কামরুন নাহার ববি
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
গ্রাম বাংলা নিউজ২৪.কম
ঢাকা ;গত বছর ডিসেম্বরের শুরুর দিক থেকে জামায়াত-শিবিরের টানা হরতালের তাণ্ডব চলতে থাকে। বাদ যায়নি ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবারও। ওই দিন ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনির সামনে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের সময় গুলিতে আহত হয়ে শান্ত ইসলাম নামের শিশুটি লুটিয়ে পড়ে থাকে রাস্তায়।
স্বাধীনতার পর গত চার দশকে অনেক উত্থান-পতন, ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়েও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে যে উন্নতি করেছে তা এখন অনেক দেশের জন্য মডেল। তবু বাংলাদেশ এখনো একটি স্বল্পোন্নত দেশ, যার সামনে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার হাতছানি আছে। বেশি দিন নয়, ২০২১ সালেই সরকার দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে চায়। প্রায় সব মহল থেকেই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় যে অর্থনীতির চাকা সচল থাকলে বাংলাদেশের মধ্য আয়ের দেশ হতে বাধা নেই। কিন্তু দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতির বিষফোঁড়া- হরতাল।
হরতাল একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচি। রাজনৈতিক দলগুলো কোনো দাবিতে হরতাল ডেকে তা পালনের জন্য জনগণকে আহ্বান জানাবে- এটাই এ কর্মসূচির মূল বিষয়। কিন্তু বাস্তবে জনগণকে হরতাল পালনে বাধ্য করতে ব্যাপক সহিংসতা করা হচ্ছে, অতীতেও হয়েছে। গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, বোমা হামলা, রেললাইন উপড়ে ফেলা, মালবাহী ট্রাক পুড়িয়ে ফেলার মতো অর্থনীতি ধ্বংসের কর্মকাণ্ড নির্বিচারে চালানো হচ্ছে হরতালে। এ কারণে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইন করে হরতাল-অবরোধ বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, ব্যবসায়ী মহলসহ ভুক্তভোগী সবাই।
বাংলাদেশের সংবিধানে রাজনৈতিক কর্মসূচি, সভা, সমাবেশের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’
কিন্তু এ দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বার্থে হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয় বা দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এই কর্মসূচি মনে হয় সরকারের বিরুদ্ধে নয়, এটা জনগণের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এসব কর্মসূচিতে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, বোমা হামলা, মানুষ হত্যা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হরতাল নিষিদ্ধ চাই
আইনে হরতাল : ১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঘন ঘন হরতাল ডাকে বিএনপি। তখনো হরতালে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা চলে। অন্যদিকে হরতালবিরোধী কর্মসূচি দিতে থাকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। এতে বিশৃঙ্খলার মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ওই বছর হাইকোর্ট স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। ১৩ মে হাইকোর্ট একটি রায় দেন। রায়ে ‘হরতাল ও হরতালবিরোধী তৎপরতা ধর্তব্য অপরাধ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী ও বিচারপতি মো. লতিফুর রহমানের বেঞ্চের দেওয়া রায়ে বলা হয়, সত্য যে হরতাল, ঘেরাও এবং অবরোধ সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা। তবে এসব কর্মসূচি জনজীবনে শান্তি বিঘ্নিত ও হুমকির সম্মুখীন করে তোলে, যা অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ধরনের কর্মসূচিতে প্রকৃতপক্ষে নৈতিক সমর্থনমূলক সাড়াই প্রত্যাশিত। কিন্তু নৈতিক শক্তির অবসান ও অপরাধপ্রবণ শক্তির উত্থানের মধ্যের সীমারেখাটি খুবই সূক্ষ্ম।
হাইকোর্টের এই রায়ের পরই বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (প্রয়াত) রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল বিভাগে ওই আপিলের শুনানি হয় ২০০৭ সালে। আপিল বিভাগ ওই বছরের ২ ডিসেম্বর রায় দেন। রায়ে হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করা হয়। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, দেশে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী হরতালে বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা আমলযোগ্য ও বিচার্য। পুলিশ ও নিম্ন আদালত প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা নিতে পারে। কাজেই পৃথক নির্দেশনার প্রয়োজন নেই।
ভারতের আইনে বন্ধ্ : ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় আছে হরতালের মতো কর্মসূচি ‘বন্ধ্’-এর বিরুদ্ধে। বন্ধ্-এর বিরুদ্ধে প্রথম রায় আসে ১৯৯৭ সালে, যখন ভারতের কেরালা রাজ্যের হাইকোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দেন। ওই রায়ে জোর করে বন্ধ্ পালনে বাধ্য করাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। পরের বছর প্রধান বিচারপতি জে এস ভার্মাকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের তিনজনের একটি বেঞ্চ ওই রায়টি বহাল রাখেন।
