মোঃ সামিউল আলম, বিরামপুর (দিনাজপুর): প্রকাশ্যে ধুমপান করলে দন্ড বা জরিমানা করার আইন থাকলেও তার প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন বিরামপুরে বেড়েই চলেছে ধুমপায়ীদের সংখ্যা।
ধুমপানের প্রবনতা বৃদ্ধির কারণে জনস্বাস্থের ক্ষতির পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয় ও পরিবেশ দূষণ। বিরামপুরে বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস, অটোরিক্সা-ভ্যান, ভটভটি, হাট-বাজার, রেল-ষ্টেশন, হোটেল-রেষ্টুরেন্ট, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারি দপ্তরসমূহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ হাসপাতাল ও জনবহুল স্থান গুলোতে অনায়াসেই চলছে ধুমপান যা মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বিরামপুরে হাট-বাজারে ঢুকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে ধুমপানের চিত্র দেখলে মনেই হয়না যেন এটি একটি অপরাধমূলক বা বে-আইনি কাজ। এটি শুধু ধুমপায়ীদের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং পাশে থাকা অন্য মানুষ জনদেরও সমান তালে ক্ষতি করে বিড়ি-সিগারেটের বিষাক্ত ধোঁয়া।
সচেতন মহল বলেন, ধুমপানই হলো মাদক সেবনের প্রথমিক ধাপ। এটি যেমন স্বাস্থঝুঁকি বাড়ায় তেমনি ঘটায় সামাজিক অবক্ষয়। ধুমপানকে কেন্দ্র করেই যুব সমাজ মাদক সেবনের পথে অগ্রসর হয়। প্রশাসনের নিকট তাদের প্রশ্ন, আইন থাকলেও কেন থামছে না এই বে-আইনি কাজটি ? কেন নেওয়া হচ্ছে না কোন কার্যকর আইনি পদক্ষেপ ?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদকসেবী বলে, “হাটে-বাজারে বিভিন্ন জায়গায় বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়াই প্রথম প্রথম একটু অস্বস্থি হলেও আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যায়। পরবর্তীতে তার প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। তারপর ধুমপান থেকে গাঁজা ও ধীরে ধীরে মাদকের উপর আসক্ত হয়ে পড়ি।” এখন আবার সঠিক পথে ফিরে আসতে চাই বলেও জানাই ঐ মাদকসেবী। এবং এখন থেকে জীবন ধ্বংসকারী এই মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করারও অঙ্গিকার করে সে।
বিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী আফরিন আক্তার সংগীতা বলে, “স্কুল-কোচিং যাওয়া আসার পথে ও বিভিন্ন সময় দেখি বাসে, অটোরিক্সা বা ভ্যানে অনেক লোকজন ধুমপান করে। এমনকি চালকেরাও অনেক সময় ধুমপান করে। যা বদ্ধ যানবাহনে অত্যন্ত অস্বস্থি ও বিরক্তিকর”।
ধুমপায়ী এসব লোকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হলে এই অপরাধ কমতে পারে বলে অভিমত ব্যাক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অনেক সময় কিছু সম্মানী ব্যাক্তিদেরও এই গর্হিত কাজটি করতে দেখা যায়। যাদের মধ্যে রয়েছেন- ডাক্তার, শিক্ষক, বিভিন্ন নেতা-কর্মী, সরকারী কর্মকর্তা, পুলিশ-বিজিবিসহ অন্যান্য প্রশাসনিক লোকজনও। তাদের দ্বারা এমন অপ্রীতিকর ঘটনা সত্যিই মর্মাহত। ধুমপান মুক্ত সমাজ গড়তে হলে তাদেরকেই আগে সচেতন হবার তাগিদ দেন সংশ্লিষ্ট মহল।
বিরামপুর মাদক প্রতিরোধ ও জনকল্যাণ সংস্থার দপ্তর ও পাঠাগার সম্পাদক মোঃ সামিউল আলমের বক্তব্য, “সিগারেট কম্পানী গুলোর নানা রকম অপপ্রচার ও কু-কৌশলের কারণেই সাধারণ জনতা উৎসাহিত হচ্ছে ধুমপানের দিকে। এছাড়াও এ বিষয়ে প্রশাসনের কিছু দায়িত্বে অবহেলা ও গড়িমসি ধুমপান বৃদ্ধির বড় একটি কারণ। প্রশাসনিক উচ্চ মহলের নিকট জোড়ালো দাবী, যাতে ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার ঠেকাতে প্রশাসনিক ধুমপায়ী কর্মকর্তাদের নিরুৎসাহিত করা ও সমাজে উল্লেখযোগ্য আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আর এজন্য ভ্রাম্যমান আদালত ও আইন প্রয়োগকারীদের সঠিক মনোভাব প্রয়োজন।”