ঢাকা; ভয়াবহ তথ্য। দেশে মদে আসক্ত নারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান, ৬ লাখ নারী নিয়মিত মদ পান করেন। দেশে মদপানকারীর সংখ্যা ৬০ লাখ। এরমধ্যে ১০ শতাংশই হচ্ছেন নারী। আর এর বেশির ভাগ হচ্ছে তরুণী।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দেশের সব ইউনিয়ন, মাদক নিরাময় কেন্দ্র এবং সরকারি নিবন্ধনকৃত বার ও পাঁচ তারকা হোটেলগুলোয় জরিপ চালিয়ে এ পরিসংখ্যান তৈরি করেছে।
এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (গোয়েন্দা) মো. নজরুল ইসলাম জানান, দিন দিন অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ছেন নারীরা। এরমধ্যে তরুণীর সংখ্যা বেশি। তিনি জানান, দেশে বর্তমানে ৬ লাখ নারী মদপান করেন। এ সংখ্যা গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নারীরা গর্ভাবস্থায়ও মদপান করে। মদপানের ক্ষতির বিষয়ে সারা দেশের নারীদের সচেতন করার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যেসব নারীর মদে আসক্তি রয়েছে এর বেশির ভাগ উচ্চবিত্ত পরিবারের। ৬ লাখ নারী মদপানকারীর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ হচ্ছে বিভিন্ন বয়সী। আর এর মধ্যে ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে, বাকি ৪০ শতাংশ হচ্ছেন নারী শিক্ষার্থী। যারা দেশের বিভিন্ন কলেজ ও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
সূত্র জানায়, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী অনুমতি নিয়ে নিবন্ধনকৃত খোলা বারগুলোয় মদপান করেন। সরকারের অনুমতি থাকার কারণে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায় না। এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন চার তারকা ও অভিজাত হোটেলগুলোয় তারা মদপান করেন। ঢাকার বাইরে বন্দর নগীর চট্টগ্রাম ও সাগরকন্যাখ্যাত কক্সবাজারের হোটেলগুলোর বারে জমে নারীদের মদপানের আসর।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জরিপে দেখা গেছে, যেসব নারী ইয়াবা ও সিসায় আসক্ত, তারা মদপানে ঝুঁকে পড়েন। অনেক নারী ইয়াবা ও সিসা সেবন করে মদপান করেন। এছাড়া অনেক নারীর নেশায় কোনো রকম আসক্তি না থাকা সত্ত্বেও বন্ধু ও বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বা অন্য বন্ধুর অনুরোধে মদপান করেন। অভিজাত শ্রেণির অনেক পরিবার মদপানকে ব্যক্তিগত ফ্যাশন মনে করার কারণে ওই পরিবারের অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের মদপানে বারণ তো দূরের কথা, তারা একসঙ্গে বিভিন্ন পার্টিতে মদপান করেন। এছাড়া রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের নাইটক্লাবগুলোয় দেদারসে নারীরা মদপান করেন।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে দেশে নারী মদপানকারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৯০ হাজারে। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ঠেকে ৫ লাখ ৬০ হাজারে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে নারী মদপানকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখে। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে নারী মদপানকারীর সংখ্যা সোয়া ৩ লাখ এবং শুধু ঢাকায় ১ লাখ নারী মদপান করেন।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুধীর রঞ্জন দেব বলেন, মদপান করার কারণে নারীদের হৃদরোগের সমস্যা বেড়ে যায়। হার্টে তাদের বেশি পরিমাণের রক্ত জমাট বাঁধে। এতে হার্ট অ্যাটাক হয়ে অনেক নারী অকালে মারা যান। তিনি বলেন, মদপানে কর্মশক্তি হারিয়ে যায়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়।