জামায়াতের হরতাল ৩ দিন, শুক্রবার দোয়া, শনিবার বিক্ষোভ

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয়

81873_Hartal

গ্রাম বাংলা ডেস্ক: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে জামায়াতে ইসলামী আগামীকাল বৃহস্পতিবার, আগামী রোববার ও সোমবার দেশব্যাপী মোট ৭২ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে। এছাড়া শুক্রবার দোয়া দিবস এবং শনিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

রায়ের পর আজ দুপুরে দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার হরতাল এবং রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা হরতাল চলবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এছাড়া ৩১ অক্টোবর শুক্রবার মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর এই মুহূর্তে মুক্তি ও সাবেক আমির মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযমের রূহুর মাগফিরাত কামনায় দোয়াসহ ষড়যন্ত্রের শিকার সব নেতাদের মুক্তির জন্য দেশব্যাপী দোয়ার অনুষ্ঠান, ১ নভেম্বর শনিবার মাওলানা নিজামীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও আটক সব নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ পালনেরও কর্মসূচি দেয়া হয়েছে।

কর্মসূচি ঘোষণা করে দেয়া বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল অভিযোগ করেন, সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়ের করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। তারা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে তারা বলেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য এর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ যে অভিযোগ উত্থাপন করেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও কাল্পনিক। যার প্রমাণ তার জন্মস্থান পাবনার একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ তিনজন বিশিষ্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ট্রাইব্যুনালে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন সেখানে তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সাথে তার দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করায় দেশবাসী বিস্মিত, হতবাক ও গভীরভাবে মর্মাহত। এ রায়ে মাওলানা নিজামী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দেশবাসী এ রায় প্রত্যাখ্যান করছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে মাওলানা নিজামী উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। উচ্চ আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করলে মাওলানা নিজামী অবশ্যই বেকসুর খালাস পাবেন বলে আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি।

বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। শুরু থেকেই সরকার এই বিচার কার্যক্রমকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা চালায়। ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর পরই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের সাথে তদানীন্তন আইনমন্ত্রীর বৈঠক, পরবর্তীতে স্কাইপ কেলেঙ্কারি, ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে সাক্ষী অপহরণ, মামলার রায়ের দিন তারিখ ঘোষণা করে সরকার ও সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমে তাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, ২০১৩ সালে তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিশরে গিয়ে মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আব্দুল কাদের মোল্লার রায়ের তারিখ উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন। সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় নেতাগণ নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে মর্মে ঘোষণা দেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী গণজাগরণ মঞ্চের দাবি বিবেচনায় নিয়ে রায় দেয়ার জন্য বিচারপতিদের প্রতি আহ্বান জানান। আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করার পর প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে তার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বিচার সরকারের নির্ধারিত ছকে সম্পন্ন হচ্ছে বলে দেশবাসীর কাছে সুস্পষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের এ ধরনের বক্তব্যে বিচার কার্যক্রমের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশকে এক ভয়াবহ সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে চায়। সরকারের জুলুম, নির্যাতন ও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে উপরোক্ত কর্মসূচি ঘোষণা করে তা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সফল করে তোলার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সব শাখা এবং কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সুশীলসমাজ ও পেশাজীবীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ তথা দেশের আপামর জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।

এ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *