ইবি প্রতিনিধি; আল আমিনের গায়ে প্রচন্ড জ্বর। ঠুনঠুনে ছোট্ট দেহ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় যশোরের বাড়ি থেকে এসে মেসে উঠেছে। কুষ্টিয়ার স্থানীয় কাস্টমস মোড়ের শাহিন ম্যানশনে। আসার পর পরই রাত ৮টা থেকে শুরু হয় বড় ভাইদের কথিত শিক্ষা দেবার নামে র্যাগিং আর নির্মম নির্যাতন। টানা সাড়ে ৬ ঘন্টা চলে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন।
ওই রাত থেকে মারাত্বক অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৯ম মেধাতালিকায় থেকে ভর্তি হওয়া ওই শিক্ষার্থী। তবে নির্যাতন সয়েও সেই ভাইদের মঙ্গল ও শুভবুদ্ধি কামনা করছে আল আমিন।
জানা গেছে, যশোর জেলার কেশবপুর থানার আলাউদ্দিন মুন্সির ছেলে আল আমিন। এবছর ইবির বায়োটেনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শাহিন ম্যানশনে ভাড়া করা সিটে উঠে। রাত ৮টা থেকেই ৭/৮জন মিলে তার ওপর শুরু হয় একের পর এক নির্যাতন। নির্যাতনকারীরা ইবিতেই অধ্যায়নরত বলে জানা গেছে। তবে নতুন আসার কারনে কাউকেই আল আমিন চিনতে পারেনি। তার গায়ে প্রচন্ড জ্বর থাকা সত্বেও তাকে দিয়ে চেয়ার আকৃতিতে ১৫ মিনিট রাখা হয়। এক পায়ে ভর করে ও দুই কান ধরে প্রায় ২০ মিনিট দাড় করিয়ে রাখে নির্যাতনকারীরা। তিন তলার ওই মেসের সিঁড়ি ৫ বার গুনে আসতে হয় তার। কলমের মাথা দিয়ে দরজার দৈর্ঘ প্রস্থ মেপে বের করতে দেয় ক্ষেত্রফল। এসময় তার পিছনে মোটা লাঠি নিয়ে নির্যাতনকারীরা দাড়িয়ে ছিল বলে অভিযোগ করেছে সে। একই সাথে অকথ্য ভাষায় তারা গালাগাল করে। এর পর শুরু হয় তিন তলার সব রুমে গিয়ে পরিচয় দেয়া নেয়ার নামে মানসিক নির্যাতন। চেয়ারে কোল বালিশ বসিয়ে বানানো হয় কাল্পনিক বউ। অভিনয় করতে বলা হয় অশ্লীল ভাষায়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত চলে এভাবে। ওই দিন সে আর ঘুমাতে পারেনি। সকালে কবির নামের বড় ভাইকে ফোন করে ক্যাম্পাসে চলে আসে। অমানুষিক নির্যাতন সয়ে সে ইবিতে পড়ালেখা করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনার পর থেকে সে শারিরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
নির্যাতন কারীদের বিচার চায় কিনা জানতে চাইলে আল আমিন বলেন, উনারা আমার ক্যাম্পাসের বড় ভাই বলে শুনেছি। উনাদের থেকে আমরা ভালো কিছু শিখবো। তাদের ভালো হোক। শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আর কোন শিক্ষার্থীকে যেন এ ধরনের নির্যাতন সইতে না হয়।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রীকে কয়েক দফায় র্যাগ দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটনার সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্বেও প্রশাসন কার্যকরি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে জানা গেছে। এক ছাত্রলীগ নেতার কর্মী হওয়ায় দোষীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে প্রক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এব্যপারে প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।