“আবার এলো একুশ”
—> এহসানুর রহমান আক্তাবুর
আবার এলো একুশ কৃষ্ণচূড়ার লালে,
ফাগুনের হাওয়া নিয়ে বিষন্ন সকালে।
কোকিল কাঁদিছে বসে শিমূলের চূড়ায়,
ছেলেহারা বঙ্গমাতা ছেলের স্মৃতি কুড়ায়।
ভাষার তরে অকাতরে প্রাণ দিলো যে দামাল,
পলাশ, শিমূল, কৃষ্ণচূড়া তাদের রক্তে লাল।
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার বুকের রক্ত ঢেলে,
রক্তস্নাত বর্ণমালা আনলো মায়ের কোলে।
বিমর্ষ মায়ের মনে স্মৃতিরা জমায় ভীড়,
ঝাপসা করলো দৃষ্টি দুঃখিনীর আঁখি নীর।
রঙ্গনের পান্ডুর চোখে ভেসে উঠে রাজপথ,
“রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” শ্লোগানে শপথ।
গুলিবর্ষণের শব্দ হলো, নিস্তব্ধ হলো শ্লোগান,
জীবন দিয়ে রাখলো তারা বাংলা ভাষার মান।
নিযুত সালাম জানাই ভাষা শহীদদের তরে,
যতদিন ফুটবে লাল ফুল তোমরা রবে অন্তরে।
মাগো, তোমাকে নির্বাক করে আমাকে দিয়েছো বোল,
আমাকে দিয়েছো দুহাত ভরি খালি করে তব কোল।
কী করে ঘুচাবো হে জননী তোমার কষ্টগাঁথা,
ছেলেহারা শোকে কতো যে কাতর তুমি হে বঙ্গমাতা!
মাগো, তোমার ভাষা বিস্তৃত আজ আন্তর্জাতিক ভূমে,
অধরে তোমার স্মিত হাসি যাচি পবিত্র ললাট চুমে।
মাগো, একটু হাসো এবার মুছে ফেলো আঁখিজল,
চিত্কার করে মা ডাকবার পেয়েছি যে মনোবল।
লাল গোলাপের সুবাসে তোমার ছেলেদের গন্ধমাখা,
মাগো, রক্তজবার অবয়বে তাঁদেরই ছবি আঁকা।
শ্যামল বনে পাখির গুঞ্জনে তাঁদের কন্ঠ ভাসে,
ঝিলে বিলে শতদলে তাঁদেরই শ্রীমুখ হাসে।
বাক স্বাধীনতায় বাংলা বুলি এনে দিলো যে গুণী,
বুকের গহনে পুষবো তাঁদের ভুলবোনা, ভুলিনি।
দিবস-যামী হরষ ব্যথায় যতো কথা যাই বলি,
তাঁদের কথার পসার যেনো তাঁদেরই মুখের বুলি।
ভাইয়ের বন্ধনে বোনের প্রীতি মায়ের স্নিগ্ধ মমতায়,
তোমারা আছো, থাকবে সদা বাংলার অববাহিকায়।
সবুজ অরণ্যে পাহাড়ের শিখরে নদী নালা ডুবা বিলে,
ফসলের ক্ষেতে মেঠো পথে নীল আকাশ বনফুলে।
তোমরা আছো, থাকবে সদা বাংলা বর্ণে হেসে,
হে ভাষা শহীদ, অমর তোমরা পুণ্যভূমি বাংলাদেশে॥
রচনাঃ ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭।