালের জুন মাসে ওই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তার পর থেকে অনিয়মের অভিযোগে ওই নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। অথচ জনবলের অভাবে অধিদপ্তর ও এর আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে।

এ ছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ১২ হাজার ১০৭ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ১১ হাজার ৪৯৩টি পদ শূন্য রয়েছে।
নতুন বছরের শুরু থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), সমাজসেবা অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, পাট অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণির পদে ২০ হাজার লোক নিয়োগ করা হবে।

কামাল নাসের চৌধুরী বলেন, জনবল ঘাটতি স্বাভাবিক কাজের ব্যাঘাত ঘটায় এবং যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সেবার পথ রুদ্ধ করে। তাই সরকারের আন্তরিকতা ও অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে এই অথর্বছরের মধ্যে নিয়োগ চূড়ান্ত করতে না পারলেও প্রক্রিয়া শুরু ও তা এগিয়ে নেওয়ার কাজ অনেক দূর এগোবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *