গ্রাম বাংলা ডেস্ক: দেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ওপর গোপনে নজরদারি করতে বাংলাদেশের একটি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা জার্মানির কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থে সফটওয়্যার কিনেছে। এ সফটওয়্যারের নাম ফিনফিশার (ওরফে ফিনস্পাই), ফিনফ্লাই। এই তথ্য ফাঁস করেছে সারা বিশ্বের গোপন খবর প্রকাশ করা সাড়াজাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস। তবে আইনপ্রয়োগকারী কোন সংস্থা এগুলো কিনেছে তা পরিষ্কার করে বলা হয় নি। এতে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের ওই সংস্থাটি লাইসেন্সকৃত ৩টি ফিনস্পাই সফটওয়্যার ও ৩টি ফিনফ্লাই ইউএসবি কিনেছে। তা কিনতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৩১ হাজার ৬০ ইউরো। এর মধ্যে ২টি ফিনস্পাই সফটওয়্যার ও ২টি ফিনফ্লাই ইউএসবি’র মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বাকি যেগুলো আছে তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছরের ১৬ই নভেম্বরে। এর ফলে গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে যে ফাঁক রয়েছে তা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। এই সফটওয়্যারগুলো বিশ্বজুড়ে ব্যবহার করে থাকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। ভুয়া সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে এ সব সফটওয়্যার টার্গেট করা কম্পিউটারে ইন্সটল হয়। এছাড়া ই-মেইলে পাঠানো ভুয়া অ্যাটাচমেন্টের মাধ্যমেও এ সফটওয়্যার টার্গেট করা কম্পিউটারে প্রতিস্থাপিত হয়। প্রতিটি সফটওয়্যার একই সঙ্গে দু’টি এজেন্টকে কাজ করার সুযোগ দেয় এবং এর মাধ্যমে সেই একই সময়ে ২০টি টার্গেটে (আক্রান্ত কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন) নজরদারি করে। এর মধ্যে ২০১২ সালের ১২ই নভেম্বর কাজ শুরু করে ফিনস্পাই নামের একটি সফটওয়্যার। এর মেয়াদ শেষ হয় গত বছর ১১ই জানুয়ারি। এটির খরচ ধরা হয় ২ লাখ ৭২ হাজার ৪০০ ইউরো। ফিনফ্লাই ইউএসবি কাজ শুরু করে ২০১২ সালের ১২ই নভেম্বর। এটির মেয়াদ শেষ হয় গত বছর ১১ই জানুয়ারি। এটির খরচ ধরা হয় ৪ হাজার ৬২০ ইউরো। আরেকটি ফিনস্পাই কাজ শুরু করে ২০১২ সালের ১২ই নভেম্বর। এটির মেয়াদ শেষ হয় গত বছর ১৬ই নভেম্বর। এটির খরচ ২ লাখ ৭২ হাজার ৪০০ ইউরো। অন্য একটি ফিনফ্লাইন ইউএসবি কাজ শুরু করে ২০১২ সালের ১২ই নভেম্বর। এ মেয়াদ শেষ হয় গত বছর ১৬ই নভেম্বর। এর খরচ ৪৬২০ ইউরো। তবে এখনও কাজ করছে আরেকটি ফিনস্পাই। এটি চালু হয় ২০১২ সালের ১২ই নভেম্বর। এর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ১৬ই নভেম্বর। এর খরচও ২ লাখ ৭২ হাজার ৪০০ ইউরো। বর্তমানে কার্যকর রয়েছে একটি ফিনফ্লাই ইউএসবি। এটি কাজ শুরু করে ২০১২ সালের ১২ই নভেম্বর। এটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৬ই নভেম্বর। এর খরচ ৪৬২৯ ইউরো। অর্থাৎ বর্তমানে একটি ফিনস্পাই ও একটি ফিনফ্লাই ইউএসবি সচল আছে। ফিনফিশার সম্পর্কে উইকিলিকস বলেছে, গোয়েন্দা নজরদারি করতে এ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করতে তাদের দেয়া হয় আট ডিজিটের ইউজার নাম। এতে থাকে বর্ণমালা ও সংখ্যার সমন্বয়। জার্মানির কোবহ্যাম সার্ভিলেন্স জিএমবিএইচ, কানাডার ডাইপ্লেক্স কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, জার্মানির ইলাম্যান জিএমবিএইচ ও জার্মানির ট্রোভিকোর জিএমবিএইচের মতো তৃতীয় কোম্পানিকে কেউ কেউ ইউজার নাম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এসব কোম্পানির কোনটির সঙ্গে ওই সফটওয়্যারের কোন লাইসেন্স নেই। এ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে স্লোভাকিয়া, মঙ্গোলিয়া, কাতার স্টেট সিকিউরিটি, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাহরাইন, পাকিস্তান, এস্তোনিয়া, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া এনএসডব্লিউ পুলিশ, বেলজিয়াম, নাইজেরিয়া, নেদারল্যান্ডস কেএলপিডি, সিঙ্গাপুরের পিসিএস সিকিউরিটিতে। হাঙ্গেরি, ইতালি, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সিক্রেট সার্ভিসেসে ব্যবহার করা হয়েছে এ সফটওয়্যার।