ডেস্ক; শুক্রবার রাতে মারা গেছেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা ওম পুরি। ৬৬ বছর বয়সী এই অভিনেতা জীবদ্দশায় নিজেকে অভিনেতা হিসেবে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ইতিবাচক চরিত্রে তিনি যেমন ছিলেন প্রাণবন্ত তেমনি নেতিবাচক চরিত্রেও ছিলেন সফল। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় দর্শকের মনের খোরাক হিসেবে কাজ করতো। শেষের দিকে কমেডি চরিত্রেও দারুণ সফল ছিলেন তিনি। আর্ট ও বাণিজ্যিক- এই দুই ধারার ছবিতেই সমান মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন ওম পুরি। ভারত ছাড়িয়ে হলিউড, বৃটিশ ও পাকিস্তানি ছবিতেও নিজের সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন এ অভিনেতা। আর তাইতো মৃত্যুর আগের দিন বিকাল পর্যন্ত শুটিং করেছিলেন তিনি। সালমান খানের মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘টিউবলাইট’ ছবিতে সর্বশেষ অভিনয় করে গেছেন। বৃদ্ধ থেকে চলতি প্রজন্মের তরুণরা ওম পুরির অভিনয় মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করতেন। তবে তার উত্থানটা এত সহজ ছিল না। অনেক পরিশ্রম, সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষার গল্প রয়েছে এর পেছনে। অনেকেই হয়তো জানেন না মাত্র ৭ বছর বয়সে ওম পুরি একটি চায়ের দোকানের গ্লাসবয়ের কাজ করতেন। সেই দোকানের কাপ আর গ্লাস ধোয়া ছিল তার কাজ। তখন তার বাবা ছিলেন কারাগারে। এই কাজ করেই সংসার চালাতেন তিনি। পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যান। পরে টিউশনিও করেছেন ওম পুরি। সে সময় একজন আর্মি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র ও অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক বাড়ে তার। কলেজের একটি অনুষ্ঠানে পাঞ্জাবি মঞ্চ নাটকে তার অভিনয় দেখে ডাক আসে মঞ্চে কাজ করার। পরে পাঞ্জাব কালা মঞ্চের হয়ে তিনি ১৫০ টাকা মাসিক বেতনে অভিনয় করতেন। পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রে কাজের চেষ্টাও চালিয়ে যান। বড় সুযোগ আসে ১৯৭৬ সালে। মারাঠি ছবি ‘ঘোষিরাম কোতোয়াল’-এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। আশির দশকের শুরুতে অমরেশ পুরি, নাসিরুদ্দিন শাহ, স্মিতা পাতিল ও শাবানা আজমীর সঙ্গে আর্ট ফিল্মের শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে আবির্ভূত হন ওম পুরি। ‘ভবনি ভবানি’, ‘সাদগাতি’ ‘আর্ধ সত্যিয়া’, ‘মিচ‘ ছবিগুলোর মাধ্যমে নিজকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। ১৯৮২ সালে ‘আরোহণ’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘অর্ধ সত্যিয়া’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন এ অভিনেতা। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজের অভিনয়ের মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছেন তার মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ হলিউড ছবি ‘জঙ্গল বুক’-এ।