প্রধান ও দুই কমিশনার তরীকত ফেডারেশনের প্রস্তাবিত

Slider সারাদেশ

52780_f34

ঢাকা; বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব ও সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে তাদের প্রস্তাবিত ৫টি নামের ব্যাপারেই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। তবে, প্রেসিডেন্ট ৩টি নাম গ্রহণ করেছেন। এতে তারা খুশি। তিনি বলেছেন, নতুন ইসিতে নিয়োগের জন্য তাদের দলের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও যোগ্যদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। সার্চ কমিটি সেটি বিবেচনায় নিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট তাদের যোগ্য মনে করে ইসিতে নিয়োগ দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ৬ই জানুয়ারি সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদাকে সিইসি করে ৫ সদস্যের নতুন ইসি গঠন করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের প্রস্তাবিত ৫টি নামের মধ্যে সর্বাধিক ৩টি নাম গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম  নুরুল হুদাসহ কমিশনার পদে সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী রয়েছেন। ৫টি নামের মধ্যে ৩টি নাম গৃহীত হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে  আলোচনায় এসেছে ছোট দল হিসেবে পরিচিত তরীকত ফেডারেশন। ২০০৫ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ  করে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন। বর্তমানে দলটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজ ভাণ্ডারী। ২০১৩ সালে তরীকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত হয়। দলের মহাসচিব এম এ আউয়াল ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

গতকাল এম এ আউয়াল কলাবাগানস্থ তার নিজ কার্যালয়ে ইসি গঠন নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি  বলেন, সার্চ কমিটি এখানে দলীয় বিষয় বিবেচনা করেননি। অন্য দলও নামের ব্যাপারে চেষ্টা করেছে। নাম জমা দিয়েছে। তবে, সার্চ কমিটি যে মানদণ্ড ও যোগ্যতা বিবেচনা করেছে আমাদের দেয়া প্রস্তাবের নামগুলোতে তা ছিল। আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ নামগুলো দিয়েছিলাম। আর যাদের নাম প্রস্তাব করেছিলাম তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং কর্মক্ষেত্রে সৎ ও অভিজ্ঞ ছিলেন। সার্চ কমিটি ও প্রেসিডেন্ট তাদের যোগ্য মনে করেছেন। তাই ইসিতে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এম এ আউয়াল বলেন, আমাদের ভালো লাগছে। প্রেসিডেন্টকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। তিনি আমাদের সংলাপের জন্য ডেকেছেন। আমাদের পরামর্শ শুনেছেন। আমরা প্রেসিডেন্টকে বলেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, সৎ ও দৃঢ়চেতা ব্যক্তিদের আমরা ইসিতে দেখতে চাই। আমাদের সে আশা পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, ৩টি নয় ৫ জনের ব্যাপারেই আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আলী কবির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যোশিওলজি বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদার নামও আমরা প্রস্তাব করেছিলাম। তারাও স্ব-স্ব ক্ষেত্রে যোগ্য। তারপরও আমরা অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত যে, প্রেসিডেন্ট আমাদের দেয়া ৩টি নাম বিবেচনায় নিয়েছেন। এখন মনে হচ্ছে ৩টি নাম টিকলো, ৫টি নাম  কেন টিকলো না।
নতুন ইসির বেশির ভাগ সদস্যই অপরিচিত এমন মন্তব্যের বিষয়ে তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব বলেন, পরিচিত, অপরিচিত কোনো ব্যাপার নয়। আর যে যত বেশি পরিচিত, তাকে নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক তত বেশি।  আর যারা কম পরিচিত তাদের নিয়ে সমালোচনা ও সমস্যাও কম। যারা নতুন ইসিতে নিয়োগ পেয়েছেন তারা কিন্তু একেবারে অপরিচিত ও অনভিজ্ঞ নন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপের পর থেকেই আমরা তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছি। যারা মনোনীত হয়েছেন তাদের কারও সঙ্গে আমাদের দেখা বা কথা হয়নি। আমরাও তাদের চিনি না, তারাও আমাদের চিনেন না। তবে, আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি কর্মক্ষেত্রে তারা সৎ ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একই সঙ্গে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। দলীয় ফোরামেও তাদের বিষয়ে কারও কোনো আপত্তি ছিল না। তিনি বলেন, নতুন সিইসি কে এম নুরুল হুদা কর্মক্ষেত্রে সততার সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। রফিকুল ইসলাম অতীতে নির্বাচনী কাজে জড়িত ছিলেন। শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তাই তারা যে অনভিজ্ঞ এটা বলা যাবে না।
বর্তমান ইসিতে নাগরিক সমাজের কোনো প্রতিনিধি নেই-এমন বিষয়ে এম এ আউয়াল বলেন, নতুন ইসিতে নাগরিক সমাজের কোনো প্রতিনিধি কেন নেই সেটি প্রেসিডেন্ট ও সার্চ কমিটি ভালো করে জানেন। আর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তো এ সমাজেরই অংশ। নাগরিক সমাজের লোকরা তো রাজনৈতিক দলের বাইরের কেউ নন। তারাও তো কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলকে ভোট দিচ্ছেন। ইসিতে ৩টি নাম গ্রহণযোগ্য হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটে তরীকত ফেডারেশনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে এম এ আউয়াল বলেন, এটি জোটে গ্রহণযোগ্যতা বাড়া বা কমার বিষয় নয়। জোটের দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আদর্শের মিল আছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। আমরাও তাই। তিনি বলেন, সার্চ কমিটিতে নাম দেয়ার বিষয়ে ১৪ দলীয় জোটের বেশকিছু দল আলাদাভাবে  কাজ করেছে। আমরাও কাজ করেছি। জোটের অন্য দল নাম জমা দিয়েছে, আমরাও নাম জমা দিয়েছি। অন্য দলগুলোর যেমন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে, আমাদেরও লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে। আমাদের দেয়া ৩টি নাম গৃহীত হয়েছে। এটি কাকতালীয়ও হতে পারে। তবে, তারা যোগ্য বলেই প্রেসিডেন্ট, সার্চ কমিটি তাদের বিবেচনায় নিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *