ঢাকা; রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার অন্যতম ‘পরিকল্পনাকারী’ জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধীকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আজ শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, গুলশান হামলায় জড়িত যে কয়জনকে জীবিত ধরা হয়েছে তাঁদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী অন্যতম। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে টাঙ্গাইল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ‘রাজীব গান্ধী’ গুলশান ও শোলাকিয়া হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি নেতা তামিম ও মারজানের সঙ্গে গুলশান হামলার পরিকল্পনায় তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি, টাঙ্গাইলের দরজি নিখিল চন্দ্র জোয়ারদার, পাবনার পুরোহিত নিত্তরঞ্জন পান্ডে, রংপুরের মাজারের খাদেম রহমত আলী, কুষ্টিয়ার চিকিৎসক সানাউর, পঞ্চগড়ের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর, দিনাজপুরের হোমিও চিকিৎসক ধীরেন্দ্রনাথ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীসহ ২২টি হত্যায় তিনি পরিকল্পনাকারী ছিলেন।
পুলিশ বলছে, জাহাঙ্গীর আলম আরও স্বীকার করেছেন যে তিনি গুলশান হামলায় অংশগ্রহণকারী মো. খায়রুল ইসলাম পায়েল ওরফে বাঁধন, মো. শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশকে নব্য জেমএবিতে ঢোকান। পরে তাঁদের হামলার জন্য বাছাই করেন। শোলাকিয়া হামলায় জড়িত শফিউল ইসলাম ওরফে ডনকেও তিনি প্রস্তুত করেছিলেন। নব্য জেএমবিতে যোগ দেওয়ার আগে জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী জেএমবির সুরা সদস্য নজরুল ইসলামের সহযোগী ছিলেন। জাহাঙ্গীর একাধিক নাম ব্যবহার করেন। এগুলো হলো, রাজীব গান্ধী, সুভাষ, টাইগার, আদিল, জাহিদ। জঙ্গি নেতা ‘রাজীব গান্ধী’ হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এর আগে জানায়, গুলশান হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, এমন ১৭ জনকে এখন পর্যন্ত তারা চিহ্নিত করেছে। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন গত ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন।
সর্বশেষ ৫ জানুয়ারি দিবাগত রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান। একজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। অন্য তিনজন, রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও সাগর। রাজীব ও বাশারুজ্জামানকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী ছিল পুলিশ।
গত বছরের ১ জুলাই রাতে জঙ্গিরা গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়ে ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। তাৎক্ষণিক অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের বোমায় নিহত হন পুলিশের দুজন কর্মকর্তা। পরদিন সকালে জিম্মি উদ্ধার অভিযানে পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে ওই রেস্তোরাঁর পাচক সাইফুল ইসলাম চৌকিদার নিহত হন। রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে আটক আরেক কর্মী জাকির হোসেন পরে হাসপাতালে মারা যান।