অবশেষে হাওরই ঠিকানা

Slider টপ নিউজ লাইফস্টাইল সারাদেশ

52284_suronjit

 

ঢাকা; সর্বশেষ তিনি দিরাই এসেছিলেন হেলিকপ্টারে চড়ে। ফিরেও গিয়েছিলেন হেলিকপ্টারে। আবারও তিনি হেলিকপ্টারে করে আসলেন। তবে এবার আর ফিরে যাবেন না, চিরদিনের জন্য মিশে যাবেন ভাটিবাংলার মাটি-জলে। ভাটিবাংলার সিংহপুরুষ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস গড়ে দিয়ে ৭১ বছরের পথ পাড়ি দিয়ে ক্লান্তি শেষের চিরঘুমের জন্য ফিরে আসছেন প্রিয় আনোয়ারপুরে।
জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যমতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জন্ম ১৯৪৫ সালের ৫ই মে, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামে। চিকিৎসক দেবেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ও মা সুমতিবালা সেনগুপ্তের পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে সবার ছোট সুরঞ্জিত। দিরাই মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাঠশালার পাঠ শেষে স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। তারপর উচ্চ শিক্ষার জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হন। এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি  নেন। কিছু দিন আইন পেশায়ও নিয়োজিত ছিলেন। তবে সে পরিচয় তার এক সময় আড়াল হয়ে যায় তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সামনে।
হাওরের খোলা হাওয়ায় বেড়ে ওঠা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শৈশবে যাত্রাপালার নায়ক হতে চেয়েছিলেন। তার সে স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গিয়েছিলো। তবে তিনি ঠিকই নায়ক হয়েছিলেন, যাত্রাপালার মঞ্চে নয় তিনি নায়ক হয়েছিলেন জনতার মঞ্চে। তিনি হয়ে উঠেছিলেন জনতার নায়ক, রাজনীতির নায়ক, মাটির নায়ক। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অনেক ঘটনাতেই নায়কের ভূমিকায় নিজেকে তুলে এনেছিলেন। বাংলাদেশের অহঙ্কারের সংবিধান তৈরিতেও তার অবদান রয়েছে। সে অধ্যায়েও তিনি একজন সফল নায়ক হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছিলেন।
সিনেমার মতোই যেনো ছিলো তার জীবনের গল্পগুলো। টানটান উত্তেজনা, নাটকীয়তা তার রাজনৈতিক জীবনেরই অংশ হয়ে গিয়েছিলো। একদম অল্প বয়সেই রাজনীতির মঞ্চে নায়ক হিসেবে তার আবির্ভাব। বাম রাজনীতির চারণভূমি সুনামগঞ্জ থেকে উঠে আসা সুরঞ্জিতের রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিলো বাম আদর্শের সৈনিক হিসেবে। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের নির্বাচনে ন্যাপ থেকে জয়ী হয়ে নজর কাড়েন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ৫ নম্বর সেক্টরের সাব-কমান্ডার হিসেবে মাঠে ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে কনিষ্ঠতম সদস্য হিসেবে যুক্ত ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ১৯৭৩ সালে একতা পার্টি ও ১৯৭৯ সালে গণতন্ত্রী পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথম নির্বাচনেই ১৯৯৬ সালে হেরে যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। অবশ্য পরে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে চারবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি জনতার প্রতিনিধি হয়ে সংসদেই ছিলেন। তার মৃত্যুতে কাঁদছে গোটা সুনামগঞ্জ। যে দিরাইয়ে তার জন্ম সে দিরাইয়েই হচ্ছে তার ঠিকানা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *