ব্রাহ্মণবাড়িয়া; সৌভাগ্যবান ফারহানা মিলি (২৮)। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ১ হাজার টাকার নোট পোড়ানোর মামলার আসামি হওয়ার তিন মাসের মাথায় মিললো তার জেলা মহিলা আওয়ামী লীগে ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। ‘ইচ্ছে করছে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে কিন্তু, ভেবে দেখলাম, একটা জন্মদিন পালন করবো এর! তারপর জ্বালাবো! জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ১ হাজার টাকার নোট পোড়ানোর এমন আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে মাস তিনেক আগে ফেসবুকে নোটটিসহ পোস্ট দিয়েছিলেন মিলি। ওই ঘটনায় সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের ছোটহরণ গ্রামের ইসমাইল মিয়ার মেয়ে মিলির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৬শে অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করেন শহরের পূর্ব পাইকপাড়ার মশিউর রহমান লিটন। মিলির রাজনৈতিক বয়স একেবারেই নগণ্য। স্বামীর সঙ্গে মামলায় নেমে জেলার নারী নেত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে শহরে আসেন। এরপর নিজেই নেত্রী হয়ে যান। ফেসবুকে সার্বক্ষণিক সরব এই তরুণী। ৬টি ফৌজদারি মামলার আরেক আসামি মোফেজা বেগমকে দেয়া হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদকের আরেকটি পদ। এসব মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম জানান- নারী ও শিশু নির্যাতন এবং আগুনে পোড়া মামলাও রয়েছে এই ৬ মামলার মধ্যে। সবক’টি মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। একটি মামলার রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক দাদন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত দলের নেতাকর্মীদের কাছে।
রোববার জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের একতরফা সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ২০ জনের পদ ঘোষণা করা হয়। এর বাইরেও আরো কয়েকটি পদ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই নানা অভিযোগে দুষ্ট। মামলার আসামি ছাড়া সরকারি চাকরিজীবী, মা-মেয়ে, দাদন ব্যবসায়ীও পদ পেয়েছে ওই কমিটিতে। সভানেত্রী ছাড়াও তার মেয়ে ও বোন পদ পেয়েছেন নতুন কমিটিতে। দলের দীর্ঘদিনের নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের বাদ দিয়ে এদের পদ দেয়ায় সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ। প্রচণ্ড সমালোচনা হচ্ছে এই কমিটি নিয়ে। একতরফা সম্মেলনের বিরোধিতায় ওইদিন বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। সম্মেলনে পদ ঘোষণার একদিন পরও গণমাধ্যমে তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নতুন কমিটিতে পদপ্রাপ্তদের নাম নিশ্চিত করেছে। তারা হলেন- সভানেত্রী মিনারা আলম, সহ-সভাপতি সাদেকা বেগম, আসমা বেগম, রেহেনা বেগম রানী, নাসিমা চৌধুরী, শামীমা মুজিব, নিলুফা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলেয়া চৌধুরী, মারহুমা আক্তার কল্পনা, রুমানুল ফেরদৌস, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারহানা মিলি, নাসরিন হালদার শিশির, আফরিন খন্দকার করুনা, আকলিমা রহমান, মোফেজা বেগম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাজমুন্নাহার, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক মিলি ইসলাম, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক নাসিমা কাইয়ুম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ফারজানা আক্তার লাকী, অর্থ সম্পাদক আনার কলি/মুফেজা বেগম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শিল্পী আক্তার, বন ও পরিবেশ সম্পাদক সোনিয়া আক্তার সূচি, দপ্তর সম্পাদক ফেন্সি বেগম, সদস্য স্বপ্না কবির, নিলা সিদ্দিকা, মমতাজ বাশার, মুক্তি খানম, সেলিনা মাহবুব, রোখসানা বেগম, তাহমিনা আক্তার পান্না, রোকেয়া বেগম ও উমা পাল। পদ ঘোষণার পরপরই গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে বিতর্কিতদের রাখার সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে। দলীয় সূত্রগুলো জানায়- নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতির পদ পাওয়া সাদেকা বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। আরেকজন সহ-সভাপতি নিলুফা ইয়াসমিন। তার মেয়ে মারহুমা আক্তার কল্পনাকে করা হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সাংগঠনিক সম্পাদক আকলিমা রহমান সভানেত্রী মিনারা আলমের মেয়ে। তার বোন নাসিমা কাইয়ুমকে করা হয়েছে শ্রম সম্পাদক। যুব মহিলা লীগের ৫ জনকে ঠাঁই দেয়া হয়েছে এই কমিটিতে। তারা হচ্ছেন- সদর উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি মারহুমা আক্তার কল্পনা, শহর যুব মহিলা লীগের সভাপতি আফরিন খন্দকার কারুনা, আশুগঞ্জ উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি নিলা সিদ্দিকা, জেলা যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি-১ মুক্তি খানম, সহসভাপতি-২ তাহমিনা আক্তার পান্না। জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলম তারা দুলি বলেন, আমার যুবলীগ ছিনতাই করে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ বানানো হয়েছে। তিনি বলেন- কল্পনা ছাড়া কেউই রোববার মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যাইনি। তারপরও আমার সক্রিয় কর্মীদের সেখানে পদ দেয়া হয়েছে। আমি অনেক কষ্ট করে তাদেরকে গড়ে তুলেছি। আমি এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে লিখিতভাবে এর প্রতিকার চাইবো। এ ব্যাপারে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত বলেন, যারা রাজপথে মিছিল-মিটিংয়ে থাকে, আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় তাদেরকেই এ কমিটিতে রাখা হয়নি। এক পরিবারেই একাধিক পদ দেয়া হয়েছে। যাদেরকে কখনোই রাজনীতিতে দেখা যায়নি। এ কমিটিতে আরো অনেককেই রাখা হয়েছে যারা বিতর্কিত এবং অনেকেই আমাদের অচেনা। তিনি বলেন কমিটি যাকে-তাকে নিয়ে করা হবে বলেই দলের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীদের আশঙ্কা ছিল। সেকারণে আমরা সম্মেলনে যাওয়া থেকে বিরত ছিলাম। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে জেলার অধিকাংশ ও ৮ উপজেলার নেতৃবৃন্দ আবেদন জানিয়েছিলাম সম্মেলন পিছিয়ে দেয়ার। আমরা চেয়েছিলাম ব্যাপক পরিসরে সবাইকে নিয়ে সম্মেলন। সম্মেলনের তারিখ পর্যন্ত আমাকে জানানো হয়নি। জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মিনারা আলম তার বোন ও মেয়েকে কমিটিতে রাখার বিষয়ে বলেন তারা আগের কমিটিতেও ছিল। নতুন কমিটি আমার ছেলে সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দেবে।