ফিরে দেখো মালিখালী
———অনুপ কুমার মন্ডল
——ধান, নদী, খাল এই তিনে মিলে বরিশাল। বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলাধীন মালিখালী গ্রাম। মধুমতী, তালতলা ও বলেশ^র এই তিনটি নদী মালিখালী গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মালিখালী গ্রামটি পিরোজপুর, বাগেরহাট এবং গোপালগঞ্জ জেলার মিলন স্থলে অবস্থিত। এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিল বদনচাঁদ ঠাকুর। প্রতি বছর মাঘী পূর্নিমায় ঠাকুর বাড়ীতে হাজার হাজার লোকের মিলন ঘটে। তখন ঠাকুর বাড়ী কানায় কানায় পূর্ন থাকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত বদনচাঁদ ঠাকুরের ভক্ত তথা মতুয়া সম্প্রদায়। ঢাক, ঢোলের বাজনা, কীর্তন সবকিছু মিলে এ যেন এক পূন্যভূমিতে পরিনত হয়। মনে হয় মালিখালী যেন বৃন্দবনধাম। এ গ্রামে তথা এই বাড়ীতেই জন্ম হয়েছিল বাবু তপন হালদারের বাবা সুধন্য হালদার । মালিখালী এই কৃতী সন্তানের নাম, খ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পরেছিল। আমার তার আদর্শকে এখনও লালন করি। ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমি বলব, আমার যেন সেই সমস্ত কীর্তিমান মহাপুরুষের আদর্শকে যুগ যুগ ধরে ধরে রাখতে পারি। মালিখালী গ্রামের একজন সৎ, নির্ভীক, সহাসী, নিরহংকারী, শিক্ষানুরগী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের নাম স্বর্গীয় রমেশ চন্দ্র মন্ডল। তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ের মালিখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। তার ছিল বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর তিনি অত্যন্ত দাপটের সাথে এ ইউনিয়ন তথা মালিখালী গ্রামের নেতৃত্ব দিতেন। তার কথা আমরা এখনও শ্রদ্ধাভরে স্মরন করি। স্বর্গীয় অটল বিহারী রায় ছিলেন আর একজন কীর্তিমান, প্রতিভাবান, শিক্ষানুরাগীম ও গন্যমান্য সমাজ সেবক। তার দুটি ছেলে বাবু অপুর্ব রায় এবং বাবু অলোক রায় যারা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বাবু অলোক রায় স্বপরিবারে বিদেশে বসবাস করেন। স্বর্গীয় অটল বিহারী রায় ছিলেন মালিখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। তিনি ছিলেন চৌদ্দপাড়া সমাজের সভাপতিও। এরকম বিভিন্ন সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। মালিখালী ইউনিয়নের শিক্ষার উন্নয়নে তিনি ছিলেন অনন্য সাধারন। এই গ্রামেই অবস্থিত মালিখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মালিখালী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বঙ্কিম মূখার্জী স্যারের ¯েœহধন্য ছাত্র নিরোদ বিহারী নাগ ছিলেন মালিখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সফল প্রধান শিক্ষক। তার প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে এ বিদ্যালয় বেশ কয়েকজন ছাত্র যশোর বোর্ড এ স্টান্ড করেন (তথ্য সুত্র: প্রানকৃẲ বিশ^াস প্রান্ত) তাদের মধ্যে অষ্টম ও দশম স্টান্ডটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাবু জগদীশ মালাকার পেয়েছিলেন দশম স্থান যার নাম মালিখালী বাসীর সকলের মনের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে। আমার তরুনরা তার এই সুনামকে আমাদের জীবনে কাজে লাগাবো। সমাজের একজন আদর্শ মানুষ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো। মালিখালী গ্রামের আরেক রতœ আমার শ্রদ্ধেয় স্যার বাবু সুনীল হালদারের (বর্তমানে মালিখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক) কনিষ্ঠ সহোদর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবু নিখিল চন্দ্র হালদার। তিনি গ্রামের একজন ভদ্র ও শান্ত ব্যক্তিত্ব। আমার চোখে আর একজন মহান ব্যক্তিত্ব, আমার জীবনের প্রথম শিক্ষক শ্রদ্ধেয় সুশীল স্যার। যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়, ভালোবাসায় আমি আজ এ অবস্থানে (বিশ^বিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক) আসতে পেরেছি। স্যারের সেই পাঠশালার কথা কোনদিনও ভুলবার নয়। উল্লেখ্য যে, আমি ঐ পাঠশালার ই একজন ছাত্র ছিলাম। মালিখালীর সুশীল স্যারের পাঠশালা এখনো অত্যন্ত সুনামের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা পাঠশালার উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করি। মালিখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পাশকৃত মালিখালী গ্রামের আরও অনেক কৃতি সন্তান, প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব আছেন যাদের সবার কথা হয়তো আমার লেখনীতে আসেনাই এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। মালিখালীর সুনাম আমারা সকলে মিলে তথা তরুন প্রজন্ম ধরে রাখবো এই হোক আমাদের অঙ্গিকার এই প্রত্যাশায়।
লেখক—–
সহকারী অধ্যাপক
অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়।