ঢাকা; অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করার নির্বাহী আদেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ৭টি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিরিয়ার যেকোনো মানুষ অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবেন। তবে সিরিয়ার খ্রিস্টানদের বেলায় এক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হবে। এমন কথা তিনি এক সাক্ষাতকারে খ্রিস্টিয়ান ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্ক (সিবিএন)কে বলেছেন। তার এ নিষেধাজ্ঞাকে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতে বলা হয়, ডনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার দুটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। এর একটি হলো শরণার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করা নিয়ে। অন্যটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী পুনর্গঠন নিয়ে। শরণার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করার নির্বাহী আদেশটি মুলত যুক্তরাষ্ট্রে মৌলবাদী সন্ত্রাস বন্ধের উদ্দেশে বলে বলা হচ্ছে। তবে এ নিষেধাজ্ঞা হবে অস্থায়ী। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এটাকে দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো শরণার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা হিসেবে। তিনি সচল ক্যামেরার সামনে এ বিষয়ক আদেশে সই করেন। উল্লেখ্য, গত বছর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার অল্প পরেই ডিসেম্বর মাসে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ঘোষণা দেন। তার সেই প্রতিশ্রুতির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শুক্রবারের ওই নির্বাহী আদেশকে দেখা হচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, তার এ নতুন নির্বাহী আদেশের অধীনে মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হবেন। এর আওতায় আসবে সিরিয়া, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। এসব দেশের কোনো মানুষের জন্য ৩০ দিন ভিসা ইস্যু পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব দেশ সংঘাত ও সন্ত্রাসের কবলে পড়ে ক্ষত-বিক্ষত। সেখান থেকে প্রাণ বাঁচাতে মানুষ পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের জন্য ছুটে যায়। কিন্তু নতুন আদেশের অধীনে সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য অনির্দিষ্ট কালের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তবে অন্য দেশগুলোর জন্য এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে কমপক্ষে ১২০ দিন বা চার মাস। আদেশে সই করে ট্রাম্প বলেছেন, এই পদক্ষেপের ফলে মৌলবাদী ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকবে। আমরা তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে দেখতে চাই না। তিনি সবাইকে সতর্ক করে দেন। বলেন, ৯/১১ এর মতো সন্ত্রাসী হামলার কথা আমাদের কারো ভুলে যাওয়া উচিত নয়। পেন্টাগনে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। বিদেশে আমাদের সেনারা যে কঠিন হুমকির মধ্যে রয়েছেন আমরা তাও চাই না। আমরা শুধু তাদের কথা স্মরণ করতে চাই যারা আমাদের দেশকে ও দেশের জনগণকে সমর্থন করছেন এবং ভালবাসছেন। কিন্তু তিনি কিভাবে ‘এক্সট্রিম ভেটিং’ প্রস্তাব কার্যকর করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি। একবার যখন নিষেধাজ্ঞা (দৃশ্যত চার মাস পরে) উঠে যাবে তখন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া অভিবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাস কিভাবে যাচাই করবেন সে বিষয়েও কিছু বলেন নি। রিপাবলিকান ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাককাউল বলেছেন, মুসলিমরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যতটা হুমকি সিরিয়ার খ্রিস্টানরা ততটা নন। ফলে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকার দেয়া হতে পারে। ওদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খ্রিশ্চিয়ান ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্ক (সিবিএন)কে সাক্ষাতকারে পরিষ্কার করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন সিরিয়ার খ্রিস্টানরা। তার এ সাক্ষাতকার রোববার সম্প্রচারের কথা রয়েছে। এতে তিনি বলেছেন, (সিরিয়ায়) আপনি যদি একজন মুসলিম হন তাহলে আপনার যুক্তরাষ্ট্রে আসা খুব সহজ ছিল। কিন্তু যদি আপনি একজন খ্রিস্টান হন তাহলে আপনার জন্য এতদিন তা ছিল কঠিন। খ্রিস্টানদের জন্য এটা ছিল একেবারেই অসম্ভব। এর কারণ হিসেবে যা দেখানো হয়েছে তা পুরো অন্যায্য। সেখানে শিরñেদ করা হচ্ছে। বেশি করা হচ্ছে খ্রিস্টানদের। এখন তিনি যে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তাতে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার ৭টি দেশ থেকে মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে কোনো ভ্রমণ ভিসাও দেয়া হবে না। পিউ রিসার্স সেন্টারের মতে, গত বছর বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ মুসলিম ও খ্রিস্টান প্রবেশ করেছেন তাদের সংখ্যা প্রায় সমান। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন ৩৭ হাজার ৫২১ জন খ্রিস্টান শরণার্থী। এ সময়ে মুসলিম শরণার্থীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৯০১। উল্লেখ্য, ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণাকালে গত ডিসেম্বরে খুব কড়া বার্তা দেন মুসলিমদের। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ পুরোপুরি ও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেবেন। ওদিকে তিনি মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের যে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তাতে সরকারি সংস্থাগুলোকে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।