২০০৪ সালে মুম্বাই হাইকোর্ট ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও শিবসেনাকে ২০ লাখ রুপি করে জরিমানা করেন মুম্বাইতে বন্ধ্ আহ্বান করার দায়ে। বাংলাদেশে হরতালের নামে সহিংসতা বন্ধে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কঠোর হতে হবে বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নিলে সহিংসতা কমে আসবে।
হরতাল যুগে যুগে : হরতালের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রায় ১০৭ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯০৬ সালের কালো আইনের বিরুদ্ধে অহিংস হরতাল হয়। এই উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী ১৯১৮ ও ১৯১৯ সালে রো-লেট বিল-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ অহিংস হরতাল পালন করেছিলেন। ১৯৩০ সালের দিকে মাঝেমধ্যে ওইরূপ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন সহিংস রূপ নিলে তিনি অহিংস আন্দোলনকেই প্রাধান্য দেন। এ দেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম হরতাল পালিত হয় ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে। আহ্বান করেছিল তমুদ্দিন মজলিশ ও পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। এ ক্ষেত্রে হরতালকারীরা অহিংস ছিল। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান সরকার হরতালকারীদের হটাতে গুলি চালায়। তার পরও সাধারণ জনগণের ওপর চড়াও হয়নি হরতালকারীরা।
সেকালের হরতাল আর একালের হরতাল মোটেও এক নয়। ‘হরতাল করব না’ বলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কখনই কথা রাখতে পারে না। তাই হরতাল হচ্ছে। সঙ্গে সহিংসতা হচ্ছে। কিছুতেই তা বন্ধ হচ্ছে না। হরতাল দেওয়া যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, হরতাল পালনে বাধ্য করা আর হরতাল ভাঙতে বাধ্য করা উভয়ই গণতান্ত্রিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। গাড়ি ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও, রাস্তা অবরোধ, পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে বাসযাত্রীদের পুড়িয়ে মারা হরতালে এসব উদ্ভট কাণ্ড ঘটেই চলেছে। জাতীয় সম্পদ নষ্ট করতে হরতালকারীদের কোনো সংকোচ নেই।
এক পরিসংখানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালের শুরু থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচটি পূর্ণ দিবস ও ১২টি অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত পালিত হয় ১০টি পূর্ণ দিবস ও ৪৩টি অর্ধদিবস হরতাল। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০৪টি পূর্ণ দিবস ও ১৯৪টি অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়। ১৯৯০ সালের ৭ ডিসেম্বও থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত পূর্ণ দিবস হরতালের সংখ্যা ১৫৫ ও অর্ধদিবস হরতালের সংখ্যা ২২৩টি। ১৯৯৬ সালের ৩১ মার্চ থেকে ২০০০ সালের ১২ জুন পর্যন্ত পালিত হয় ১৫৯টি পূর্ণ দিবস ও ১০৭টি অর্ধদিবস হরতাল। পত্রপত্রিকার হিসাব অনুযায়ী, ২০০০ সালের ১২ জুনের পর থেকে ২০১৪ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ২৬৭টি হরতাল পালিত হয়।
২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশে কোনো হরতাল পালিত হয়নি।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সরকারব্যবস্থার চেয়ে ১৯৯১ সাল থেকে শুরু হওয়া গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় হরতাল অনেক বেশি হচ্ছে বিশ্লেষণ করে বের করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তাদের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে তিন দিন, ১৯৭১ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে সাত দিন, ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত প্রতিবছর ১৭ দিন ও ১৯৯১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ৪৬ দিন করে হরতাল হয়েছে। ২০১৩ সালের টানা হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি ছিল ভয়ানক সহিংস।
