গ্রাম বাংলা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের জয়-জয়কার। কংগ্রেসের সিনেটে রিপাবলিকান দল তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে।
গতকাল মঙ্গলবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। এবার সিনেটেও রিপাবলিকানদের আধিপত্যের কারণে ওয়াশিংটনের রাজনীতি পরবর্তী দিনগুলোতে আরও জটিল হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান দল ডেমোক্র্যাটিক দলের তিনজন সিনেটরের পুনর্নির্বাচন ঠেকিয়ে দিয়েছে। আর উন্মুক্ত আসনে জয় পেয়েছে তিনটি আসনে। এ ছয়টি আসনের মাধ্যমে রিপাবলিকান দল সিনেটে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করল।
আগামী দুই বছর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আপস করেই চলতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আগামী দিনগুলোতে রিপাবলিকানরা রক্ষণশীল সব আইন প্রস্তাব গ্রহণ করবে। ওবামার সার্বজনীন বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যবিমা বাতিলের জন্য একের পর এক আইন প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বরাদ্দও কংগ্রেসে ঠেকিয়ে রাখবে রিপাবলিকানরা। ওবামাকে ভেটো প্রদান করে এসব আইন প্রস্তাব ঠেকাতে হবে। রিপাবলিকানদের একমাত্র উদ্দেশ্য হবে, ওবামার উদারনৈতিক কর্ম-উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করা। কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া অভিবাসন সংস্কারসহ উদারনৈতিক নানা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
গতকাল মধ্যরাতের মধ্যেই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভরাডুবি নিশ্চিত হয়ে যায়। প্রতিনিধি পরিষদ নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমে তেমন মাতামাতি ছিল না। সবার দৃষ্টি ছিল, সিনেটে রিপাবলিকানরা ছয়টি আসন যোগ করতে পারছে কি না। ছয়টি আসনের বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পরই ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ শুরু হয়েছে। ব্যর্থতার জন্য একতরফাভাবে ওবামাকে দায়ী করা হচ্ছে।
জাতীয় সমস্যা নিয়ে ওবামার জনগণের সঙ্গে সঠিক সংযোগ সৃষ্টি না করতে পারার অভিযোগ উঠেছে। মধ্যবিত্তের জীবনমানের উন্নতির কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি। দীর্ঘ চার বছরে মার্কিন মধ্যবিত্তরা তাদের জীবনমানের ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে নিশ্চিত নয়। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরিসংখ্যান দেওয়া হলেও মধ্যবিত্ত মার্কিনিদের মধ্যে এখনো কর্মহীনের সংখ্যা ব্যাপক। অনেকেই খণ্ডকালীন কাজে নিয়োগ পাচ্ছে। এসব কাজের মধ্য দিয়ে এই মধ্যবিত্তের বার্ষিক আয় বাড়েনি। ধসে পড়া আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়ায়নি জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী। মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা, ইবোলা সমস্যা, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে রক্ষণশীলদের প্রচারণাকে ঠিকমতো মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে ডেমোক্রেটিক দল।
মধ্যবর্তী নির্বাচন কার্যত ওবামার ব্যাপারে গণভোটে পরিণত হয়েছিল। জনগণের চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই নির্বাচনে। ওবামা নির্বাচনের দিন কানেকটিকাটের এক বেতারকেন্দ্রে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, গত ৫০ বছরের মধ্যে মঙ্গলবার রাতটি ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য কঠিনতম রাত।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের জাতীয় পর্যায়ের ফলাফলে পাল্টে গেছে আমেরিকার রাজনৈতিক মানচিত্র। জানুয়ারি মাসে নতুন কংগ্রেস ক্ষমতা গ্রহণ করবে। ওবামার শেষ দুটি বছরের পরিবর্তিত শাসনকাল দেখার অপেক্ষায় শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অপেক্ষায় সারা বিশ্বের মানুষও।