প্রতিবেদনটিতে সুন্দরবনে লবণাক্ততা বাড়ার কারণ হিসেবে গঙ্গা নদী থেকে সুন্দরবনে মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার কথা একটি স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। সুপারিশ হিসেবে প্রতিবেদনে সুন্দরবন রক্ষার আঞ্চলিক উদ্যোগগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন ও লবণাক্ততা বাড়ার বিষয়টি যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে সাবেক প্রধান সংরক্ষক ইউনুছ আলী বলেন, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যেসব নদী বয়ে গেছে, তার বেশির ভাগের উৎস গঙ্গা অববাহিকা। গঙ্গার উজানে ভারত ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ায় বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো সুন্দরবনে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে, যার প্রভাবে এখানে সুন্দরীর মতো মিষ্টি পানিনির্ভর বৃক্ষ কমে আসছে।
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদন তিনটিতে বলা হয়েছে, সুন্দরবনে লবণাক্ততা বাড়ার প্রভাব পড়বে এটির মৎস্য সম্পদের ওপরেও। সুন্দরবনের নদী ও খালগুলোতে মিষ্টি পানিনির্ভর যেসব মাছ আছে, তারা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে পারে। ফলে এসব মাছ সংগ্রহ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে যেসব দরিদ্র জেলে সম্প্রদায়, তারা বিপদে পড়বে।
সুন্দরবনে লবণ ও মিষ্টি পানির মিশ্রণ (ব্র্যাকিশ ওয়াটার) মাছের তুলনায় মিষ্টি পানির মাছের পরিমাণ প্রায় ছয় গুণ বেশি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এমনিতেই অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন সেই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে গবেষণা দুটির প্রধান এবং বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান সুস্মিতা সেনগুপ্তা বলেন, সুন্দরবন রক্ষায় যেসব
আঞ্চলিক চুক্তি রয়েছে, তাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বা লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সুন্দরবনের প্রতিবেশব্যবস্থাকে রক্ষা করতে সবগুলো প্রভাবককেই আমলে নিতে হবে।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞ ইশতিয়াক সোবহান ও সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ডেভিড হুইলার।
সুন্দরবনের চারপাশের বেশির ভাগ জনগোষ্ঠী দরিদ্র উল্লেখ করে গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, ওই জনগোষ্ঠীর মোট সংখ্যা প্রায় এক কোটি, যাদের মধ্যে ৬০ লাখ অধিবাসী হতদরিদ্র। এদের জীবিকার প্রধান উৎস উচ্চ ফলনশীল ফসলের চাষ ও মাছ সংগ্রহ। লবণাক্ততা বাড়ায় স্থানীয় দরিদ্রদের আয় কমে যাবে, তাদের আমিষের প্রধান উৎস মাছ পাবে না।