গাইবান্ধা: সুন্দরগঞ্জের এমপি লিটন হত্যা মামলায় পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা, পিবিআই এর চৌকশ বিশেষায়িত দল সর্বচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত অব্যাহত রাখলেও এই হত্যার রহস্য উদঘাটনে আরও সময়ের প্রয়োজন বলে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তপক্ষ সুত্রে জানানো হয়েছে।
কেননা এই হত্যাকান্ডের সাথে রাজনৈতিক শত্রুতা, জামায়াত-শিবির ও নব্য জঙ্গির সংশ্লিষ্টতা এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে অত্যন্ত নিবিরভাবে জড়িত রয়েছে বলেই এই হত্যা রহস্যের জট খুলতে সময় লাগছে। তবে পুলিশ গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজনদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ তদন্ত থেকে এই হত্যার রহস্য সম্পর্কে অনেকটাই আলোর দিশার আভাস পাচ্ছেন। যা থেকে চাঞ্চল্যকর হত্যা রহস্যের মূল তথ্য উদঘাটনসহ এর সাথে জড়িত সকলকেই গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলেও তারা আশাবাদি।
রিমান্ডে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাসুদ: রিমান্ডে নেয়া সুন্দরগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবীব মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে লিটন হত্যাকান্ড সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে বলেই পুলিশ সুত্র থেকে জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এব্যাপারে তারা বিস্তারিত কোন তথ্যই এই মুহুর্তে প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এমপি লিটন বিরোধী আওয়ামী লীগ দলীয় গ্র“পটির অন্যতম সক্রিয় সদস্য ছিল এই আহসান হাবীব মাসুদ। এমপি লিটনের অন্যতম বিরোধীতাকারি হিসেবে মাসুদ ছিল সোচ্চার। এমপি লিটন ও তার সমর্থক সাধারণ নেতাকর্মীরা দলে তার যোগদানের বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে পারেনি। কারণ বিভিন্ন দল থেকে ঘুরে আসা ব্যক্তি হিসেবে মাসুদের পরিচিতি রয়েছে। এছাড়া গরু চুরি ও ছিনতাই মামলায় ইতোপূর্বে কারাভোগ করেছেন এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবেও তার পরিচিত ছিল।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের মার্চ মাসে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা অডিটরিয়াম হলে আ’লীগের বর্ধিত সভায় তাকে স্বেচ্ছাসেবকলীগে যোগদানের সময় আ’লীগ সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন স্বেচ্ছাসেবকলীগে মাসুদের যোগদানের ব্যাপারে দ্বি-মত পোষন করেন। এরই প্রতিবাদে মাসুদ উপজেলা পরিষদ আবাসিক কোয়াটারের গেটে মাসুদের ক্যাডার বাহিনীসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ সে প্রকাশ্যে এমপি লিটনকে হুমকি দেয় এবং রামদা দিয়ে আঘাত করে। যা থেকে নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে এমপি লিটন অলৌকিকভাবে রক্ষা পায়। এরপর থেকেই লিটনের কট্টর বিরোধী এবং শত্র“তে পরিণত হন মাসুদ। সে সবসময় মাদকাসক্ত ক্যাডার নিয়ে ঘুরতো এবং তাদের নিয়েই সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। মাসুদ গ্রেফতার হওয়ার পর অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে এবং সুন্দরগঞ্জের প্রতিটি লোকের মুখে মুখে এই সমস্ত কথাগুলো এখন ছড়িয়ে পড়ছে।
সুন্দরগঞ্জের পৌর মেয়র মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ: এমপি লিটন হত্যাকান্ডের বিষয়ে মঙ্গলবার সুন্দরগঞ্জের পৌরসভার মেয়র আব্দুল্যাহ আল মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে জানা গেছে। তার কাছ থেকে এব্যাপারে কি তথ্য উদঘাটিত হয়েছে বা কেন মেয়রকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো সেব্যাপারে পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ বা মেয়রের পক্ষ থেকে কোন তথ্যই জানা যায়নি। তবে এব্যাপারে মেয়র আব্দুল্যাহ আল মামুন মোবাইল ফোনে জানান, তাকে লিটন হত্যাকান্ড ব্যাপারে পুলিশ থানায় নিয়ে কোন জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। এ ঘটনা সত্য নয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই মেয়র আব্দুল্যাহ আল মামুন শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভ হত্যাকান্ডের ঘটনা থেকেই এমপি লিটনের বিরুদ্ধে দলের কতিপয় নেতাকর্মীকে নিয়ে একটি কট্টর বিরোধী গ্র“প গড়ে তোলেন। সেসময় এমপি লিটনের যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকার মত অবস্থা তখন তার বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বে এই কট্টর বিরোধী গ্র“পটি মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, মানববন্ধন করে এমপি লিটনকে গ্রেফতার, শাস্তি প্রদান, এমনকি তাকে সংসদ পদ থেকে বহিস্কার করারের দাবিতেও সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন। এমপি লিটন বিরোধী এই কট্টর গ্রুপের মেয়র মামুনের সক্রিয় সহযোগি ছিল গ্রেফতারকৃত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আহসান হাবীব মাসুদ, গোলাম মর্তুজা টুকু, সাজেদুর রহমান ও চন্দ্রন কুমার বর্মণ।
জানা গেছে, এই মেয়র আব্দুল্যাহ আল মামুন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬নং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। এর আগে সে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দু’দুবার নির্বাচিত করে পরাজিত হন। অথচ এমপি লিটনের এক সময়ের ঘনিষ্ট সহযোগি ছিল মেয়র আব্দুল্যাহ আল মামুন। বিগত পৌরসভা নির্বাচনে এমপি লিটন তাকে সক্রিয় সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করতে সবধরণের সহায়তা করেন। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি লিটন বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে শুরু করেন। মঙ্গলবার সরেজমিনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে এই দ্বন্দ্বের কারণ সম্পর্কে জানাতে চাইলে তারা জানান, মূলত তার রাজনৈতিক উচ্ছাভিলাস এই দ্বন্দ্বের কারণ। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, তারা সম্প্রতি বিভিন্ন সুত্র থেকে জেনেছেন আগামী জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ তিনি অনেকের কাছে প্রকাশ করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে আরও জানা গেছে, শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভকে গুলি করার বিষয়টি যখন এমপি লিটনের সাথে মিমাংসা করার জন্য যখন সৌরভের পিতা-মাতা ও পরিবারের লোকজন আগ্রহী হয়ে উঠেছিল তখন মেয়র ও মাসুদের নেতৃত্বাধীন এই কট্টর গ্র“পটি তাতে বাধা দেয়। ফলে সৌরভকে গুলি করার ঘটনাটি আর এমপি লিটনের পক্ষে মিমাংসা করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে আদালত পর্যন্তগড়িয়েছে মামলাটি এবং এমপি লিটনকে ১৪ দিন জেলহাজতে থেকে পরে জামিনে মুক্ত হতে হয়েছে।