সংবিধানে আছে… : সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনসভা, শোভাযাত্রা বা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে হবে শান্তিপূর্ণ। অংশগ্রহণকারীদের থাকতে হবে নিরস্ত্র। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ঘটছে এর উল্টা ঘটনা। পেট্রল বোমা, ককটেল, লাঠি, অস্ত্রহাতে নামে হরতালের পিকেটাররা, যা বেআইনি। সংবিধানের কোথাও হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির স্বাধীনতার কথা বলা নেই। তবু ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে, দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দলগুলো এসব কর্মসূচি দিয়ে চলেছে। সভা-সমাবেশ করার অধিকারের বিষয়টি সংবিধানে থাকায় উচ্চ আদালতে হরতাল বন্ধ চেয়ে করা রিট আবেদনেও কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত কোনো বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশে অবাধ চলাফেরার অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের হরতাল-অবরোধ নাগরিকের এই অবাধ চলাফেরা বাধাগ্রস্ত করছে। সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনানুযায়ী ব্যক্তিজীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। কিন্তু বর্তমানের হরতাল-অবরোধ ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করছে।
সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’ ভুক্তভোগীরা বলেন, যদি তাই হয়, তাহলে যে ব্যক্তি স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছে না, যে ব্যক্তি তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে, যে ব্যক্তি রাস্তায় গাড়ি বের করতে পারছে না, যে ব্যক্তি স্বাস্থ্য-সুবিধা নিতে পারছে না, যে ব্যক্তি অফিস-আদালতে যেতে পারছে না, যে ব্যক্তি তার ছেলেমেয়েকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে পারছে না, সে ব্যক্তি কেন আইনের আশ্রয় পাবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আইন করে হরতাল-অবরোধ বন্ধ করলে কেউ আর সংবিধানের এসব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। আর তাই সময়ের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আইন করে হরতাল বন্ধের দাবি উঠেছে।
হরতাল নিষিদ্ধে চাই পৃথক আইন : গত ৬ মার্চ আইন করে হরতাল বন্ধের দাবি জানায় দেশের প্রধান ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই। এই সংগঠনের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতারা সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সাম্প্রতিককালে হরতালের সহিংসতা, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি, মানুষ হত্যার ঘটনা তুলে ধরে তাঁরা বলেন, ‘হরতাল খুনোখুনি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন চাই আমরা।’ গত বছর দেশব্যাপী ব্যবসায়ীরা হরতাল বন্ধে আইন করতে মানববন্ধন করেন।
এর আগে গত সংসদে ‘জনস্বার্থ বিল ২০১০’ নামে সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু (বর্তমানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী) সংসদে একটি বিল আনেন। এই বিলে হরতাল বন্ধে আইন প্রণয়নের খসড়া সংসদে উপস্থাপিত হয়। সংসদে এই আলোচনাও হয়। পরে বিল উত্থাপনকারীকে হরতালবিরোধী আইন নামে বিলটি নতুন করে উপস্থাপন করতে বলা হয়। পরে সেটি আর উত্থাপিত হয়নি।
হরতালের নামে অরাজকতা, নৃশংসতা বন্ধে পৃথক আইন করা যেতে পারে বলে মনে করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, হরতালের নামে যে সহিংসতা চলছে তা মেনে নেওয়া যায় না। এটা বন্ধে পৃথক আইন করা যেতে পারে, যার নাম হবে ‘হরতালে সহিংসতা প্রতিরোধ আইন’।
হরতাল বন্ধে আইন করতে সংসদ সদস্যরাও আগ্রহী। গত ১০ সেপ্টেম্বর সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নান প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘দেশের অগ্রগতিতে হরতাল একটি চরম বাধা। আইন করে হরতালকে সাময়িকভাবে হলেও নিষিদ্ধ করে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা যায়। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন কি না।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ চাইলে আইন করে হরতাল বন্ধ করা যায়।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাস হরতালের নামে চলছে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হরতাল বন্ধের দাবির সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত। আইন করে হরতাল বন্ধ করলে ব্যবসায়ীরা খুশি হবেন। তাঁরা চিরকালই হরতালের বিপক্ষে। কারণ রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হরতাল নয়। এত কিছু আইন করে বন্ধ হচ্ছে, হরতাল কেন নয়।’ তিনি বলেন, ‘আজকের হরতালে কোনো পিকেটিং হচ্ছে না। তার পরও আন্তজেলা পরিবহন বন্ধ। হরতাল হলেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসে। এটা করে কী উপকার হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়।’
জনগণ হরতাল চায় কি না তা জানার জন্য গণভোটের আয়োজন করা যায় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণভোট প্রয়োজন নেই। জরিপ করলেই এ বিষয়ে জানা যাবে। হরতাল বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলো গণভোটের আয়োজন করবে না।
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘হরতাল রাজনৈতিক প্রতিবাদের একটি ভাষা, রাজনীতিবিদরা এর ব্যবহার করেন। তাদেরই হরতালের বিকল্প একটি কর্মসূচি খুঁজে বের করতে হবে। কারণ একবিংশ শতাব্দীতে হরতালের মতো কর্মসূচি দেওয়া সমীচীন নয়।’
সূত্র;কালের কন্ঠ