কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হবে- ‘একদা এমনই বাদলশেষের রাতে/ মনে হয় যেন শত জনমের আগে/ সে এসে, সহসা হাত রেখেছিল হাতে/ চেয়েছিল মুখে সহজিয়া অনুরাগে।’ ব্যস্ততা আর পর্বতসম বাধা পেরিয়ে প্রিয়ার চোখে চোখ রেখে আজ বলতে হবে- ‘শুধু তোমাকেই; হ্যাঁ শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।’
বর্তমানে ভালোবাসার সময়ের বড্ড অভাব। এখন ভালোবাসা মানে ‘দুই বেডরুম, ড্রয়িং-ডাইনিং আর লম্বা বারান্দা’! এসব চিন্তাকে ছুড়ে ফেলুন না একদিনের জন্য। কবিগুরুর মতো করে বলুন- ‘দোহাই তোদের, এতটুকু চুপ কর/ ভালোবাসিবারে, দে মোরে অবসর।’ তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশও ভালোবাসার উৎসবে মুখর আজ। এসএমএস, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে বিন্দু বিন্দু কথামালা সম্মুখে দাঁড়িয়ে পরিণত হবে ভালোবাসার কথামালার সিন্ধুতে। নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটা গোলাপ ফুল, চকোলেট-ক্যান্ডি, ছোট্ট চিরকুট আর তাতে দু’ছত্র পদ্য হয়ে উঠতে পারে আজকের দিনের উপহার। আর ফুল তো রয়েছেই, রক্তরাঙা গোলাপ! তবে ভালোবাসার দিনটি শুধুই প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান, এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসার জয়গানে আপ্লুত পারে সবাই।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কাব্যে ভালোবাসা যেন এক ভিন্ন মাত্রা পায়। আর সে জন্যই আজকের দিনটির বর্ণনা করতে গিয়ে তার কথায় বলতে হয়- ‘যত গোপনে ভালোবাসি পরাণ ভরি/ পরাণ ভরি উঠে শোভাতে/ যেমন কালো মেঘে অরুণ-আলো লেগে/ মাধুরী উঠে জেগে প্রভাতে।’ রঙের ডালি নিয়ে সদ্য আসা ফাগুনের দ্বিতীয় প্রভাতেই এসেছে ভালোবাসার দিন। যে দিনে মনের যত বাসনা, অব্যক্ত কথা ডালাপালা মেলে ছড়িয়ে পড়বে বসন্তের মধুর হাওয়ায়। মনে লাগবে দোলা, ভালোবাসার রঙে রঙিন হবে হৃদয়। ‘হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল’ হয়ে যাদের কেটেছে প্রহর, তারা বলে দেবে- ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’।