ওলামা-মাশায়েখদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কথা মানুষ শুনবে, আপনাদের কথা মানুষ নেবে। আমি আহ্বান করেছিলাম, জনগণ এ ব্যাপারে সাড়া দিয়েছে এবং বেশ কিছু কাজও করেছেন। আমি চাই এটা আরও ব্যাপকভাবে প্রচার করা।’ তিনি বলেন, ‘আজকের দিনে বড় একটি সমস্যা মাদকাসক্তি এবং অপরটি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। এদের হাত থেকে আমাদের শিশুদের, যুব সমাজ তথা দেশবাসীকে রক্ষা করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী কাজ করছেন। গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছেন। কিন্তু সব থেকে বড় শক্তি মানুষের শক্তি। মানুষের ভেতর যদি সচেতনতা থাকে। মানুষ যদি এটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাহলে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দেশ থেকে চিরতরে দূর হবে।’
শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আমরা সমগ্র বিশ্বকে দেখাতে চাই বাংলাদেশই পারবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে সত্যিকার ইসলাম ধর্মের মূল মর্মবাণী মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। মানুষ যেন সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে তা নিশ্চিত করতে। আর সেটা বাংলাদেশই করতে পারবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার খুব দুঃখ হয় যখন দেখি, এই ইসলাম ধর্মের নাম করে মানুষকে হত্যা করা হয়। নিরীহ মানুষ হত্যার পর হত্যাকারীরা বলে যে এই মানুষ হত্যা করতে পারলেই নাকি তারা বেহেশতে চলে যাবে। এইটা বিশ্বাস করাটাও আমি মনে করি গুনাহর কাজ, মহাপাপ।’ তিনি বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিচারদিনের মালিক। তিনি বিচার করবেন। তাহলে মানুষ হত্যাকারীরা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়ে কীভাবে আল্লাহর কথা বিশ্বাস করে আর ইসলামে বিশ্বাস করে, সেটাই আমার প্রশ্ন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি আরেকটু খোলামেলা বলি, মুসলিম-অধ্যুষিত যেই দেশগুলো, সেখানেই মারামারি, সেখানেই কাটাকাটি, সেখানেই আজকে খুন-খারাপি হচ্ছে। সেখানেই অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এই অস্ত্রটা তৈরি করে কারা। আর লাভবান কারা হয়। রণক্ষেত্র বানাচ্ছে আমাদের মুসলমানদের জায়গাগুলো, রক্ত যাচ্ছে মুসলমানদের। আর এই অস্ত্র তৈরি করে, অস্ত্র বিক্রি করে কারা লাভবান হচ্ছে। সেটাই আপনারা একটু চিন্তা করে দেখবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সব সময় এর বিরুদ্ধে কথা বলি, প্রতিবাদ করি, কিন্তু দুর্ভাগ্য যে আমাদেরই কিছু লোক ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেও এসব জঙ্গিবাদী-সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড করে বলেই আমাদের পবিত্র ধর্মটা আজকে মানুষের কাছে হেয় হচ্ছে।’
ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. বজলুল হক হারুন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল জলিল, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল এবং ইমাম ও ওলামায়ে কেরামগণের পক্ষে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ এরশাদ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সাংসদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আলেম, ওলামা-মাশায়েখসহ সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৫-১৬ এই দুই বছরের ছয়জন শ্রেষ্ঠ ইমাম এবং ২০১৪-১৫ সালের ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত দেশব্যাপী শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করেন।
আপনারা মানুষকে ভালোভাবে বোঝান, ওলামা-মাশায়েখদের প্রধানমন্ত্রী
জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মকাণ্ড জোরদারে সরকারকে সহযোগিতা করতে ওলামা-মাশায়েখসহ ইসলামি চিন্তাবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আপনারা যদি মানুষকে ভালোভাবে বোঝান, তাহলেই আমরা এই দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চিরতরে দূর করতে পারব এবং সে বিশ্বাস আমার আছে।’