জনপ্রতিনিধিদের ভোটেও সংঘর্ষ কেন্দ্র স্থগিত

Slider জাতীয়

 46753_f1

ঢাকা; দেশের ৬১টি জেলায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনেও সংঘর্ষ মারামারি ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন জেলায় ভোটকেন্দ্র দখল ও প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের এ সংঘর্ষ হয়। মাদারীপুর, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর আগে অনুষ্ঠিত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে সমালোচনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। যদিও সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। গতকালের নির্বাচনে মাগুরা, চাঁদপুর, মাদারিপুর, লক্ষ্মীপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া অনিয়মের কারণে বেশ কয়েক জায়গায় কেন্দ্র স্থগিত করা হয়।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দু’সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সকাল ১০ টায় চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কেন্দ্রে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় ৩নং বিতারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইসাহাক সিকদারসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- বিতারা ইউনিয়নের  মেম্বার সফিউল্লাহ, মেম্বার কামরুজ্জামান, মেম্বার বোরহান উদ্দিন মোল্লা, মোস্তফা, মিজান, মামুন মুন্সি, মামুন ও জিসান। এদের মধ্যে ৩ জনকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে ৩নং বিতারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইসাহাক সিকদার পুলিশ পাহারায় ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দেন। তখনো সদস্য প্রার্থী শাহাজান তালা মার্কার সমর্থনে কেন্দ্রের বাহিরে মিছিল করছিল। পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানান, চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলা, ৭টি পৌরসভা ও ৮৮ ইউনিয়ন পরিষদের মোট ভোটার রয়েছেন ১২৮৮ জন। এদের মধ্যে নানা কারণে কয়েকজন ভোটার তাদের ভোটাধিকারের যোগ্যতা হারিয়েছেন। বর্তমান হিসাবে চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকারের জন্য যোগ্য ভোটার রয়েছেন ১২৬০ জন। ১৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে একটি করে ভোট কেন্দ্র।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার একটি কেন্দ্রে ভোট চলাকালীন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশকে কেন্দ্র করে এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে ভোট শুরু হওয়ার আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতালেব মিয়া বহিরাগতদের নিয়ে ৬নং ওয়ার্ডের হোসেনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় সাধারণ সদস্য পদ প্রার্থীদের সমর্থকরা বহিরাগতদের বাধা দেয়। এতে করে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। বর্তমানে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশের এসআই নাজমুল হাসান জানান, বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা সেখানে অবস্থান করছেন।
রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে  আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়েছে। সংঘর্ষে রামগঞ্জ থানার এসআই পঙ্কজ দেবনাথসহ উভয় গ্রুপের ১০ জন আহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন চলাকালীন রামগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের সামনে। সংঘর্ষের সময় পুলিশের বেধড়ক পিটুনি দিয়ে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে আধাঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মাল মঙ্গলবার রাতে শহরের সালমা হোটেলের সামনে সোনাপুরের তুহিন মল্লিক নামের স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক কর্মীকে লাঞ্ছিত করে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নোমান হোসেন লোকজন নিয়ে ওই হোটেলের সামনে পৌঁছলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার দুপুরে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মাল তার নেতা-কর্মীদের নিয়ে রামগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নির্বাচন উপভোগ করার জন্য উপস্থিত হলে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা নোমান তার লোকজন নিয়ে একই স্থানে উপস্থিত হলে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে শাওন, রাকিব, ফরিদ, জুয়েল বাবু, রবি, এসআই পঙ্কজ দেবনাথসহ ১০ জন আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মাল জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নোমান ভোট কেন্দ্রের সামনে উপস্থিত হয়েই আমাকে গালিগালাজ শুরু করলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের উপর হামলা করে।
রামগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তোতা মিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী সদস্য প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর
নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৭নং ওয়ার্ডের বিজয়ী সদস্য শরীফুল ইসলাম মুকুলের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম মুকুল জানান, গতকাল বিকেলে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পরই তার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রার্থী টিপু সুলতান ও তার লোকজন নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর বাজারে তার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে। অফিসের চেয়ার, টেবিল, টেবিলের গ্লাস, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। নড়াইল সদর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, সংবাদ পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। এ দু’জন প্রার্থীই আওয়ামী লীগ দলীয় এবং তুলারামপুর গ্রামের বাসিন্দা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *