সরকারের মদদে ধারাবাহিক ব্লগার হত্যা হয়েছে: ইমরান

Slider সারাদেশ

10469061_1495320267409792_2547980005685831990_n

ঢাকা;  সরকারের মদদে ধারাবাহিকভাবে ব্লগার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। তাঁর প্রশ্ন, যে আন্তরিকতা সরকার সাংসদ খুন হলে দেখাতে পারে, কেন একই আন্তরিকতা ব্লগারদের ক্ষেত্রে দেখাতে পারে না।
বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায়ের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ রোববার রাজধানীর শাহবাগে এক আলোচনা সভায় ইমরান এইচ সরকার এ মন্তব্য ও প্রশ্ন করেন। ‘মুক্তবুদ্ধিচর্চা ও সামাজিক ন্যায়বিচার: কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চ।
সভায় মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে একজন সাংসদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটিকে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের কর্মকর্তারা “ক্লু-লেস” হত্যাকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ওই সময় ক্ষমতাসীন দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করে বক্তব্য এসেছিল। এখন জানা গেছে আসল খুনি মহাজোটের ভেতরেই ঘাপটি মেরে বসেছিল।’

ইমরান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ জন্য সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘দুই মাসের ভেতরে যদি একটি ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন সম্ভব হয়, তবে কেন ত্রিস্তর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে হওয়া অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন দুই বছরেও দাখিল করা সম্ভব হয় না?’ অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের দুই বছরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ১৬ বার পিছিয়েছে দাবি করে তিনি এ জন্য হতাশা প্রকাশ করেন।

অভিজিৎ রায়ের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, ব্লগাররা ইন্টারনেটে লেখালেখির মাধ্যমে তাঁদের মতামত ও চিন্তাধারা অন্যের কাছে তুলে ধরেন। কারও সেটি পছন্দ না হলে তিনি আরেকটি লেখা লিখতে পারেন। কিন্তু দেখা গেল, তাদের কথার কোনো যৌক্তিক বিরোধিতা না করে তাঁদের হত্যা করা হলো। এতেই বোঝা যায়, এ দেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চার ঠিক কতটা অনুকূল পরিবেশ।
অজয় রায় বলেন, ‘আমাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, শিগগিরই অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। আমি আশা করছি, তাঁরা কথার বরখেলাপ করবেন না। একই সঙ্গে দাবি জানাচ্ছি কেবল অভিজিৎ নয়, সব হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।’
নিহত ব্লগার রাজীব হায়দারের বাবা চিকিৎসক নাজিমুদ্দিন বলেন, ‘আমি নিজে পুত্রশোক পেয়েছি কিন্তু আমি জানি, এই গণজাগরণের সন্তানেরা বর্তমানে বাংলাদেশকে যে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার অপচেষ্টা চলছে, তা রুখে দেবে। যারা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করতে চায়, তাদের রুখে দিতে প্রয়োজনে রাজীবের মতো অসংখ্য রাজীব জীবন দেবে।’
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, অভিজিৎ রায়ের সহোদর অনুজিৎ রায়, আদিবাসী যুব পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, অংকুর প্রকাশনী, মুক্তিশিখা, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চ, জনউদ্যোগ ইত্যাদি ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
আলোচনা সভা শেষে একটি আলোর মিছিল শাহবাগ থেকে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকের অভিজিৎ চত্বরে (যেখানে অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা করা) যায়। সেখানে আলোক প্রজ্বালন ও নীরবতা পালনের মাধ্যমে অভিজিৎ রায়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী-সংগঠকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *